“মহাভারতের অস্তিত্ব ছিল ছিল ছিল আমি দাবী রেখে বলতে পারি “।
জোর গলায় হাত ঘড়ি চোখ নাচিয়ে বলল সেন্টু।
“অসম্ভব ” বলে মুখ বাঁকালো মন্টু।
“তুমি গুল পারবে আর আমাকে সেগুলো চোখ-কান বুজে মেনে চলতে হবে তা হবে না। দেখো মহাভারত-রামায়ন এসব ঋষি মনিদের লেখা গল্প কোনটাই সত্যি সত্যি ঘটেনি এই আমি মানবো না “। বেশ কঠোরভাবে দাবি জানিয়ে বললো মন্টু।
” হুননন “…. বললেই হলো মানবোনা আমি…
আমি সেন্টু ঘোষাল প্রমান দিতে পারি। প্রমাণ পেতে হলে আজ রাত্রি আটটায় বান্টু সাইন্টিস্ট এর বাড়ি তে। বলে দুজনে হাত মিলিয়ে যে যার বাড়িতে চলে গেল।
ঝান্ডা মুন্ডা বলে এক শহরে থাকে এই দুই বন্ধু সেন্টু আর মন্টু, দুজনে পাশাপাশি বাড়িতেই থাকে দুজনের বয়স 15। এতক্ষণ এদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল যে মন্টুর বিশ্বাস মহাভারত রামায়ণ কোন তারিখ সত্যি সত্যি অস্তিত্ব নেই শুধুই বইয়ের বানানো গল্প ; অথচ সেন্টু বক্তব্য পুরোপুরি উল্টো এবং সে প্রমাণ করে দিতে পারে এগুলোর একসময় থেকে সত্যি সত্যি ঘটেছিল।
সাড়ে সাতটায় দুজনে ঘর থেকে বেরিয়ে বান্টু সাইন্টিস্ট এর বাড়ির দিকে রওনা দিল, বান্টু সাইন্টিস্ট এর বাড়ি শহর ছাড়িয়ে একটা ফাঁকা মাঠ তার মাঝখানে। বান্টু বয়স হলো তার বাড়িতে নাকি যা জিনিস আছে সব তার আবিষ্কৃত, আসলে সব তার বাবার আবিষ্কৃত তার দাবি সে এগুলো এক্সপেরিমেন্ট করেছে বলে তাই তার দাবি এগুলো তার আবিষ্কৃত।
এগুলোর মধ্যে অটো কুয়ো, ওয়ান্ডার কার, ভ্যানিশিং ক্রিম, এবং আরো অনেক কিছুই পরে ; তবে সবচেয়ে বিশেষ আবিষ্কার যেটা হল ‘ টাইম মেশিন ‘। অবশ্য কেউ দেখেনি এখনও সেটা কিন্তু বান্টু সাইন্টিস্ট কয়েকজনকে বলেছে সে নাকি সময় আসলেই সেটা সকলকে দেখাবে।
রাত্রিবেলায় সাড়ে আটটায় বান্টু সাইন্টিস্ট এর বাড়ির সামনে এসে পৌঁছালো মন্টু আর সেন্টু। দরজায় টোকা মারতে হয় না অটোমেটিক একটা বাক্স থেকে একজন ইংরেজিতে বলে ওঠে
” হ্যালো হু ইজ দেয়ার “?
পরিচয় দিলে 10 সেকেন্ড পরে দরজা আপনা থেকে খুলে যায়। ভেতরে ঢুকেই সেন্টু আর মন্টু ভয়ে সিঁটকে গেল ওরকম একটা থমথমে পরিবেশ চারিদিক লাল-নীল-সবুজ আলো বিভিন্ন রকম যন্ত্রপাতি রোবট এটা-সেটা কাজ করে বেরোচ্ছে যেন ভয়ঙ্কর একটা ভূতুড়ে পরিবেশ। সেন্টু ভয়ে ভয়ে ডাকলো
” বান্টু দা….বান্টু দা… ও বান্টু দা আছো নাকি “?
ভেতর থেকে এক ছোকরা বেরিয়ে এলো মাথার চুলগুলো ঝাঁকড়া পাঁচ ফুটের বেশি হাইট নয় চোখে গোল গোল চশমা পরনে একটা বারমুডা এবং সাদা জামা সাদা কোট।
” কি চাই ঘোর বিপদ নাহলেতো বান্টু সাইন্টিস্ট এর কাছে কেউ আসে না কি ব্যাপার বল আমার নতুন টাইম মেশিন টা আজ রাত্রে আবার তৈরি হয়ে যাবে তারপর আমায় পাবি না…. ” রশিয়ে কষিয়ে বলল বান্টু সাইন্টিস্ট।
” ওটাই দরকার বান্টু দা… ওই… ওই টাইম কি বললে ওটাই…. সেদিন যেটাতে বলছিলে ভূত-ভবিষ্যৎ নাকি সশরীরে যাওয়া যায়… ওটাই…. সেন্টু প্রেসটিজের ব্যাপার বাটুল দা “। খুব ন্যাকামো করে বলল সেন্টু।
তারপর সেন্টু আর মন্টু তাদের ঝগড়ার ঘটনাটা খুলে বলল বান্টু সাইন্টিস্ট কে, বান্টু সব শুনে গম্ভীরভাবে বললো
” কিন্তু মেশিন তৈরি হতে এখনো আধঘণ্টা লাগবে আসলে একটা বিশেষ তেলের দরকার সেটা এখনো তৈরি হয়ে ওঠেনি ওটা হলে কেল্লাফতে… তোরা এক কাজ কর ভোরবেলায় আয়….. কিন্তু যাবিটা কোথায়??? “
” কুরুক্ষেত্র ” জোর দিয়ে বলল সেন্টু।
” কুরুক্ষেত্র সেটা আবার কোথায়?? “
ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল বান্টু সাইন্টিস্ট।
” আরে মহাভারতের কুরুক্ষেত্র উঃফ সাইন্স ছাড়া কোন নামই জানো না দেখছি… ” বিরক্ত হয়ে বলে উঠল মন্টু।
ভোর রাতে সাড়ে চারটে নাগাদ এসে হাজির সেন্টু আর মন্টু ; সেন্টু এসে জিজ্ঞেস করল ” তোমার বিশেষ তেল রেডি তো?? “
“হ্যাঁ রেডি ” একগাল হেসে বলল বান্টু সাইন্টিস্ট।
তিনজন একসঙ্গে প্রবেশ করলে ল্যাবরেটরীতে একটা বিরাট আকারের বাক্স একটা মেশিন এর সঙ্গে যুক্ত মেশিনে কয়েকটা বোতাম টিপতে বাক্সের মধ্যে বিভিন্ন রকম আলো প্রতিফলিত হল।
বান্টু দা বললো ” এই বাক্সে তিনজনকে একসঙ্গে প্রবেশ করে কোথায় কোন যুগে যাবে বললেই একটা আলোর ঝলকানি হয়ে কয়েক মুহূর্তে সেখানে পৌঁছে যাবে। ” নিয়মমতো সমস্তকিছু পালন করতে যে তিনজন মিলে নাম এবং সময় বলল…. তৎক্ষণাৎ একটা আলোর ঝলকানিতে তিনজন কোথায় মিলিয়ে গেল শুধু মেশিনের একটানা শ্নওঃ আওয়াজটা রয়ে গেল।
ধড়াস ধড়াস ধড়াস করে তিনজন তিন জায়গায় পড়ল চোখ খুলতেই বুঝতে পারল তারা ঠিক জায়গাতেই এসছে, ” কু… কু….কুরুক্ষেত্র ” বলে উঠলো সেন্টু তিনজন অবাক মহাযুদ্ধ চলছে।
কিন্তু যোদ্ধা যখন শুরু হয়নি চারিদিক নিস্তব্ধ একদিকে পান্ডব সেনা অপরদিকে কৌরব সেনা কিন্তু সময়, সময় থেমে গেছে কিন্তু সেন্টু, মন্টু আর বান্টু থেমে যায়নি সেটা তারা রীতিমতো বুঝতে পারছে কিন্তু কিছু করার ক্ষমতা নেই যেন কোনো কিছু তাদের বাধা দিচ্ছে। মন্টুর মুখ হা হয়ে গেছে সমস্ত কিছু দেখে আপনা থেকেই বলে উঠলো ” এও কি সম্ভব…???? ” বলে মুখ হা করে চারিদিক দেখতে লাগলো যুধিষ্ঠির ভীম নকুল সহদেব অপরদিকে দুর্যোধন দুঃশাসন পিতামহ ভিষ্ম দ্রোণাচার্য এবং বিশিষ্ট যোদ্ধারা দাঁড়িয়ে আছেন ; কিন্তু তারা সকলে সময়ের হাতের পুতুল হয়ে নিজেদের রথের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। শুধু তারা কেন হাজার হাজার সেনারা দুই তরফের ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে আছেন। বান্টু একটা স্পেশাল ক্যামেরা এনেছে এবং প্রমাণের জন্য খচাখচ ছবি তুলছে এই ক্যামেরা নাকি শুধুমাত্র টাইম ট্রাভেলের ছবি তোলার জন্যই তৈরি কারণ সাধারণ ক্যামেরায় নাকি এই ছবি ওঠে না।
হঠাৎ বান্টু সাইন্টিস্ট বলে উঠলো “ওই দেখ সেন্টু ওইদিকে দেখ “
তিনজনে মাঠের মাঝে তাকাল একটা রথ বেশ সুসজ্জিত মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে
“অর্জুন” বিস্ময়ের সাথে বলে উঠলো মন্টু।
” কিন্তু ও কি”? বললো সেন্টু
” বিরাট রুপ ” উত্তর দিল মন্টু
” কৃষ্ণ বিরাট রূপ ধারণ করছেন ” বলল মন্টু।
সে এক সত্যিই অবিশ্বাস্য ও বিস্ময়কর ব্যাপার “ওয়ান্ডারফুল” বলে উঠলো বান্টু সায়েন্টিস্ট।
শ্রীকৃষ্ণ বিরাট রূপের তিনজনের চোখ যেন ঝলসে গেল ; তিনজনার তাকাতে না পেরে যুধিষ্ঠিরের রথের পিছনে গিয়ে আশ্রয় নিল।
“বান্টু দা এখান থেকে ফিরবো কিভাবে??” জিজ্ঞেস করল মন্টু।
” চিন্তা নেই আবার এখান থেকে আমাদের জগতে ফিরতে হলে তিনজনকে একসঙ্গে সময় আর জায়গার নাম বললেই ফিরে যাওয়া যাবে… কিন্তু টাইম মেশিনের চলছে সবার আগেই করতে হবে… ( ঘড়ি দেখে ), আর মাত্র 30 মিনিট তারপর তেল শেষ ; যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। ” উত্তর দিলো বান্টু সাইন্টিস্ট।
ইতিমধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে চারিদিকে ঘোড়া হাতি সৈনিকরা দৌড়াচ্ছে মন্টু ইতিমধ্যে একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলল বেশি উত্তেজিত হয়ে গিয়ে সে দৌড়ে চলে গেল অর্জুনের রথের সামনে এবং দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে বলল ” রথ থামাও….রথ থামাও.. ” অদ্ভুত প্রকৃতির এক মানুষকে দেখে শ্রী কৃষ্ণ ও অর্জুন দুজনেই চমকে উঠলেন ; শ্রীকৃষ্ণ রত্না মালের মন্টু বলল
” আমি মন্টু আমি ভবিষ্যৎ থেকে এসেছি আমার কাছে বেশি সময় নেই তাই আমি চাই পর্যন্ত তুমি এই যুদ্ধ এখনি শেষ করে দাও সবাইকে একসঙ্গে মেরে ফেলে….. তার উপায় আছে….”
বলে মন্টু পকেট থেকে তার বাবার পিস্তলটা বের করল ” এই দেখো এইটা দিয়ে এখনই সব শেষ হয়ে যাবে দাঁড়াও আমি দেখাচ্ছি…..” বলেই সঙ্গে সঙ্গে সে আকাশের দিকে বন্দুক তাক করে পরপর ঢাই ঢাই শব্দ করে দুটো গুলি চললো আর তৎক্ষণাৎ অর্জুন জ্ঞান হারিয়ে যাওয়ার থেকে পালিয়ে গিয়ে পড়ে গেল।
সমস্ত ব্যাপারটা দূর থেকে বান্টু সাইন্টিস্ট লক্ষ্য করে পকেট থেকে একটা স্পেশাল রিমোট বার করে একটা বোতাম টিপে দিলো এবং তৎক্ষনাত সেন্টু , মন্টু এবং 523 জানে যে যেখানে ছিল এক সঙ্গে ভ্যানিশ হয়ে গেল এবং মুহূর্তের মধ্যে বর্তমানে ফিরে গেল।
” এটা কি হলো বান্টু দা আরে আমি ভাবলাম যুদ্ধটা শেষ দেখে আসব ” আক্ষেপের সাথে বললো মন্টু। ” কি হলো আমি বলছি ” বেশ রেগে গিয়ে বলল বান্টু সাইন্টিস্ট।
” সেন্টু ধর ব্যাটাকে ” বলল বান্টু সাইন্টিস্ট
সেদিন বান্টু সাইন্টিস্ট আর সেন্টুর কাছে যা মার খেয়েছিল মন্টু সেটা চিরজীবন মনে থাকবে তার ; অবশ্য মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের কি অবস্থা হয়েছিল এবং বাকিদের কি অবস্থা হয়েছিল এই ব্যাপারটা তিন জনের কেউই কোনদিন জানতে পারেনি হয়তো পারবেও না।
- সদ্যজাত বাচ্চাকে চুমু খাওয়া ঠিক নয়
- ঝকঝকে ও সুস্থ্য সুন্দর দাঁতের জন্য ঘরোয়া টিপস
- তৈমুর ও ইনাইয়ার হোলি খেলার ছবি শেয়ার করতেই কমেন্টের ঝাড় সোশ্যাল মিডিয়ায়
- এই একটি সংখ্যা ব্যবসায় শ্রীবৃদ্ধি আনবে
- সম্পর্ক দুটো শারীরের মধ্যে নয়, বরং মনের সাথে মনের
- চাউমিনের পায়েস