Amta Gramin Hospital: ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের স্বপ্নপ্রসূত আমতা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র বিগত ১২-১৫ বছর আগে দূর্ণীতির আখড়া হয়ে উঠেছিল। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে খাতা-কলমে ৪ জন চিকিৎসক থাকলেও তাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাওয়া যেত না। চিকিৎসকরা ব্যস্ত থাকতো স্থানীয় কোনো পলিক্লিনিকে,নাসিং হোমে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে।স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পুকুরের মাছ চাষ করে সেই মাছ দুষ্কৃতকারীরা বিক্রি করত।স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে কোনো টাকা দিত না।স্বাস্ব্য কেন্দ্র জঞ্জাল ও আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কোনো বেড ছিল না। শরীর খারাপ হলে রোগী ও রোগীর আত্নীয় স্বজনেরা এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসতে ভয় পেত। ৪ একর নিয়ে গঠিত এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধিকাংশ জায়গা দখল হয়ে গিয়েছিল।পোড়ো ভুতুড়ে বাড়ি , জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল।চোলাই মদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। হয়েগিয়েছিল অটো- টোটো, রিক্সা স্ট্যান্ড।
এই গ্ৰামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল ছিল আমতা, জয়পুর, উদয়নারায়ণপুর সহ পার্শ্ববর্তী জেলা হুগলিবাসিরা। ২০১১ সালে বিধান সভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য ডাঃ নির্মল মাজী উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়ে আমতাবাসীদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি বিধায়ক হলে আমতা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বেহাল দশা ফিরিয়ে দেবেন। ২০১১,২০১৬,২০২১ সালে এই উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্র থেকে পরপরই ৩ বার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে ৩ বারই বিধায়ক হন। ২০১১ সালে এই উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হিসাবে জয়ী হয়ে ডাঃ নির্মল মাজী জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে আমতা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের হাল ফেরানোর জন্য সচেষ্ট হন।
তিনি এই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গা পরিমাপ করে জবর দখল হওয়া জায়গা উদ্ধার করে চর্তুসীমায় সুদৃশ্য ২ টি প্রবেশ তোরণ তৈরী সহ প্রাচীর নির্মাণ করেন।স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পুকুরটি দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে পুকুরের চার পাশে পার্ক তৈরী করেন। পুকুরে মাছ চাষ করে তার বিক্রিত অর্থ হাসপাতাল উন্নয়নে কাজে লাগান। জরাজীর্ণ বিল্ডিং গুলির আমূল সংস্কার সহ নতুন বিল্ডিং তৈরী করেন।ধাপে ধাপে ১০,৪০,৮০,১২০,১৪০ বেডের করেন। এরপর আমতা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে উন্নিত করে আমতা গ্ৰামীণ হাসপাতালে উন্নিত করেন। তৈরী হয় দ্বিতল বিল্ডিং। নানান চিকিৎসা পরিষেবা শুরু হয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে। বর্তমানে এই গ্ৰামীণ হাসপাতালে ৩৫০ টি বেড আছে।
ডাঃ নির্মল মাজী এই গ্ৰামীণ হাসপাতাল কে রাজ্য তথা দেশের মধ্যে মডেল গ্ৰামীণ হাসপাতাল করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় তৈরী করছেন আলাদা করে ৮ তলা বিল্ডিং।এই গ্ৰামীণ হাসপাতালে আগামী দিনে কলকাতার বড় বড় হাসপাতালের মতো সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে। এই এলাকার মানুষদের আর উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার জন্য আর কলকাতায় যেতে হবে না। আগামী এই গ্ৰামীণ হাসপাতাল হবে দেশের মধ্যে মডেল গ্ৰামীণ হাসপাতাল। আগামী দিনে এই হাসপাতালে যে চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে তা হল, ট্রমা কেয়ার ইউনিট,ব্রাণ ইউনিট,আই-সি-ইউ,এস-এন-সি-ইউনিট, চোখের অপারেশন, উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা সংক্রান্ত নানান পরীক্ষা – নীরিক্ষা কেন্দ্র। বর্তমানে ১০০ টি নানান পরীক্ষা – নীরিক্ষা হচ্ছে। এছাড়াও হচ্ছে নাসিং স্কুল,নাসিং কলেজ, চিকিৎসক,নার্স – স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য কোয়াটার ।
আট তলা বিল্ডিং এর ৪ তলার নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেছে।আট তলা বিল্ডিং এর কাজ শেষ হলে তা হবে ৫০০ শয্যার। পশ্চিমবঙ্গে এত বড় গ্ৰামীণ হাসপাতাল আর কোথাও নেই। আট তলা বিল্ডিং এর ৪ তলা বিল্ডিং এর কাজ শেষ হওয়ায় তা পরিদর্শনে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের প্রেন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নারায়ণ স্বরূপ নিগম। সঙ্গে ছিলেন হাওড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাই চন্দ্র মন্ডল, উলুবেড়িয়া মহকুমা শাসক শমীক ঘোষ,আমতা ১ নং ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক আদৃতা সমাদ্দার,আমতা ১নং ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আকাশ মজুমদার।
আমত গ্ৰামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন নারায়ণ স্বরূপ নিগম। তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই ৪ তলা বিল্ডিং এ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা শুরু করে দেওয়া হবে। তারপর বাকি ৪ তলার বিল্ডিং কাজ সম্পন্ন হলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা হবে।
অভিজিৎ হাজরা,
আমতা, হাওড়া