পিতৃপরিচয়হীন অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের গর্ভে জন্ম নেয় একটি মেয়ে। একদিকে দারিদ্র্য, অন্যদিকে অভিভাবকহীনতায় আশ্রয় জোটে এতিমখানায়। পরবর্তীতে জীবনের নানা উত্থান-পতন কাটিয়ে সময় যেন তাকে নতুনভাবে গড়ে তোলে। ছোটবেলার এই অসহয়ত্বই যেন সাফল্যে তার মনোবল হয়ে দাঁড়ায়। ভাগ্যের সুপ্রসন্নতায় মডেল হিসেবে শুরু হয় তার ক্যারিয়ার। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন মার্কিন অভিনেত্রী, মডেল এবং গায়িকা হিসাবে। দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মালেও সৃষ্টিকর্তা যেন দু’হাত ভরে সৌন্দর্য দিয়েছিল তাকে।
স্বর্ণকেশী এই সৌন্দর্যের রানীর নাম মেরিলিন মনরো। লাস্যময়ী মনরো তার হাসির ঝলকানিতে, অপার সৌন্দর্যের মুগ্ধতায়, সুমিষ্ট কণ্ঠের আবেশে, তীক্ষ্ণ চাহনিতে মোহাবিষ্ট করে গেছে সমগ্র বিশ্বের লাখ লাখ তরুণকে। তাই মৃত্যুর অর্ধশত বছর পরেও সর্বকালের সেরা আবেদনময়ী তারকা ও অভিনেত্রী হিসেবে শীর্ষে স্মরণ করা হয় হলিউডের সৌন্দর্যের এ রানীকে।
রুপালী জগতে প্রবেশের পূর্বে ক্ষণজন্মা এই অভিনেত্রীর নাম ছিল নর্মা জীন বেকার। ১৯২৬ সালের ১ জুন ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে কাউন্টি নামক একটি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মা গ্লাডিস পার্ল বেকারের তৃতীয় সন্তান মনরো। গ্লাডিস ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ফিল্ম নেগেটিভ কাটার কাজ করতেন। মাত্র পনের বছর বয়সে বিয়ে করেন তার চেয়ে নয় বছর বড় জন নিউটন বেকারকে। দাম্পত্য জীবনে তাদের রবার্ট এবং বার্নিস নামে দুই সন্তানের জন্ম হয়। তবে ১৯ বছর বয়সেই জনের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং জন দুই সন্তান নিয়ে কেন্টাকি চলে যান।
এর প্রায় তিন বছর পর ১৯২৪ সালে গ্লাডিস পুনরায় বিয়ে করেন মার্টিন এডওয়ার্ড মর্টেনসনকে। মনরো যখন তার গর্ভে, তখন মার্টিন জানতে পারেন এই সন্তান তার নয়। এমনকি মানসিকভাবে অসুস্থ গ্লাডিস নিজেও এ ব্যাপারে নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হন। মনরোর জন্মের ২ বছর পর ১৯২৮ সালে মার্টিন গ্লাডিসকে তালাক দিয়ে চলে যান। ফলে মনরোকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন গ্লাডিস। তার স্বল্প আয়ে মনরোর ভার নেওয়া তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এছাড়া, মনরোর জন্মের পর গ্লাডিসের মানসিক অবস্থার আরো বেশি অবনতি ঘটে। এমনকি তিনি বেশ কয়েকবার মনরোকে বালিশ মুখে চেপে মেরে ফেলারও চেষ্টা করেন। তাই তখন তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, আর ছোট্ট মনরোকে রেখে আসা হয় এতিমখানায়।
মনরোর শৈশব কেটেছে অনেক কষ্টে। অনাথ আশ্রমের কঠোর অনুশাসনের মাঝে তার জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এরপর ১২ বছর বয়সে এক পালক পিতা-মাতার গৃহে আশ্রয় পান মনরো, ফলে চাইল্ড হোমের অনুশাসন থেকে মুক্তি মেলে তার। সেখানে তিনি পূর্ণ স্বাধীনতায় জীবনযাপন শুরু করেন। এই পালক মা ছিলেন তার আসল মায়েরই বান্ধবী। কিন্তু ভাগ্য সেখানেও তার সহায় ছিল না। ১৯৪২ সালে পরিবারে অভাব দেখা দেয়। ফলে তাদের অভাব-অনটনের মাঝে মনরোর দেখাশোনা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই পুনরায় তারা মনরোকে আশ্রমে পাঠানোর মনঃস্থির করেন। কিন্তু সেখানের আত্যাচারের কথা স্মরণ করেই শিউরে ওঠেন মনরো।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনেমায় অভিনয় করেছেন মনরো। তার এসব অর্জন ৩৪ বছরের জীবনে। এরপর তার মৃত্যু হয়।
অল্প সময়ের এই জীবনে মনরো যা করেছেন, তা-ই ইতিহাস ও রহস্য হয়ে আছে বিশ্ব সিনেমায়। সেসব ঘটনা নিয়ে লেখা হয়েছে বই। সেখান থেকে নির্মাণ করা হচ্ছে চলচ্চিত্র।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে আসতে যাচ্ছে তেমন একটি সিনেমা, যার নাম ‘ব্লন্ড’। এটি নির্মাণ করেছেন অ্যান্ড্রু ডমিনিক।
জয়েস ক্যারল ওটসের বেস্টসেলিং উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ হয়েছে সিনেমাটি। এর রেটিং দেয়া হয়েছে এনসি-১৭। অর্থাৎ ১৭ ও এর কম বয়সীরা এটা দেখতে পারবে না।
নেটফ্লিক্স সিনেমাটি নিয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক বিবরণে জানিয়েছে, হলিউডের অন্যতম আইকন মেরিলিন মনরোর জীবনকে সাহসের সঙ্গে এবং নতুন করে তুলে ধরা হয়েছে সিনেমায়।
এতে মেরিলিন মনরোর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অ্যানানডি আর্মাস। এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে ট্রেলার। সাদা-কালো চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে মনরোর আইকনিক চিহ্নগুলো।