Monday, December 11, 2023
Homeগল্প ও উপন্যাসমরে গিয়ে বাঁচার ইচ্ছে - লেখক : সাগ্নিক মৈত্র

মরে গিয়ে বাঁচার ইচ্ছে – লেখক : সাগ্নিক মৈত্র

আজ যখন লিখতে বসলাম মনটা অশান্ত কি লিখবো কিছুতেই মাথায় আসছে না, এই করে অনেকটা সময় নষ্ট কয়েকটা সিগারেট নষ্ট করে, যখন মনটা শান্ত হলো — লিখবো বলে ঠিক করলাম তখন আমার অজান্তেই , কেউ যেন বলে উঠলো যা চাস যেটা বিশ্বাস করিস লিখতে পারবি তো সেই কথা ? এদিকে পাবলিশার্স টাকাটা দিচ্ছে পুজো সংখ্যার জন্য একটা কিছু লিখতেই হবে, কিন্তু কি লিখবে কিছু মাথায় আসছে না । এ এক যেন নতুন অশান্তি কিছুতেই লিখতে পারছি না । এমন সময় লেখার টেবিলের পাশের জানলা দিয়ে দেখলাম গুরু পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় আর বৃষ্টির পর আমার বাড়ির সামনের রাস্তাটা কে যেন মায়াবী করে তুলেছে ।

সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছটাকে কী আশ্চর্য সুন্দর লাগছে এই রূপালী আলোয়, সিগারেটটা শেষ করে টেবিলে এসে বসতে যাবো দেখি আমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক পরনে খাদির পাজামা পাঞ্জাবি কাঁধে ঝোলা ব্যাগ চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, একি মৃণাল স্যার আপনি? কিন্তু — স্যার স্বভাবতই বলে উঠলেন – শান্ত কিন্তু দৃঢ় গলায়, কি লিখতে পারছিস না – না মানে …… ওই আবোল তাবোল আশারে সস্তার গল্প লিখবি বলে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করলি ?

তোর মনে আছে কিনা জানিনা, তোদের পড়ানোর সময় আমি একটা কথা তোদের বলেছিলাম “ মানুষের যা ক্ষমতা নেই – তা কিন্তু একটা কলমের আছে ” একটা কলম চাইলে গোটা সমাজের উলঙ্গ রূপটা সবার সামনে নিয়ে আসতে পারে — ভুলিনি স্যার কিন্তু আমি যা লিখি তা তো পাঠকের মন জয় করেছে – বিক্রিও ভালই হচ্ছে, কিন্তু সে লেখায় কি তুই বিশ্বাস করিস ? যে লেখক নিজের লেখায় বিশ্বাস করে না তার আত্মহত্যা করা উচিত।

আরও গল্প পড়ুন – ‘অন্য রকম কাহিনী’ – কলমে অলিভিয়া দে মোদক

শুধুমাত্র রোজগারের জন্য সাহিত্যকে বিক্রি করিস না – সাহিত্যকে সমাজের দর্পণ হিসেবে ব্যবহার কর । দেখবি বিক্রি কম হলেও শান্তি আছে — তুই ছাত্রজীবনে সমাজ বদলানোর স্বপ্ন দেখতিস , তার জন্য অনেক লড়াইও করেছিস কিন্তু সেটা কোন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় গিয়ে নয়, নিজের ফিলোসফির ওপর নিজের ভাবনার ওপর নির্ভর করে লড়াই করেছিস । ভুলে গিয়েছিস সেই সব দিনের কথা ?

না, স্যার কিছু ভুলিনি কিন্তু আজ এইসব কথা লিখলে মানুষ পড়বেনা । মানুষ চায় না স্যার নিজে শিরদাঁড়ার উপর দাঁড়াতে – স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশদের গোলামি করে চলেছে, তারা আজ বেনিয়াদের সেলামি করছে , মানুষের শিরদাঁড়া বিক্রি হয়ে গেছে স্যার তারা আজ সরীসৃপ প্রাণী তে পরিণত হয়েছে – যে জাতি জেগে ঘুমায় তাকে কি কোনদিন জাগানো যায় স্যার যায় না, যায় না ……. কিন্তু অমিত জাগানোর চেষ্টা না করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানো আরো বেশি অন্যায় । তুই তো ধরেই নিয়েছিস যে সে জাগবে না এত সহজে হাল ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যাবি ? তোর সেই প্রিয় গানের লাইনটা ভুলে গেলি – “হাতের কলম জনম দুখী তাকে বেচো না ”। বাইরে তাকা দেখ নতুন ভোরের আলো ফুটছে, নতুন সকালকে স্বাগত জানা নিজের লেখা দিয়ে ।

যে লেখায় তুই বিশ্বাস করিস, যে লেখা মানুষকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাবে – যে লেখা বলবে “তুমিও মানুষ আমিও মানুষ তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়” আর সময় নষ্ট করিস না, অমিত আজ থেকে তুই নতুন সংকল্প কর, নিভে যাওয়া মশালটাকে আবার নিজের কলমের আগুনে সিক্ত কর, বিপ্লব শুরু কর । এর মধ্যেই মোবাইল ফোনটা বিকট সুরে বেজে উঠলো , খেয়ালই নেই কখন লিখতে বসে চোখ লেগে গেছে –

হ্যালো……হ্যাঁ বল , কি ! কাল রাতে মৃণাল স্যার মারা গেছেন ! আচ্ছা আমি তোকে একটু পর ফোন করছি …… স্যার কালকে যে কথাগুলো বললেন — তা কি আমার স্বপ্ন – স্যার নিজে চলে গিয়েও আমার কলমকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেলেন ॥

Anol A Modak
Author: Anol A Modak

Film Maker, Writer, Astrologer, Vastu Consultant, Hypnotherapist, Entreprenuer

Most Popular

Recent Comments