রাজা উপরিচর বসুর রানী হলেন গিরিকা। ঋতুবতী গিরিকা সদ্য সদ্য স্নান সেরে উঠেছেন। অর্থাৎ পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর নিজেকে পরিচ্ছন্ন করেছেন ঋতুস্নান সেরে । প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী এমন সময় যৌন আকাঙ্ক্ষিত হয়ে পড়েছেন রানী গিরিকা। সুতরাং রানী মিলনের ইচ্ছা প্রকাশ করে রাজাকে আহবান জানালেন। প্রাচীন ভারতের শুধু পুরুষ নয়, নারীরাও তাদের যৌন কামনার কথা নিজেরাই বলতো। সেই মতো গিরিকাও জানিয়েছিল তার শারীরিক খিদের কথা। রাজা এসে তার রূপসী সুন্দরী স্ত্রীকে দেখে বিহল্য ও উত্তেজিত হয়ে পড়লেন।
কিন্তু বাধা দিলেন পিতৃ পুরুষেরা। তারা আদেশ দিলেন রাজা উপরিচর কে মৃগয়া করতে যেতে। সম্ভবতই পিতৃ পুরুষেরা রাজা উপারিচর ও রানী গিরিকার মনের ইচ্ছের কথা জানতেন না। মিলনের আকাঙ্ক্ষা নিয়েই রাজা মৃগয়ায় গেলেন। সেখানে কামর্য অবস্থায় স্বীকার করছেন রাজা। কিন্তু মন পড়ে আছে স্ত্রী গিরিকার দিকেই।এদিকে বনের মধ্যে ও বসন্তকাল তার রূপের ডালি বিছিয়ে রেখেছে। বসন্তে প্রকৃতির রূপ, রস,গন্ধ, মৌমাছি, ভ্রমরের গুনগুন, চাঁপা ফুলের গন্ধ, কোকিলের কুহুতান,রাজা কে আরো বেশি করে কামাসক্ত করে তুলেছিল।
রাজা উপরিচর কোন উপায় না পেয়ে, ফুলের সৌরভের গন্ধে মোহগ্রস্ত হয়ে অশোক গাছের তলায় বসে মনে মনে স্ত্রীকে সম্ভগ করলেন যথারীতি তার বীর্যপাত হলো সেই অশোক গাছের তলায়। রাজা মশাই খুব সংযত ভাবে তার বীর্যটিকে মাটিতে পড়া থেকে বিরত করে খুবই সযত্নে আঙ্গুলের মাধ্যমে বীর্যটি অশোকের লালকচি পাতায় মুড়ে একটি বাজপাখির মাধ্যমে সেটা স্ত্রী গিরিকার উদ্দেশ্যে পাঠালেন। বাজপাখিটি রাজার প্রেরিত অশোক গাছের পাতাটি মুখে করে নিয়ে উড়তে ব্যস্ত মাঝ আকাশে তখন তাকে আরেকটি বাজপাখি আক্রমণ করল। দুজনের ঠোকাঠুকিতে অশোক পাতার মোড়ক টি গিয়ে পড়ল যমুনার জলে।
এই যমুনার জলে বাস করত অদ্রিকা নামক মাছরুপী অপ্সরা। এই অদ্রিকা অপ্সরাটি ব্রাহ্মণের অভিশাপে মাছ হয়ে জলের মধ্যে বাস করত। আকাশ থেকে কিছু একটা খসে পড়তে দেখে মৎসরূপী অপ্সরাটি টপ করে গিলে ফেললো অশোকের পাতায় মোড়া উপরিচরের বীর্যটা। রানীগিরিকার পরিবর্তে অদ্রীকার মৎস্য জরায়ুতে স্থান পেয়ে সক্রিয় হয়ে উঠল বীর্যটি। দশ মাস পর মৎস্য রূপে অদ্রিকা গর্ভকালীন অবস্থায় জেলেদের জালে ধরা পরল। পেট কেটে বেরলো একটি মৎস্য রূপী পুত্র ও কন্যা।
সেই পুত্রের নাম রাখা হলো ‘মৎস্য’। এই ‘মৎস্য’ নামক পুত্রটিকে রাজা গ্রহণ করলেন। পরবর্তীকালে ‘মৎস্য’ ধার্মিক রাজারুপে খ্যাতি পান। আর কন্যাটি ?— যে জেলেটি তুলেছিল মাছটিকে রাজামশাই তার হাতেই অর্পণ করলেন কন্যাটিকে। “আজ থেকে এই কন্যা তোমার হোক “এই ছিল সেদিন রাজার উক্তি। সেই থেকেই কন্যাটি ‘ধীবর’ নামক জেলের ঘরেই লালিত পালিত হতে লাগলো। বড় হয়ে সেই রূপবতী কন্যাই হলো মৎস্যকন্যা ‘সত্যবতী’।