হিরন্য কশিপু বধের পর ভগবান নৃসিংহ দেব- এর কি হয়েছিল – পুরানের গল্প

Narasimha images

সনাতন ধর্মে অধর্ম, হিংসা, নির্দয়তা করার জন্য যখনই কেউ জন্ম নিয়েছে তাকে বধ করার জন্য ভগবান শ্রী বিষ্ণু সয়ং আবির্ভূত হয়েছেন। ভগবান শ্রী বিষ্ণু বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন অবতারে আবির্ভূত হয়ে অধর্মকে নাশ করেছেন। দাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা কংস বধ থেকে মহাভারত পর্যন্ত, ত্রেতা যুগে ভগবান রাম দ্বারা রাবন বধ ও সত্য যুগে বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার নৃসিংহ দেব দ্বারা হিরন্য কশিপু বধ হয়েছিল।

এছাড়াও ভগবান শ্রী বিষ্ণু অনেক অবতারে আবির্ভূত হয়েছিলেন পাপিদের বিনষ্ট করার জন্য। আজ আমরা জানব ভগবান নৃসিংহ দেব দ্বারা হিরন্য কশ্যপু বধের পর নৃসিংহ দেব এর কি হয়েছিল –

সত্য যুগে হিরন্য কশিপু নামে এক নির্দয় রাজা ছিলেন। তিনি দৈত্যদের রাজা ছিলেন। তিনি কঠোর তপস্যা করে ব্রম্ভার কাছ থেকে বর লাভ করে ছিলেন। তিনি এমন বর চেয়েছিলেন যে কোন মানুষ, কোন পশু তাকে বধ করতে পারবেন না, এমনকি কেউ তাকে রাতে কিংবা দিনের বেলায় মারতে পারবেন না, এছাড়াও কেউ তাকে অস্ত্র শস্ত্র দ্বারা, ঘরের ভেতর না ঘরের বাইরে তাকে বধ করতে পারবে।

নৃসিংহ অবতার ছবি

পুরী জগন্নাথ মন্দিরের রহস্যজনক ও অবাক করা তথ্য

এই বর পেয়ে তিনি ভাবলেন যে তিনি অমর হয়ে গিয়েছেন। কেউ তাকে আর বধ করতে পারবেন না। তিনি নিজেকে ভগবানের সাথে তুলনা করতে লাগলেন। এমনকি তিনি চাইলেন যে তাঁর প্রজারা ভগবান শ্রী বিষ্ণুের পূজো না করে তাকে যেন পূজো করে। কিন্তু তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ ভগবান শ্রী বিষ্ণুর পরম ভক্ত ছিলেন। এটা তিনি সহ্য করতে পারলেন না। তাই তিনি তাকে মারার অনেক চেষ্টা করলেন। কিন্তু সফল হলেন না।

তাই তিনি নিজের বোন হোলিকা কে বললেন তাকে মারার জন্য। তাঁর বোন হোলিকা আগুনে না জ্বলার বরদান পেয়েছিলেন। তাই তিনি প্রহ্লাদকে কোলে করে নিয়ে আগুনের ওপর বসে পড়লেন। কিন্তু ভগবান শ্রী বিষ্ণু তাকে রক্ষা করেছিলেন এবং হোলিকার বর দানের বিপরীত সরুপ তিনি নিজে জ্বলে গিয়েছিলেন।

এরপর রাজা হিরন্য কশিপু নিজে প্রহ্লাদকে মারার জন্য উদ্যত হলে হঠাৎই এক থাম্বের ভেতর দিয়ে ভগবান শ্রী বিষ্ণু নৃসিংহ অবতার নিয়ে আবির্ভূত হয়ে সন্ধ্যা কালে ঘরের চৌকাঠে ওপর নিজের কোলের উপর তুলে হাতের নখ দিয়ে তাঁর বুক চিরে তাকে বধ করে ছিলেন।

নৃসিংহ অবতার অর্থ

কলকাতার আবাক করা দশটি আশ্চর্যজনক তথ্য যার জন্য বাঙালিরা গর্বিত

হিরন্য কশিপু কে বধ করার পরও নৃসিংহ ভগবানের ক্রোধ শান্ত হলো না। তাঁর ক্রোধে সারা বিশ্ব ধ্বংস হতে লাগলো। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত ভগবান মিলে মহাদেবের কাছে গিয়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন যে তিনি যেন তাঁর ক্রোদ শান্ত করেন। সর্বপ্রথম শিব বিরভদ্রকে পাঠালেন তাকে শান্ত করার জন্য। কিন্তু নৃসিংহ দেবের ক্রোধের কাছে বিরভদ্র ও কিছু করতে পারলেন না।

তখন মহাদেব স্বয়ং সর্বেশ্বর অবতার নিলেন। শিবের এই অবতার কে শরভ অবতার ও বলা হয়। এই অবতারে মানুষ, পাখি ও বাঘের সমাবেশ ছিল। সর্বেশ্বর অবতারে তিনি ভগবান নৃসিংহ দেবের ক্রোধ শান্ত করার চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না। এরপর ভগবান নৃসিংহ দেব ও সর্বেশ্বর অবতারে মধ্যে আঠেরো দিন ধরে যুদ্ধ চলতে লাগল কিন্তু এই যুদ্ধের কোনো শেষ ছিল না।

Lord Narashimha Images

সময়ের সাথে যখন নৃসিংহ অবতারের ক্রোধ শান্ত হল তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে মহাদেব স্বয়ং সর্বেশ্বর রুপে আবির্ভূত হয়েছেন তাকে শান্ত করার জন্য। তখন নৃসিংহ দেব স্বয়ং নিজেকে শান্ত করে শ্রী বিষ্ণুর মধ্যে সমাবেশ করলেন। এই ভাবে মহাদেবের সর্বেশ্বর রূপের দ্বারা নৃসিংহ দেব ভগবানের ক্রোধ শান্ত হয়েছিল।