Monday, December 11, 2023
Homeগল্প ও উপন্যাসসম্পর্ক দুটো শারীরের মধ্যে নয়, বরং মনের সাথে মনের

সম্পর্ক দুটো শারীরের মধ্যে নয়, বরং মনের সাথে মনের

সম্পর্ক— দুটো আকার নেওয়া শরীরের মধ্যে একদমই নয়,বরং মনের সাথে মনের হয়। যদিও সময় বিশেষে মনের পরিবর্তন খুব স্বাভাবিক।শক্তিশালী যতই বলি না কে মন কে আমরা। নড়বড় করে উঠে মাঝে মধ্যে । তাতে কি,হাতেই তো আছে ওটার কন্ট্রোল পাওয়ার।

রুক্মিণী — মোনালিসা বেস্ট ফ্রেন্ড এর অর্থ বুঝতো না। ওরা শুধু জানত, আনকন্ডিশনাল বন্ধুত্ব। প্রয়োজনে অনেক কম বরং অপ্রয়োজনে ওরা বেশি সময় কাটাতো। বন্ধুত্ব টা ঠিক কবে থেকে শুরু হলো এটা ওদের কাছে ম্যান্ডেটরি কোনোদিনই ছিল না বরং জীবনের লাস্ট মিনিট পর্যন্ত নির্ভেজাল বন্ধুত্ব টা চালিয়ে যেতে চায় ওরা।

মোনালিসার নববিবাহিত জীবনে শশুরবাড়ি যতই নতুন সংযোজন হোক না কেনো রুক্মিণীর সাথে ওর যেমন টা চলছিল তেমন টাই চলছে।বনেদি বাড়ির বউ তাই পুজো,অনুষ্ঠান,জাকজমোকের বাড়তি বাহুলতা আছে বৈকি.. এখন এগুলোর দায়ভার মোনালিসা কেও বহন করতে হচ্ছে।

কাঞ্জিভরম, কানপাশা, রতনচুর একদিন তো অন্যদিন তসর ,লহরীহার, মানতাসা,তিন থাক ঝুমকো। রুনু ঝুনু শব্দ কান না পাতলেও শোনা যায় মোনালিসার গা দিয়ে ঝরে পড়ছে জলপ্রপাতের মত।

ছাপোষা রুক্মিণী র অবধারিত আনাগোনা আভিজাত্যে মোড়া মোনালিসার কাছে নিয়মিতই আছে। প্রায় দিনই ওদের কোথাও না কোথাও মিটিং পয়েন্ট ঠিক করা থাকতো।তবে উৎসবহীন যে কোনো দিনও মোনালিসার সাজগোজ নজরকাড়া থাকতো। তবে ইদানিং রুক্মিণী মনে এক ছোট প্রশ্ন  উকি মারা শুরু হয়েছিল। “সত্যিই কি তবে মোনালিসা তার সাদামাটা জীবন কে বেশি করে চোখের সামনে তুলে ধরছে নিজের  লাক্সারি প্রসাধন দিয়ে। কোনোভাবেই কি ও বোঝানোর দায় নিয়েছে যে, মাপক যন্ত্রে লেভেল টা কিছুটা হলেও উচু নিচু এখন দুজনের মধ্যে।শুধুই দেখানোর জন্য এতটা দেখানো? আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে এমন ভাবনা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে রুক্মিণী। আগে তার ছায়াসঙ্গী কে কোনো কিছু না ভেবেই কতো কিছু বলে দেওয়া যেত, প্রশ্ন উত্তর এত লম্বা চওড়া শব্দ গুলো তাদের কাছে হাস্যকর ছিল।এখন একটা সূক্ষ্ম পর্দা আড়াল করছে ওদের অবয়ব।

মনের প্রতিফলন ব্যাবহার কে কাটাছেঁড়া করবে এ তো নিশ্চিত।রীতি মেনেই জন্ম নিচ্ছিল একটা মরচে দাগ।মুখে কিছু না বললেও বন্ধুত্বের শীতলতা টের পেয়েছিল দুই সখি।

জানুন রেসিপি – হাঁসের কালা কষা রান্নার রেসিপি

মনার বরের জন্মদিন। সকাল থেকেই রুক্মিণীর আসার কথা। এদিকে মাথা ব্যাথার অজুহাতে কিছুতেই পা দেবে না রুক্মিণী আজ বন্ধুর বাড়ী। বেশ কয়েকবার ফোন করে  না পেয়ে” কিছুক্ষন এর জন্য “যাবো আর আসবো….. সারপ্রাইজ বলা যাবে না” – বরকে  বলে বেরিয়েছিল বাড়ী থেকে মোনালিসা। বাড়ির গাড়ির তোয়াক্কা না করেই একটা উবের ধরে সোজা রুক্মিণীর বাড়ী।

মিঠে জলপাই রঙের একটা চুড়িদার এর ওপর চাঁপা হলদেটে ওড়না গায়ে দিয়ে নিজেকে আয়নায় সাজিয়েছে রুক্মিণী। বন্ধ দরজা সশব্দে ঠেলে প্রায় উড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে মনা —রুক্মিণী কে!!!  আদুরে গলায় বলে” কি সুন্দর লাগছে তোকে, এই কামিজ টা কবে বানালি ? তোর নতুন জামার খবর আমার কাছে নেই।এটা মানা যায় ?”

রুক্মিণীর অতি সাধারণ একটা হাসি যা ও আগাগোড়াই হেসে এসেছে….. সে রকম একটা হাসি দিয়েই মনা কে বললো …… আমার জামা তোর গায়ে মানবে না এখন আর।

মনা খুব যত্ন করে রুক্মিণীর হাত টা ধরে ওর পাশে বসায়। সটান রুক্মিণী র চোখে চোখ রেখে আলতো করে বলে…… “কি করে ভাবলি তুই…. আমি দামী তসরের ভাঁজে আমার দোসর কে নিখোঁজ করে দেবো”। আচার নিয়ম আমাকে অনেক জমকালো করে দিয়েছে কিন্তু আমার আচরণ কে বশ করতে পারিনি রুকু।ভারী গয়না, জামদানি এগুলো সবই ওর আবদার আর ও বাড়ির ট্র্যাডিশন। ওইটুকুই রক্ষা করার চেষ্টা করি।আজও আমায় টানে তোর কমলা রঙের সিফন টা, ময়ূর রঙের সিভলেস কুর্তি টা।ইসস কতদিন পড়িনা ওইসব…… শোন আমরা সবাই ঘুরতে যাচ্ছি। শুধু ওই বাড়ির ছোটরা, আমাদের সাথে তুইও যাচ্ছিস।ওখানে তোর সব কটা ড্রেস পড়বো আমি। বর কে রাজি করিয়েছি এসব বস্তা থেকে ওই কটা দিন ফ্রী। খুব মজা করবো আমরা কি বল !!! রুক্মিণী র চোখ ভর্তি জল তবে একটা ফোটাও মাটিতে পড়তে দেয়নি মোনালিসা ।”সব কটা মুক্ত কে মুঠোয় ভরলাম, বড্ড দামী যে রে তুই আমার কাছে।” মোনালিসার কথা টা আরামের না আনন্দের সেটা বোঝার আগেই জড়িয়ে ধরেছিল রুক্মিণী ওর মনা কে।ভুল কে ভুল বোঝা—বুঝির পর্যায় যেতে দেয়ার আগেই সেটা শুধরে দিয়ে আমাকে তুই  ভুলের মাশুল থেকে রেহাই দিলি। তোকে আমি আমার অর্ধেক পৃথিবী ভাবতাম, — না একদমই  তা নয় তুই আমার গোটা পৃথিবী। রুক্মিণীর কথা গুলো শেষ করেই মাথা রাখলো ও মনার কোলে।

পেরেছিল ওরা নিজেদের সম্পর্কে কে আরো মজবুত করতে।সব কিছুর মধ্যেই পজেটিভ ভাইব্রেশন থাকে, সেটা বুঝে নিলেই কেল্লাফতে।

সম্পর্ক— দুটো আকার নেওয়া শরীরের মধ্যে একদমই নয়,বরং মনের সাথে মনের হয়। যদিও সময় বিশেষে মনের পরিবর্তন খুব স্বাভাবিক। শক্তিশালী যতই বলি না কেন মন কে আমরা । নড়বড় করে উঠে মাঝে মধ্যে । তাতে কি, হাতেই তো আছে ওটার কন্ট্রোল পাওয়ার।

কার দোষ কার ভুল এগুলোকে নেগলট করেই যদি একছুটে পৌঁছানো যায় তার কাছে,  অবধারিত থেকে যাবে সেটা যেমন ছিল তেমন ভাবেই। সম্পর্ক শেষ করতে চাইলে খুব সহজ উপায় সেই ব্যাক্তিটির দোষ খুজে বের করা। সে যত ছোটআকৃতির হোক না কেনো ? তার বদলে যদি একটু অন্যরকম ভাবা যায়, এই যেমন ….”যে কর্কশ কথা টা এখনও কানে বাজছে, সেটা কেনো আমায় আক্রমণ করলো ? আমার দিক থেকে কি এর আগেই কোনো ভাবে তার দিকে তীর বিধেছে। পরিস্থিতির দায়িত্ব  শুধুই ওপর দিকের মানুষটির ? জাস্ট নিজেকে জার্জ করা । কিছুই ভেবে না পেলে ফোন করে বা দেখা করে মন খুলে কথা বলা।যেনো কিছুই হয়নি । নিজের ব্যাবহার দিয়ে তাকে আরো বেশি ফ্রী ফিল করানো । আশ্বাস দেওয়া আমরা একইরকম আছি ।

প্রসঙ্গ যতই কানাঘুষোয় ঘোরা ফেরা করুক না কেনো, বিষয়টির আলোচনা শুধু সেই মানুষটির সাথেই হবে, যদি সম্পর্ক সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন তো । আর আলোচনায় শুধু সমাধান নিয়ে ভাবা হবে সমস্যার টানা হেচড়া নিষ্প্রয়োজন । অন্য মানুষ যে আপনার যতই শুভাকাঙ্ক্ষী হোক না কেনো, আপনার মনরক্ষা করতে গিয়ে, আপনার তদারকি করতে গিয়ে সে  একটা নেগেটিভ পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবে, অনিচ্ছাকৃত ভাবে হলেও। আরো জটিলতা ঘিরবে আপনাকে, মনের সহজ পথ টা চোরা অলি গলির মধ্যে খেই হারাবে। নিজেদের সমস্যা নিজেরা মেটান।

এগিয়ে যে জনই আসুন না কেনো ছোট নয় বরং বড়ো হবেন ! কারণ আপনি ইশ্বর এর দেওয়া সেই শক্তিমান আত্মা যে শান্তির কাজে সামিল করছে নিজেকে।

ভালো থাকুন, সুস্থ রাখুন সম্পর্ক, আপনার অক্সিজেনর যোগান বাঁচিয়ে নিক অমূল্য সম্পর্ক গুলো কে ।

Writer : Aliviia D Modak
copyright reserved 

আরও পড়ুন – স্বামী স্ত্রীর সুন্দর সম্পর্ক, আর্থিক উন্নতি বা বাস্তুদোষ নিবারনে কপ্পুরের জুরি নেই

Anol A Modak
Author: Anol A Modak

Film Maker, Writer, Astrologer, Vastu Consultant, Hypnotherapist, Entreprenuer

Most Popular

Recent Comments