Monday, May 29, 2023
Homeআধ্যাত্মবাদসর্বশক্তিমান মহাদেব কেন তুচ্ছ প্রাণী কুমিরের রূপ ধারণ করেছিলেন?

সর্বশক্তিমান মহাদেব কেন তুচ্ছ প্রাণী কুমিরের রূপ ধারণ করেছিলেন?

শিবের আরেক নাম আদিদেব। কারণ তার আদি আছে কিন্তু অন্তনেই। যে নিজেই সৃষ্টি আবার নিজেই ধ্বংস। সেই মহাদেব এর সাথে কেন এমন হয়েছিল যে তাকে কুমিরের রূপ ধারণ করে জলে থাকতে হয়েছিল?

পর্বতের উপর মহাদেব ধ্যানে মগ্ন হয়ে আছেন। এমন সময় দেবতারা এসে মহাদেবের কাছে দেবী পার্বতীর কঠোর অনুশাসনের জন্য সাক্ষাতের প্রার্থনা করতে লাগলো। মহাদেব তাদের প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাদের সাথে দেখা করলেন এবং নিজেই এই সমস্যার সমাধান বার করার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলেন। কি এমন কথা যার জন্য দেবতারা একত্রিত হয়ে মহাদেবের শরণাপন্ন হয়েছিলেন? এর সাথে মহাদেবের কুমির হয়ে জলে বাস করার সম্বন্ধ বা কি?

পুরান মতে দেবী পার্বতী মহাদেবকে স্বামী রুপে পাওয়ার জন্য নিজের সর্ব প্রসাধন ত্যাগ করে কঠিন তপস্যা শুরু করেছিলেন। দেবী পার্বতীর এই কঠোর সাধনা লক্ষ্য করে নিজেরাই মহাদেবের কাছে প্রার্থনা জানান যে দেবাদিদেব যেন দেবী পার্বতী ইচ্ছাকে আশীর্বাদ প্রদান করেন। এবং দেবী পার্বতীর মনষ্কামনা পূর্ণ করেন।

দেবতাদের আরজি রক্ষা করার জন্য মহাদেব সপ্তঋষি কে দেবী পার্বতীর কাছে পাঠান। সপ্তঋষি দেবী পার্বতীর কাছে গিয়ে মহাদেবের অনেক দোষ নির্গুণ ও তার কথা জানান। কিন্তু দেবী পার্বতী নিজের জেদের অনড় থাকেন এবং জানান যে তিনি স্বামী রূপে একমাত্র শিব কেই গ্রহণ করবেন এবং মহাদেবের বিরুদ্ধে কোনো কথা তিনি শুনবেন না। সপ্তঋষি মহাদেবের নিকটে সবটা ব্যাক্ত করেন । এবারে স্বয়ং শংকর দেবী পার্বতীর প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েন।

দেবী পার্বতী যে পর্বতে বসে নিজের সাধনা করতেন ঠিক তার নিকটে একটি বড় জলাশয় ছিল। একটি বাচ্চা সে জলাশয় এ নেমে জলের মধ্যে খেলা করছিল। এমন সময় একটি কুমির বাচ্চাটির পা কামড়ে ধরে এবং বাচ্চাটি তার ফলে খুব কাঁদতে শুরু করে। কাতর হয়ে কাঁদতে কাঁদতে শিশুটির দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন যে তাকে যেন সে কুমিরের হাত থেকে তিনি রক্ষা করেন। দেবী পার্বতী ওই ছোট্ট শিশুটির ক্রন্দনরত অবস্থা দেখে ধ্যান থেকে বিরত হন এবং তিনি এগিয়ে এসে বাচ্চাটিকে ছেড়ে দেয়ার জন্য কুমিরটির কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করতে থাকেন। কুমিরটি দেবীকে জানায় যে একটিমাত্র শর্তে সে বাচ্চাটিকে ছাড়তে পারে। দেবী জানান আমি সমস্ত শর্ত মানতে রাজি আছি , শুধু বাচ্চাটিকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কুমিরটি পার্বতীকে জানান যে, দেবী হাজার হাজার বছর ধরে তপস্যা করে যে শক্তি ও ফল সঞ্চয় করেছেন সেটি সম্পূর্ণ কুমিরটিকে দিয়ে দিতে হবে। দেবী সেটা শুনে রাজি হয়ে যান এবং বলেন আমি আমার সমস্ত তপস্যার ফল তোমাকে দিতে রাজি আছি শুধু তুমি এই বাচ্চাটিকে মুক্তি দাও। দেবীর অর্জিত সমস্ত ফল নিজের কাছে নেওয়ার আগে দেবী কে আরেকবার বিবেচনা করার জন্য বললো। দেবী পার্বতী মনস্থির করে ফেলেছিলেন যে তিনি তাঁর তপস্যার সমস্ত ফল কুমিরটিকে দিয়ে দেবেন এবং তার বিনিময়ে শিশুটির জীবন ফিরিয়ে দেবেন। এই বলে দেবি নিজের সমস্ত তপস্যার ফল কুমিরটিকে দিয়ে দেন। এবং বাচ্চাটি কে কুমিরের কবল থেকে মুক্ত করেন। কুমিরটি দেবীকে জিজ্ঞেস করেন যে কেন এতো কঠিন তপস্যার ফল তিনি দিয়ে দিলেন একটি বাচ্চার জীবনের কারণে? দেবী জানান তিনি পুনরায় আবার তপস্যা মগ্ন হয়ে পুণ্যফল অর্জন করতে পারবেন কিন্তু বাচ্চাটিকে যদি কুমিরটি জলের ভিতর নিয়ে চলে যায় তবে বাচ্চাটির প্রাণ সংশয় হবে এবং বাচ্চাটি তার প্রাণ কখনই ফেরত পাবে না। বলা মাত্রই কুমির এবং বাচ্চাটি কিছুক্ষণের মধ্যেই উধাও হয়ে যায় জলাশয় থেকে। দেবী কিছুটা স্তম্ভিত হন প্রস্থান করতে দেখে। পাহাড়ের উপরে আবার নিজের ধ্যান শুরু করার জন্য এগোতে থাকেন। দেবীর পথ আটকে স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব দেবীর সামনে উপস্থিত হন। দেবী তার আরাধ্য কে সামনে দেখে প্রণাম জানান। মহাদেব বলেন এত কঠোর তপস্যা পর কেন দেবী আবার তপস্যা মগ্ন হতে যাচ্ছেন? পার্বতী বলেন যে তিনি তার সমস্ত অর্জিত পুণ্যফল একটি শিশুকে উদ্ধার করার জন্য কুমিরকে দান করেছেন। ভগবান শিবকে সন্তুষ্ট করার জন্যই এবং তাকে স্বামী রুপে পাবার জন্যই তাঁর এই কঠোর তপস্যা। মহাদেব হেসে জানান যে, হে দেবী কুমির ও ছেলেটি রূপে সবটাই আমি ছিলাম। তিনি দেবীকে পরীক্ষা করতে এসেছিলেন। দেবীর শরীরে কতটা দয়ামায়া আছে সেটা উপলব্ধির কারণে।

দেবী জানান আপনাকে স্বামী রুপে পাওয়াটাই আমার সংকল্প। আমি তপস্যার ফলদান করে দিয়েছি আবার আমি প্রকট তপস্যা করে আপনাকে প্রসন্ন করে নেব। মহাদেব দেবীর নিকট জানান যে তিনি তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট এবং তাকে তিনি আশীর্বাদ প্রদান করতে এসেছেন তার মনের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য দেবীর নিকট স্বয়ং তার আবির্ভাব।

কৈলাশ পৌঁছানো কেনো অসাধ্য ? – কলমে সুনীত অধিকারী

ভগবান শ্রী বিষ্ণু এক নারীর সতীত্ব নষ্ট করেছিলেন কেন জানেন ?

follow khobor dobor on google news

Anol A Modak
Author: Anol A Modak

Film Maker, Writer, Astrologer, Vastu Consultant, Hypnotherapist, Entreprenuer

Most Popular

Recent Comments