ভালবাসার বাংলা গল্প : মনোরমা দেবী সাদার ওপর হালকা বাসন্তী রঙের করিয়াল বেনারসি টা কোনো রকমে গায়ে জড়িয়ে নিয়েই ছুটলেন ঠাকুর ঘরে। নিখুঁত মানুষ তিনি, পরিপাটি করে কাজ করাটাই তার স্বভাব, কিন্তু তার আসে পাশের কাজের মানুষ গুলো এত মন্থর, কাজের নমুনা দেখেই তা বোঝা যায়। বেশ জোরেই হাক পারলেন তিনি, ও…ও তাপসীর মা, বরণ ডালায় কলার ছড়াটা কই? যে দিকে তাকাবো না, বলি সেই দিকেই গন্ডগোল !!!! ও মানু এই দিকে একবার আয় তো দেখি। মানু ছুটে আসে, গিন্নি মা এই যে গো কলার ছড়া, তাপসীর মা দিল, রাখলাম এখানে। আচ্ছা সবে তো সকাল নটা বাজে, বৌরানি আসতে তো এখনও ঘণ্টা দুই বাকি। মনোরমা দেবী একটু গম্ভীর গলায় বললেন, অত কথা না বলে দেখ গিয়ে সবাই জলখাবার খেলো কিনা?তাপসীর মা এক গ্লাস শরবত নিয়ে ভিতরে আসে, গিন্নি মা এটা খেয়ে নিন এ বাড়ির গিন্নি এক গাল হাসি নিয়ে গদগদ ভাবে বললেন, দাড়া দিখি বাপু, আগে আমার ঘরের লক্ষীর পা চৌকাঠে পড়ুক, ওর মিষ্টি মুখে একটু জল মিষ্টি তুলে দি, তারপরে তো আমার খাওয়া। শোন দুধ আলতার থালা টা তৈরি রাখিস, আমি ঘরে গেলাম, অনেক কাজ পরে আছে আমার।
বউ হয়ে এ বাড়িতে আসার আগেই শর্ত টা রেখেছিল উদিতা তার হবু শাশুড়ি মায়ের কাছে। বাড়ির দরজায় এসে যেনো তোমার মুখটা আগে দেখতে পাই, আর আমার বরণ তোমার হাতেই হবে। বিধবাদের ওসব আচার নিয়ম এ থাকতে নেই এসব যুক্তি মনোরমা দেবীর ধোপে টেকেনি। হ্যাঁ ঠিক তেমনটি হয়েছিল যেমন তার বৌমা চেয়েছিল। কিছুক্ষন আগেই নববধূর গাড়ির চাকা সদর দরজায় এসে দাঁড়ানোর সময়ে বরণডালা হাতে সহাস্য মুখে দাঁড়িয়ে ছিল নতুন বৌয়ের নতুন শাশুড়ি মা। রুপোর একটা ভারী চাবির গোছা বৌমার হতে দিয়ে চুমু খেয়ে বলেছেন, তোর হাতে সপে দিলাম সবটা, যেমন রাখবি আজ থেকে তেমন ভাবেই থাকবো। তুই যে আমার মা এর কাঠামোয়ে গড়া আমার মাতৃরূপিণী মেয়ে।
উদিতা স্নান সেরে ঘরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াল, ময়ুরকণ্ঠি রঙের সিল্কের শাড়িতে তার মুগের ডালের মত হলদে সোনালী গায়ের রং টা যেনো আরো উজ্জল দেখাচ্ছে, প্রশস্থ সিঁথিতে ভোরের নরম সূর্যের লালআভা। এত সুন্দর সে? নববধুদের কি আলাদা রূপ গজায়? প্রশ্ন টা করেই প্রতিবিম্বে হাসি দেখতে পেলো নিজের। বিয়ের ধকল, রাত জাগা, আজ আবার কলকাতা থেকে এতটা পথ আসা, সব মিলিয়ে শরীরে ক্লান্তি হলেও মন টা তার বেশ ফুরফুরে, স্ট্রেস কেবল শরীরকে অধিকার করতে পারে, মন কে নয়, এটাই তার পজেটিভ মাইন্ড এর একটা বিশেষ দিক। ধনী বলে নয়, শ্বশুরবাড়িটা তার বড্ডো পছন্দের। ভাগ্যকে অমান্য করার কোনো ক্ষমতা আজ উদিতা রায়ের নেই, বেশ মানে সে কথা টা।
…………..”কি রে দিদিভাই তোর এখনও হলো না”, দরজার বাইরে রিনির গলা, উদিতা ছুটে গিয়ে দরজা খোলে, জড়িয়ে ধরে মামাতো বোনকে, এই মামার বাড়ি এসেই তো এতকিছু অদলবদল হলো তার জীবনে। রিনি লাফিয়ে ওঠে, তোকে তো ফাটাফাটি লাগছে রে দিদিভাই। তবে তুই যতটা সুন্দর, ততটাই সাহসী। তুই বলেই এই বাড়িতে বিয়ের সানাই বাজালী, উদিতা রিনির হাত টা ধরে ঘরে নিয়ে আসে, দেখতো এই সাদা ব্রা টা কি বড্ডো ফুটে উঠেছে সবুজ ব্লাউজ টায়? কি দারুন কনট্রাস্ট করেছিস রে ! পার্থদার মাথা টা কি তুই আর ঠিক থাকতে দিবি না, ফুলসজ্জা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারলে হয় বেচারা। উদিতার লাজুক হাসি ঠোঁটের কোণে বহু চেষ্টায় চেপে চোখ পাকিয়ে বলে বড্ড পেকেছো তুমি। দেবো কানটা মুলে ? “যা বাবা যেটা মনে এলো সেটাই তো বললাম “- খিল খিল করে রিনি বলে ওঠে। এবার খেতে চল, নিচে ডাকছে সবাই । তুই যা, গিয়ে বল আমি আসছি। বলেই দরজাটা আবার বন্ধ করে দেয়।
উদিতা নিজেও জানে না কেনো সে হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে রিসার্চ করার জন্য এই গ্রাম টাকেই বেছে নিয়ে ছিল, ঘটনাক্রমে এখানে তার মায়ের কোনো এক দুর সম্পর্কের ভাই এর বাড়ি, তারই মেয়ে এই রিনি, যেমন মিস্টি, তেমনি ওর রিনরিনে গলার স্বর। খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছিল তারা।তবে ছোট্ট রিনি সবসময় কিসের ভয়ে যে তাকে আগলে রাখতো, কেনো বারবার বলত কাজ শেষ করেই যেনো সে এক মুহুর্ত বাইরে না থাকে, অবাক লাগলেও রাগ করিনি কখনো, কলকাতা আর গ্রামের মধ্যে একটা নিজস্ব পার্থক্য তো থাকবেই। তবে কিছু দিন যেতে যেতে সে লক্ষ্য করতো একটা ছেলে তাকে ফলো করছে, তার দৃষ্টিটা কেমন যেনো অদ্ভূত, তেজ ও আছে আবার শীতল। ও চিরকালই চোখ পড়ার ব্যাপারে দূরদর্শী সে নিজেও জানে সেটা। তাই জীবনে ভুলের সন্মুখীন কম হতে হয়েছে তাকে। এই গ্রামে মেয়েদের দুর্দশা তাকে খুব কষ্ট দিত, শিক্ষার আলো এখনও ওদের স্পর্শ করতে পারেনি। শিক্ষাটাকে সবার ভিতরে সে পৌঁছে দেবে এটাই ওর চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। সেই মত সে এগোতে থাকে, নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি। আর এই সব করতে গিয়েই আরো বিশেষ করে ওই ছেলেটার টার্গেট হতে থাকে। রিনির সামনেই একদিন ছেলে টা খুব বাজে ভাবে ইঙ্গিত করে উদিতা কে, রিনি কোনরকমে তার হাত টা টানতে টানতে ঘরে নিয়ে চলে আসে আর তারপরই রিনি তাকে সব কিছু বলে ফেলেছিল ভয় পেয়ে —-
ছেলেটার নাম পার্থ। নিজের সুন্দর চেহারা কে কাজে লাগিয়ে মেয়েদের প্রেমের জালে ফেলে তাকে নষ্ট করা টাকে খেলা ভাবে, এরকম অনেকের সাথেই সে করেছে, কিছু দিন আগে রিনির বান্ধবী সাথেও একই কাজ করে। কোনরকমে নখের আঁচর আর দাতেঁর কামড় দিয়ে পালিয়ে বাঁচে। প্রশাসন কিছুই করতে পারেনি এতদিনেও, কারণ তার বিরুদ্ধে কোনো মেয়েরা বা তার বাড়ির লোক এফ-আই-আর করার সাহস দেখায় না, তার পরিবর্তে বাবারা মেয়েকে দূরে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়াকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। সেই দিন সারারাত দিদিভাই ঘুমাইনি, সেটা রিনি বেশ বুঝতে পেরেছিল, তাই হয়ত মধ্যরাতে তার গায়ে হাত রেখে বলেছিল, চিন্তা করিস না দিদিভাই, আমি আছি তোর সাথে। আর নিমেষের মধ্যে এই কথাটাই যাদু ক্রিয়েট করেছিল উদিতার মনে।
আরও পড়ুন – কেন আমাদের এতো কষ্ট ? কেন আমরা এই জীবন পেয়েছি ?
পরের দিন খুব ভোরে একটা বেশ বড়ো বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় উদিতা। জীর্ণ, রংহীন, প্রাণহীন বাড়িটা যেনো প্রাসাদসম হয়েও হাহাকার করছে।সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় তার নিজের জুতোর হিলের শব্দটা কানে বেতের মত লাগছিল। অনেক ঘর কোথায় যাবে বুঝতে না পেরে এগোতে যাবে এমন সময় চোখে পরে দুধ সাদা চাদরের বিছানায় একজন মধ্যবয়স্কো মহিলা আধসোয়া অবস্থায় অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে কি যেনো ভাবনায় ডুবে আছে, সে একটু সাহস করেই এগিয়ে গিয়ে বলেছিল…. আস্তে পারি? ভদ্র মহিলা চিনতে না পেরে একটু অবাক ভাবেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন… কে? নমস্কার, আমি উদিতা রায়, পি এইচ ডি করছি, এই গ্রামে এসেছি সার্ভে করতে। ভদ্রমহিলা খুব নম্র ভাবে বলেছিল ভিতরে এসো।
নভেম্বরের শেষের দিক, বেশ ঠাণ্ডা পরে গেছে গ্রামে। গ্রাম থেকে কুড়ি পঁচিশ কিলোমিটার দূরে একটা লাইব্রেরী আছে, গুগুলে দেখেছিল, সেখানে গিয়ে বই থেকে কিছু নোটস কপি করে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছিলো। আচমকা পিছন থেকে হাত টা কে যেনো এক নিমেষে হ্যাঁচকা দিয়ে টেনে মুখটা রুমাল দিয়ে চেপে ধরেছিল উদিতার, চোখের সামনে সবটাই তখন ধোয়া তার, শুধু মুখ থেকে গোগানি ছাড়া আর কোনো শব্দ হচ্ছিল না। মাটিতে ফেলে যখন তাকে ছিন্ন ভিন্ন করতে যাবে, চরম ঘটনাটা ঘটার মুহূর্তেই প্রচন্ড ছোটাছুটি আর চিৎকার তার মধ্যে থেকেই একটা চিৎকার ক্ষীণ ভাবে কানে ভেসে আসে, পার্থ দাদাকে কোথাও দেখেছো ? বাড়িতে অঘটন ঘটে গেছে, আর তাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। ওদিকে রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা বারান্দা। পার্থ ধড়পড় করে যখন উঠে দাড়িয়েছিল রাস্তার এসে পড়া দূরের একটা ল্যাম্প পোস্টের আলোয় উদিতা এক ঝলক ছেলেটার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো ছেলেটার সারা মুখটাতে কালির ছোপ ছোপ। উদিতা যাতে চিনতে না পারে তাই মুখোশ ধারণ করে এসেছিল ছেলেটা, কিন্তু সে যে চোখ দেখে মানুষের মুখ চিনে নিতে পারে, সেটা কি আর এই ছেলেটার জানার কথা? উদিতাও বিপদের আভাস পেয়ে থাকতে না পেরে ছুটে ছিল পার্থর পিছু পিছু।
পার্থ যখন বাড়ি পৌঁছালো ওর মায়ের নিম্নাঙ্গ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। কাপড়টা বেশ খানিকটা উঠে আছে, যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্তের স্রোত। উদিতা পার্থর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, ডাক্তার আজ জেলা হসপিটাল গেছে আসতে বেশ খানিক ক্ষণ সময় লাগবে, একটা বেঁটে মত লোক কাঁদতে কাঁদতে পার্থকে কথাটা বলছে, এদিকে পার্থ একদম পাথরের মত দাঁড়িয়ে। উদিতা আর থাকতে না পেরে সবাইকে ওখান থেকে শরতে বলে, তারপর কাপড়ের ভিতর দিয়ে তার নিম্নাঙ্গে ফুটে থাকা কাঁচের বড় বড় টুকরো গুলোকে টেনে বের করা শুরু করে দিয়েছিলো ততক্ষনে। কেমন যেনো দুঃসাহসী ভাবেই সে কাজটা করছিলো, ঠিক সেই সময় ঈশ্বর এর অশেষ কৃপায় ডাক্তার এসে পৌঁছে ছিল। ভদ্র মহিলাকে ভিতরের ঘরে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে ডাক্তার এক মিনিটও আর দেরি করেনি। বাইরে এসে উদিতার মাথায় হাত রেখে ডাক্তার বাবু বলেছিলেন, মেয়েরা সব পারে মা। কাঁচের টুকরো গুলো বের করতে বেশি সময় লাগলে ওনাকে বাঁচানো যেত না। এমনিতেও প্রচুর রক্ত বেরিয়ে গেছে। পার্থ যত তাড়াতাড়ি পারো মা কে নিয়ে হসপিটাল এ চলে যাও, কিছু বোতল রক্ত এখুনি ওনার শরীরে খুব প্রয়োজন। উদিতার চোখে তখন তার বাবার মুখটাই বারবার আসছিল, তার ডাক্তার বাবা তাকে ফাস্ট এইড, ইনজেক্ট করা, সেলাইন দেওয়া এগুলো বেশ হাতে ধরে শিখিয়েছে, মনে মনে বাবাকে ধন্যবাদ দিতে একটুও সময় নেয়নি উদিতা।
এ বি পজেটিভ রক্ত হসপিটালের ব্লাড ব্যাংক এ পাওয়া যায়নি, সৌভাগ্যবশত রিনির রক্তের গ্রুপ টা ম্যাচ করেছিল। পাশে দাঁড়িয়ে ভদ্রমহিলার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছে উদিতা। ইনি যে এরকম একটা সাংঘাতিক কাজ করে ফেলবেন সেটা তো ও স্বপ্নেও ভাবেনি।
উদিতা যেদিন প্রথম যায়……. ভদ্রমহিলার সাথে দেখা করতে সেদিন নম্র, ভদ্র, মার্জিত মানুষটা উদিতা কে ভেতরে ডেকে পাশে বসিয়ে চাপা স্বরে জিজ্ঞাসা করেছিলো বলো কি দরকার তোমার? উদিতা কোনো ভাবেই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সরাসরি বলে বসেছিল দরকারটা একা আমার নয় আপনারও আবার বলতে পারেন গোটা সমাজের। উদিতার কণ্ঠে তখন আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ছে। আপনার ছেলের কাছে যে কোনো নারী শুধু মাত্র ভগ্যবস্তু, মেয়েদের সন্মান নিয়ে উনি মজা করে যাচ্ছে দিনের পর দিন, কখনো তাদের প্রেমের জালে জড়িয়ে, কখনো আবার জোর করে। খুব খারাপ শুনতে লাগলেও বিনা সম্মতিতে বা মিথ্যে বলে কোনো মেয়ের শরীর স্পর্শ যে করে পরিষ্কার ভাষায় তাকে রেপিস্ট বলে। অনর্গল কথা গুলো বলে গেলো উদিতা। ভদ্রমহিলা তার হাত দুটো ধরে বলেছিলেন, মা হয়ে ছেলের আচরণে প্রতিমুহূর্তে আমার মৃত্যু হয়। নিজের পেটের সন্তানই যদি মা এর শত্রু হয় তাহলে পুরো পৃথিবী তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমি চাই ওর শাস্তি হোক, ঈশ্বর ওকে কঠিন শাস্তি দিক। উদিতার চোখ চিকচিক করছিল ওনার ধরাগলার কান্না দেখে। নিজেকে সামলে ও বলেছিল শাস্তি শুধু শরীরের হয় না, মনেরও হয়, মানুষের মনের গহন আমার গবেষণার বিষয়, যদি একটু ভরসা করেন আমার ওপর মানে যদি দুজন দুজন কে একটু সাহায্য করি মীরাকেল হলেও হতে পারে।
কি করতে হবে আমায়? বড্ড কঠিন হয়ে বলেছিলেন মনোরমা দেবী। উদিতা এক মিনিট বলে উঠে দাড়িয়ে দরজা, জানলাটা বন্ধ করে এসে তার দিকে খানিকটা এগিয়ে বসে, মৃদু গলায় কথা গুলো বলা শুরু করে……..। সব সন্তানের কাছেই মা খুব সেনসেটিভ, তারা সব মেনে নিলেও, মা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এটা ঠিক হজম করতে পারে না, ওই ওটাকেই আপনাকে কাজে লাগাতে হবে। নারীদের যোনি কোনো পুরুষেরই শুধু উপভোগের মাধ্যম নয়, এটা সেই পবিত্র স্থান, যা দিয়ে সৃষ্টির সূচনা হয়, নতুন প্রাণ আসে পৃথিবীর বুকে। কতো কষ্ট করে মেয়েরা মা ডাক শুনতে পায়। উনি যদি একবার দেখেন আপনার সেই জায়গাটা কোনো ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আপনার দেহের রক্ত, আর্তনাদ ওর ভিতরটাকে ক্ষত বিক্ষত্ করে দিতে পারলেই……… ব্যাস। জানি কাজ টা সহজ নয়, আর আপনি অ্যাকট্রেসও নন, আবার রিস্ক ও আছে। তবে মায়েরা তো সব পারে। চিন্তা করবেন না প্ল্যানটা আমি সেভাবেই করবো যাতে সাপ ও মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে মানে একটা ফলস অ্যাকসিডেন্ট আর কি ! যেকোনো ভাবে হোক আমি আপনার ছেলের কান পর্যন্ত পৌঁছে দোবো সেদিন আমার দেরি করে বাড়ি ফেরার খবরটা। যাতে উনি আমায় অ্যাটাক করার সুযোগটা পান। সময় মত সুযোগ এর ব্যাবহার যদি করে ফেলতে পারি মন বলছে ভালো কিছু হবেই হবে। সেদিন অবশ্য আপনার ছেলের পিছু পিছু আমিও আসবো, কারণ এই ড্রামার অভিনেত্রী তো আমরা দুজন, বলেই একটু হেসে দিয়েছিল উদিতা। মধবয়স্কো ভদ্রমহিলা কেমন শিশুর মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। উদিতা থাকতে না পেরে বলে ফেলেছিল, বিশ্বাস করুন আপনার ছেলের দুষ্কর্ম এতদিন যা লজ্জায় ফেলেছে আপনাকে, এ লজ্জা তার থেকে অনেক কম। উনি সেদিন উদিতাকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, জয়ী হোক তোমার অসীম সাহস আর মনের জোর মা।
খুব সুন্দর করে অ্যাকসিডেন্ট টা প্ল্যান করেছিল উদিতা। কৃত্রিম রক্ত ভরা বেলুন, যা নিজে হাতে কিভাবে সেট করতে হবে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছিল ওনাকে, সেটা কে ব্যাবহার না করে হঠাৎ কেনো যে উনি এরকম সত্যি সত্যি একটা মারাত্মক অ্যাকসিডেন্ট ঘটিয়ে বসলেন এটাই হসপিটাল এ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেবেও কুল পাচ্ছিল না উদিতা। নার্স পিছন থেকে এসে বললো, দিদি পেশেন্ট পার্থ অধিকারীর বাড়ির লোক কি আপনি? উদিতা একটু চমকে উঠল, হ্যাঁ, কেনো পার্থ বাবু ঠিক আছেন তো? নার্স মেডিসিন গুলো লিস্ট এর সাথে মিলিয়ে নিতে নিতে বলল, সব ঠিক আছে, ওনার জ্ঞান ফিরতেই উনি ওনার মা এর কথা জানতে চাইছেন। উদিতা নিজের চারপাশে একটা পজেটিভ ফিল পেলো। নার্স বেরিয়ে গেলো ওর পিছু পিছু উদিতাও। পার্থকে অক্সিজেন দেওয়া আছে, নিজের মা কে ওই অবস্থায় দেখে সেন্সলেস হয়েগেছিল, দম নিতে অসুবিধার কারণে অক্সিজেন দেওয়া হয় ওনাকে। উদিতা পার্থর বেড এর সামনে আসতেই পার্থ ছটপট করে উঠে বসার চেষ্টা করে, সাথে কিছু বলারও, উদিতা হাত আর চোখের ইশারায় শান্ত করে, জানায় যে তার মা সম্পূর্ণ বিপদ মুক্ত। পার্থর মুখের হাসিটা অক্সিজেন মাস্ক এর ভিতর দিয়েও স্পষ্ট দেখতে পায় উদিতা।
ইনস্টাগ্রাম থেকে ঘরে বসে নিশ্চিত টাকা আয় করবেন কিভাবে
বেশ কিছুদিন হলো উদিতার মন টা বেশ হালকা, দুজনেই সুস্থ্য হয়ে বাড়ী ফিরে গেছে। তাকেও কলকাতার বাড়ীতে ফিরতে হবে, এখানকার কাজ প্রায় কমপ্লিট। গ্রামের মেয়েদের শিক্ষার দিকের কাজেও বেশ অনেকটা সাকসেসফুল উদিতা ইতিমধ্যেই। বাড়ি ফিরেই থিসিস জমা দেওয়া, পরীক্ষা সব একদম ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে। একটু একটু করে সব জিনিসপত্র গোছানোর কাজে ব্যাস্ত সে। রিনিকেও সঙ্গে নিয়ে যাবে কয়েকদিন এর জন্য, রিনির মন খারাপ ভালো করার এটাই একমাত্র ওষুধ।
হাঁপাতে হাঁপাতে ঘরে ঢোকে রিনি, দিদি ভাই পার্থ দা এসেছে, তোকে ডাকছে। এমা বাইরে কেনো ভিতরে আসতে বল, বলতে বলতে নিজেই বাইরে বেরিয়ে আসে। এক গাল মিষ্টি হেসে ভিতরে নিয়ে আসে। পার্থর লজ্জিত চোখ সরাসরি উদিতার দিকে তাকাতে পারছে না, বুদ্ধিমতী উদিতার বুঝতে সমস্যা হয়নি সেটা, তাই সে নিজেই একটু সহজ হওয়ার চেষ্টা করলো, আপনাকে দেখে তো বেশ ফিট মনে হচ্ছে, মাসিমা ভালো আছেন তো? আর অন্য কোনো সমস্যা হোয়নি? পার্থ মাথা টা ঝাঁকিয়ে না বলে, উদিতার দিকে তাকায়, কি স্নিগ্ধ মেয়েটার মুখটা, উজ্জ্বল চাউনি মুখের থেকেও বেশি কথা বলে চোখ দুটো, কিছুক্ষন চেয়ে থাকলে নেশাধরে যাবে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। মা আপনাকে ডেকেছে, পারলে আজই মা এর সাথে একবার দেখা করে আসবেন।
আসি ?
উদিতা মিষ্টি হেসে সম্মতি জানায়।
এই কদিনেই বড্ড নিজের করে নিয়েছে ওকে মনিমা, হ্যাঁ সেদিন যখন হসপিটাল থেকে ছুটি দিয়েছি, সেদিনই বেড থেকে নামার সময় উনি উদিতার কাঁধে ভর দিয়েই নিজে মুখেই বলেছিলেন “আমায় মণিমা বলে ডাকিস কেমন” আর শোন বাপু ওইসব তুমি, আপনি আমার দ্বারা হয় না, পেটে ধরা মেয়েও এমন করতে পারতো কিনা জানিনা, যেটা তুই করলি। অনেক প্রশ্নের ঝড় তখন উদিতার মনে, ভীষণ ছটপট করছিল, মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মনিমাই বলতে শুরু করলো…..
তোর বলে যাওয়া কথা গুলো মাথায় ঘুরছিল, নাটকটা ঠিক আমার আসে না জানিস কোনোদিন, কিন্তু তোকে বিশ্বাস করতে ও ভীষণ ইচ্ছা করছিল।ছেলেকে ফেরাতে মায়েরা কত কিছু করে, আর আমি কেনো পারবো না ? কেনো জানি না জেদ চাপতে থাকল মাথার ওপরে, ছেলের কুকীর্তি গুলো চোখের সামনে আয়নার মত ভেসে উঠতো যখন মাথাটা কেমন যেনো টলতে থাকতো। যেদিন তুই এক্সিডেন্ট টা প্ল্যান করে ঘটাবি বলেছিলি, ভিতরে ভিতরে সকাল থেকে আমার কেমন পাগলের মতো লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো তোর কোথায় সেদিন রাজি হয়ে এভাবে তোর জীবন টাকে বিপদের সামনে দাঁর করিয়ে দিয়ে খুব ভুল করেছি। যদি বেফাঁস কিছু হয়ে যায়, না যদি পারি সব কিছু সামলাতে তাহলে ? কি ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে তোর ! নিজেকে খুব অসহায় লাগছিলো, পা টলছিল, মাথায় আগুন জ্বলছিল। হঠাৎ শুনতে পেলাম পার্থ তারস্বরে চিৎকার করছে, উল্লাস মত্ত যেন বিশ্ব জয়ের আনন্দ ওর মনে। বুঝতে অসুবিধা হয়নি তোর দেরি করে ফেরার খবরে ওর কানে পৌঁছে গেছে। মদের নেশায়চুড়, মাথায় রক্ত চেপে গেলো, চিৎকারটা ওর ঘর থেকেই আসছিল, কেমন বিভ্রান্তের মতো ছুটে গেলাম ওর ঘরে, দেখি সারি দিয়ে রাখা মদের বোতল গুলো থেকে একটা বোতল তুলে গলায় ঢালছে, কোনো কথা না বলে ঠাটিয়ে গালে একটা চড়। ঠিক করে নিলাম আজ ওর বাইরে যাওয়া আটকাতেই হবে। কোনইভাবেই ওকে তোর কাছ পযন্ত পৌঁছাতে দেবো না আমি। প্রয়োজনে শেষ করে দেবো নিজের ছেলেকে। রাগের মাথায় বলেই ফেলাম “মর তুই মর, সেটা দেখে একটু বাঁচি আমি”, আরো অনেক কথা যা আজ মনে রাখতে চাই না, মুখে যা এসেছে বলে গেছি, কোনো দিন ওর গায়ে হাত তুলিনি, সেটাই বোধহয় ওকে বেশি অবাক করেছিল। ও কি আর কম যায় ! পাগলের মত আচরণ শুরু করলো চিৎকার করতে করতে, ঘরের জিনিস একটাও আস্ত রাখেনি, ওর দাদুর আমলের ঝাড়বাতিটা চুরমার করে ভেঙে দিল, নিজের গালে নিজেই সপাটে মারছিল, মদের বোতল গুলো ভেঙে চুরমার করে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যাছিলো, আমি ওকে টেনে ধরে ঘরে আনছিলাম আমার সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে। কিন্তু পারলাম না। আমায় ছিটকে ফেলে বেরিয়ে গেলো। মরে যেতে ইচ্ছা করছিল, খুব বেশি কষ্ট হলে যেমন মানুষ পাথরে পরিণত হয়, আমারও চোখে জল ছিলনা একফোঁটাও, গলা ফাটা চিৎকার বেরিয়ে আসছিল ভিতর থেকে, চোখের সামনে শুধু তোর প্রাণবন্ত মুখটা ভাসছিলো, মাথাটা ঘুরে গেলো ধপ করে বসে পরলাম ভাঙ্গা কাঁচের ওপরেই, বোতলের টুকরো, কাঁচের ঝাড়বাতির ওপরেই তখন আমার স্বরসজ্জা। নিম্নাঙ্গে রক্তের স্রোত, ঠাকুরকে ডাক ছিলাম শুধু তোর জন্য, যন্ত্রণায় চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তারপর আর কিছু মনে নেই, যখন চোখ চাইলাম সামনে তোকে পেয়েছিলাম। কিছু বলার মতো অবস্থায় সেদিন ছিলাম না। তোর চলে যাওয়ার পর একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। জানিস আমার অবাক হওয়ার আরো অনেকটা বাকি ছিল, কে যেনো একটা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বুঝতে পারছি কিন্তু আরামে চোখ দুটো খুলছে না, হাতের স্পর্শটা আমার আজন্মের চেনা। প্রথম তাকিয়ে একটা অবয়বকে দেখছিলাম, শুকনো মুখ, হসপিটাল এর পোশাক, হাতে সেলাইন এর চ্যানেল। আমি তাকাতেই বলে উঠলো খুব কষ্ট হচ্ছে না মা তোমার? বলেই পাগলের মত কাদতেঁ শুরু করলো আমায় জড়িয়ে ধরে, হঠাৎ করেই ওর ছোটবেলাটা আমার হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিল। শুধু চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছিলাম অনুভূতি টা। সেই মুহূর্ত থেকেই পাল্টে গেলো আমার পৃথিবী। তোর কথাটাই কানে বেজে উঠলো, মায়েরা সব পারে, তার সন্তানের জন্য……সবব..ব.. ব..। উদিতার মনি দুটো দিয়ে ফোঁটার পর ফোঁটা অঝোরে ঝরছে, নোনতা পানীয়।
মনিমা কে বাড়িতে দিয়ে ফেরার পথে পার্থ যেচেই বলেছিল, আমি কি দু একটা পা হাঁটতে পারি আপনার সাথে, ওই আপনার বাড়ি পর্যন্ত আরকি। উদিতা একগাল হেসে ছিল শুধু, আর তাতেই পার্থর বুকের ভিতর টা কেমন ধড়াস করে উঠেছিল, এরকম কেনো হলো এ প্রশ্নের উত্তর কার কাছে চাইবে? নিজের মনের অভিব্যাক্তি গুলো কত অজানা নিজের কাছে ! তাহলে কি সে প্রেম পড়েছে ? না অত ভাবতে পারছে না পার্থ, এবার পাগল পাগল লাগছে।এত কিছু কল্পনা করতে গিয়ে হা করে তাকিয়ে ছিল উদিতার দিকে, কেনো জানিনা উদিতা ও নির্বাক ভাবে মিষ্টি মিষ্টি হেসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো।কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পার্থ একটু নির্জন রাস্তা দেখে দাড়াতে বলে উদিতাকে, কিছু বলবেন ? এত অস্থির হয়ে আছেন তাই জিজ্ঞাসা করলাম। আসলে আমি অত রাখ ঢাক করে কথা বলতে পারি না, যেটা বুজলাম সেটাই বলে দিলাম।
‘জানি, তুমি খুব ভালো ফেস রিডার, কিছু লুকানো যায় না তোমার থেকে, আর আমি সেটার চেষ্টাও করবো না। আমায় ক্ষমা করতে পারবে উদিতা ?সব কিছুর জন্য, সব কিছু, যেটা তোমার জানা সেটার জন্যও, আর যেটা জানো না সেটার জন্যেও। আমি ভালো নেই বিশ্বাস করো, যখন অমানুষ এর মত বাঁচতাম, তখন এত মনের উথাল পাথাল ছিলনা, এখন যেনো কতকিছু বলে যায় ভিতর থেকে কে একটা ! মূর্খ মানুষ অত মাথায় ঢোকে না। তুমি বড্ডো ভালো উদিতা, আর আমি একটা পাপী। সব কিছু ভুলে ক্ষমা পেতে পারি না আমি তোমার কাছে? পার্থ হাত দুটো জোর করে বলে….. ছেলে তো চোখে জল আসতে দিতে নেই, কিন্তু আমার ভিতরটা যদি দেখাতে পারতাম !’ উদিতা হাত দুটো আকস্মিক ধরে পার্থর, প্লিজ এভাবে বলবেন না, মানুষ অমানুষ বিচার করার আমি কে ? আপনার ভিতরের বিবেকটা আয়নার মত প্রকট আজ আপনার সামনে, সব কিছু স্বচ্ছ করে দিয়েছে। আমি খারাপের থেকেও ভালো টা খুঁজে নিতে পারি, হুমম এটাই আমি, অনেক টা দেরি করে ফেললাম, এবার যেতে হবে, আর একটা কথা আমি পাপ কে ঘৃণা করি, পাপী কে নয়। আত্মগ্লানি বিষম বস্তু। ওটা দিয়েই যেমন নিজেকে মাটির ডেলা বানানো যায় আর সেখান থেকে যেমন ইচ্ছা ছাঁচে ফেলে নিজেকে সোনা করে নেওয়া যায়। আপনি বুদ্ধিমান। বিবেক দর্শন জীবনে সবার হয় না, যার জন্মদাত্রী স্বয়ং দেবীমূর্তি তার ছেলে হয়ে পাপের হিসাব নাই বা করলেন। মনে হয় আপনার মনের দ্বন্দ্ব কিছুটা হলেও মেটাতে পেরেছি। আসি……।
শুরু টা কিভাবে হয়েছিল প্রেমের, পার্থ বা উদিতা দুজনের কাছেই সমান্তরাল কোনো ব্যাখ্যা নেই। পার্থ বলে প্রেম করিনি বরং ভালোবেসেছি, ওর কাছে প্রেম করা আর ভালোবাসার মধ্যে যোজন পার্থক্য। উদিতা আবার সংজ্ঞাহীন ভালোবাসাতে বিশ্বাসী। শুধু পার্থকে ভালোবেসে নিজ গুনে সব কিছুকে আপন করেছিল, আর পার্থ সে তো কি একটা মন্ত্রবলে উদিতার ছত্রছায়াতেই নিজের অস্থানা বানিয়ে নিয়েছিল।
রিনির ডেকে আসার অনেকটা সময় পরেও যখন উদিতা নিচে আসে না, মনোরমা দেবী নিজেই চলে আসে তার সোনা মা কে ডাকতে।
শাশুড়ি মা এসে দাঁড়িয়েছে ওর পাশে সেটা বুঝতেই পারিনি উদিতা, “সোনা মা” ডাকটাতেই ও ভাবের স্রোত থেকে বাস্তবের কিনারায় পা রাখলো। উঠেই ঝটকা মেরে জড়িয়ে ধরলো শাশুড়ি মা কে।
…………কি যে ভালো লাগে মণিমা তোমায় জড়িয়ে ধরে থাকতে, তোমার গায়ের একটা মিষ্টি সুগন্ধ আমাকে অবশ করে দেয় ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না।
মা মেয়ে তো এমনই হয়রে ।
তাই বুঝি ? ছোট বেলায় মা কে হারানো মেয়েটা সত্যি এতদিন জানতনা মায়ের গায়ের গন্ধ ! কপালে একটা চুমু দিয়ে উদিতা কে বলে…..নে এবার খাবি চল পাগলী, অনেক বেলা হয়েছে। আজ থেকে আমরা একসাথে খাবো।
বৌভাতে বিশাল আয়োজন, মস্ত আলোর সজ্জায় ঝলমলে বাড়ি, এলাহী খাওয়া দাওয়া, প্রচুর উপহার, কলকাতার একান্নবর্তী পরিবার এসে দেখে গেছে ওদের মেয়েকে। বাবা তো খুশিতে বলেই ফেললো…. বাবার রাজকন্যা থেকে তুই আজ রাজরানী হলি।
বৌভাতের রাতটার যে একটা সুন্দর নাম হয় ফুলসজ্জা। আজ তোমার ফুলসজ্জা উদিতা। নিজেকে বলে নিজেই হেসে কুটোকুটি খেতে থাকলো।
দুতলার ঘরের বড়ো বড় জানলা গুলো কে খুলে রেখেছে, দক্ষিণে হওয়ায় রজনীগন্ধার ঘ্রাণের ঘোরে মাতাল হওয়ার উপক্রম উদিতার আজ।মোমবাতির নরম আলো পুড়িয়ে দিচ্ছে ওর প্রতিটি লোমকূপ, জলে গোলাপের ভাসমান পাপড়ি গুলোর সাথে একইসাথে দুলছে উদিতার শরীরের জলতরঙ্গ। সুখতারা আর চাঁদ জোড়ায় হাজির হয়েছে আজ উদিতা কে শুভেচ্ছা জানাতে। এমন মুহূর্ত উপভোগ এর আগে কখনো হয়নি ওর। উদিতার সজ্জা আজ ফুলেমোড়া। আজ ও মনে প্রাণে চাইছে একটা দীর্ঘায়িত রাত…… যা শেষ হয়েও শেষ হবে না। পার্থর প্রতীক্ষা উদিতা কে লাজবন্তি করে তুলেছে প্রতিক্ষনে —
হঠাৎ দরজায় টোকা, সঙ্গে পুরুষালি কণ্ঠস্বর……. ভিতরে আসতে পারি ?
সুখেনুভূতি অবশ্যই রোমাঞ্চকর তবে সেটা আগাপোষতলা সম্মানেরও হয় এটা নতুন জানলো উদিতা। চোখ দুটো লজ্জায় বুজে এলো ওর। আস্তে করে গলা দিয়ে কোনো রকমে “এসো” শব্দ টুকুই বার করতে পারলো। পার্থর নিঃশব্দে দরজা খুলে ঢোকা মাত্রই উদিতা চোখ খুলে পার্থর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো……….. যে ছেলেটা নিজের ঘরে আসার জন্য অর্ধাঙ্গিনীর অনুমতির অপেক্ষা করে তার কাছে নিজের সবটা বিলিয়ে দিতে আজ সে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
Writer – Aliviya Dey Modak
copyright reserved
- রিয়েলিটি শোর সিঙ্গার। Lyricist Goutam Susmit। Bangla Podcast Glass of Gossips
- শক্তি আরাধনা উপলক্ষে মানব সেবা
- বহুরূপী Bangla Film Review by Sujoya Ray
- বিভিন্ন শোতে ডাকা হয় না। Music Director Ashok Bhadra। Khobor Dobor Video
- Easy Steps To Write An Essay
- Bangla Natok Review : বাংলা নাটক “মারীচ সংবাদ” রিভিউ – কলমে সুজয়া