চিকেনে বিপদ, শেষ হচ্ছে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

Side effects of chicken eat - khobor Dobor

অতিমাত্রায় চিকেন খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর জানেন কি? বেশি চিকেন খেলে যেমন বাড়তে পারে ওজন, তেমনি হতে পারে ফুড পয়সেনিং। মুখের রুচি আর সুস্বাস্থ্যের জন্য চিকেন তো খাচ্ছেন রোজই কিন্তু কতটা যাচ্ছে শরীরে তার পুষ্টিগুন?

আমার তো চিকেন ছাড়া চলেই না। চিকেন আমায় সেদ্ধ করে দিলেও আমি খেয়ে নেবো। চিকেন আমায় ব্রেকফাস্ট থেকে লাঞ্চ অবধি দিলেই বেশে ভালো। চিকেন ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারিনা। হুম এগুলো এখন টিনেজদের মধ্যে প্রচলিত বাক্য। অবশ্য বাচ্ছা, বুড়ো কারুর মধ্যেই চিকেন অনীহা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। রবিবার দুপুর মানেই চিকেন কষা, এই ব্যাপারটাই এখন হাওয়া। সপ্তাহের প্রত্যেক দিনই এখন চিকেন ডে।

মাছে কাঁটা তাই খাইনা, ডিম টা ব্রেকফাস্ট এই ভালো, শাক সবজি ওটা তো ঘাসপুশ, চিকেন খাওয়ার জন্য এরকম বাহানা লেগেই থাকে সবার এখন। চিকেন এর স্বাদ না পেলেই মন আর জিভ দুটোই বড্ডো হুহু হুহু করে। বিকালে জল খাবার যদি হয় চাউমিন, পাস্তা, স্যান্ডুইচ তার মধ্যে একটু চিকেনের টুকরো….তাহলে তো সন্ধেটাই জমে ক্ষীর।

পার্টি তে গেলেও চোখ চলে যায় চিকেন এর প্রিপারেশন গুলোর দিকেই। রুটি, পরোটা, ভাত সব কিছুর সাথেই চিকেন ইজ বেস্ট। উপরি পাওনা বলতে রেস্তোরায় গেলে চিকেন কবিরাজি, চিকেন কিমা, চিকেন তন্দুর, রোস্ট, কাবাব,টিকিয়া, ভুনা, করাই, টিক্কা,রেজালা, বিরিয়ানি এগুলো তেই আটকে থাকে জিভ।তাড়না দেওয়ার জন্য সুবিশাল লিস্ট আছে, যা এই কয়েকটায় সীমাবদ্ধ নয়।

চিকেন পেলেই দিল খুশ হয়ে যায়, শরীরে বল বাড়ে, আর মুখের অরুচি, সে তো ধারে কাছে আসার চান্সই পায় না। দারুন ব্যাপার আছে এই চিকেন এর মধ্যে। প্লেটে পেলেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে। চিকেন প্রেমে মাতোয়ারা গোটা বিশ্ব।

বাঙালীর হেঁসেলে চিকেন সমান ভাবে সামনে আসে লাঞ্চ, ডিনার টেবিল এ, বাচ্ছাদের আর বয়স্কদের জন্য চিকেন সুপ্। বিভিন্ন সবজি সাকুল্লে চিকেনের পাতলা ঝোল, কষা, গ্রেভি মাখা মাখা সবতেই বরণ্য এই চিকেন। চিকেনের পুষ্টিগুন অনেক, আবার চিকেন খেলেও ওজন বাড়ার চান্স নেই, আবার যদি হয় কম তেল মশলায় চিকেন পাতলা ঝোল তাহলে তো শরীরের ওপরে কোনো চাপই নেই। সুস্থ, অসুস্থ যাই হোক না কেন চিকেন অফ নেই একদম।

কিন্তু অতিমাত্রায় চিকেন খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর জানেন কি? বেশি চিকেন খেলে যেমন বাড়তে পারে ওজন, তেমনি হতে পারে ফুড পয়সেনিং। মুখের রুচি আর সুস্বাস্থ্যের জন্য চিকেন তো খাচ্ছেন রোজই কিন্তু কতটা যাচ্ছে শরীরে তার পুষ্টিগুন?

প্রতিদিনের মুরগি রান্নায় থাকে তেল মশলা। আবার সব সময় ছোট মুরগি মেলে না বাজারে। বুড়ো মুরগি মেশানো থাকলে সেটা বোঝা মুশকিল। এখন আবার ফ্রোজেন চিকেন এর চাহিদাও খুব। তাই অপুষ্টিকর উপায়ে চিকেন খেলে শরীরে স্বাভাবিক এর থেকে বেশি জমবে প্রোটিন। প্রতিদিন শরীরে ১০—৩৫ শতাংশ কালোরির মধ্যে প্রোটিন থাকা বাঞ্চনীয়।অতিরিক্ত চিকেনে শরীরে জমবে চর্বি, বাড়বে ওজন, জীবন হবে ঝুঁকি পূর্ণ, রক্তে লিপিডের মাত্র বাড়বে। নিয়ম অনুযায়ী চিকেন না খেলে বাড়তে পারে বিপদ।

চিকেন খেয়ে হজম করতে না পারলে সমস্যা বাড়তে পারে শরীরে। মশলাদার চিকেন বাচ্ছাদের পক্ষে হজম করা কঠিন, স্বাদের জন্য খেয়ে যাচ্ছেন চিকেন কিন্তু সেটা হজম হতে চাইছে না, কিন্তু আপনি ছাড়তেও পারছেন না। চিকেন আসক্তি আপনাকে বশ করে রেখেছে। বিশেষত তন্দুর, কাবাব এই ধরণের খাবার মানে হলোপোড়া বা অল্প সিদ্ধ, সেগুলো ঠিক হজম নাহলে বিপদের সংকেত।

পুষ্টিগুন বজায় না রেখে চিকেন রান্না করলে মিলনা বা ক্যাম্পিলোবাক্টের নামক ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া মানব শরীরে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে, বিশেষ করে বাচ্চা, গর্ভবতী, বয়স্কদের ক্ষেত্রে।

অতিরিক্ত ফ্রজেন চিকেন বা চর্বিযুক্ত চিকেন খেলে শরীরে কোলেস্টরলের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এতে হার্টের অসুখ আসা নির্ধারিত। হার্টের অসুখ যে কতটা বিপদজনক সেটা সম্বন্ধে আমরা প্রায় সবাই অবগত।
অবশ্যই অন্যান্য মানুষের থেকে চিকেনের শরীরে চর্বির পরিমাণ কম থাকে। অল্প এনিমেল প্রোটিন শরীরের পক্ষে ভালো, খেয়াল রাখতে হবে যেন চিকেন এর মাত্রা আমাদের শরীরে খুব বেশি না পৌঁছায়।

রেস্তোরাঁর বরফ যুক্ত চিকেন এড়িয়ে চলাই ভালো, এছাড়া প্রসেস চিকেন ও অস্বাস্থ্যকর বা বুড়ো মুরগির চর্বি শরীরের জন্য ঠিক নয়।চিকেন খাওয়ার সময় এইগুলো এড়িয়ে চললে শরীরের ওজন ঠিকঠাক থাকবে। শরীরে এন্টিবায়োটিক এর পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য চিকেন খাওয়া ও কম করা উচিত। শরীরে হঠাৎ কোনো সমস্যা হলে ঔষধ কাজ করতে চায়না এ ক্ষেত্রে। তারা ফলে রোগ নিরাময় খুব দেরি হয়। অবশ্যই চিকেন খান, ভালোবেসে চিকেন খান, কিন্তু মেপে খান।