বজরং বাণ পাঠের সঠিক সময় ও নিয়ম:বিপদে সাহায্য করবেন স্বয়ং সঙ্কটমোচন।

Hanuman

সংকটমোচন হনুমানের প্রতি ভক্তদের অটুট বিশ্বাস। তার নাম এবং দর্শন মাত্রই নাকি জীবন থেকে সমস্ত বিপদ দূর হয়ে যায়। মনে করা হয়, কলিযুগে একমাত্র বজরংবলীই জীবিত রয়েছেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বজরংবলীর আশীর্বাদেই রামের দর্শন লাভ করেছিলেন তুলসীদাস। আবার এ-ও মনে করা হয়, যেখানেই রামকথা হয়, সেখানে কোনও না-কোনও রূপে বজরংবলী উপস্থিত থাকেন। শাস্ত্র মতে মঙ্গলবার বজরংবলী পুজো করা শুভ এছাড়াও বহু মানুষ নিয়মিত হনুমান চালিশা পাঠ করেন, সঙ্গে পাঠ করেন বজরং বাণ।  মনে করা হয়, বজরং বাণ পাঠে  রাশিতে মঙ্গলের দোষ কাটে।  বজরং বাণ পাঠে শাপ মুক্তি হয়। শত্রুভয় কাচে। রোগ থেকে মুক্তি ঘটে। ‘বজরং বাণ’ মন্ত্র বেশ প্রভাবশালী। একে চালিসা বা কবচ না বলে ‘বাণ’ বলা হয়। বজরং বাণের প্রতিটি শব্দের মধ্যে রয়েছে অনন্য শক্তি। মঙ্গলবার বজরং বাণ পাঠ করলে বেশ কিছু অমূল্য উপকার পাওয়া যায়। তাই বজরং বাণ ( Bajrang Baan ) হিন্দু ধর্মের মানুষের কাছে  অত্যন্ত প্রিয়,কারণ বজরং বাণ মানুষকে শক্তি দেয়।

কিন্তু বহু পন্ডিত ও পুরোহিতদের মতে ,নিয়মিত হনুমান চালিশা পাঠ করলেও নিয়মিত বজরং বাণ পাঠ করতে নেই। রুদ্র অবতারের পুজোয় তা করলে ফল বিপরীত হতে পারে। তারা বলছেন, বজরং বাণ পাঠ করার সময় সেখানে পবন পুত্র হনুমানকে তার আরাধ্য রামের শপথ দেওয়া হয়। কিন্তু সবসময় রাম ভক্তকে রামের শপথ দেওয়া উচিত নয়। এতে হনুমানজি ক্রুদ্ধ হতে পারেন। জীবনের খুব কঠিন সময় এলে তবেই বজরং বাণ পাঠ করা উচিত। যখন উপাসক সমস্যা থেকে মুক্তির কোনও উপায় খুঁজে পান না, তখন বজরং বাণের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ ‘বাণ’ কথার অর্থ নির্ধারিত লক্ষ্যকে ভেদ করা। অর্থাৎ এমন একটি অস্ত্র, যা ছাড়া ঈশ্বরের কৃপা পাওয়ার আর কোনও উপায় নেই। যখন কোনও তপস্যাই সঙ্কট কাটাতে পারে না, তখনই ভরসা দিতে পারে’বজরং বাণ’ পাঠ। ভগবান হনুমানের কৃপা পাওয়ার জন্য বজরং বান অন্যতম দক্ষ এবং প্রভাবশালী যন্ত্র ,তাই যখন বিপদ খুব প্রবল হয়, তখন এটি পাঠ করলে খুব শুভ ফল পাওয়া যায়।

কখন বজরং বাণ পাঠ করবেন ?

এখানে এমন সাতটি পরিস্থিতি রয়েছে যখন এই বজরং বাণ পাঠ করা উচিত।

 1. একটি কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়া 
বজরং বানের অন্যতম সেরা ব্যবহার হল অল্প সময়ের মধ্যে কাঙ্খিত চাকরি পাওয়া।
2. শত্রুদের ধ্বংস করতে 
কখনও কখনও শত্রু শক্তিশালী এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেক্ষেত্রে বজরং বান আপনাকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে।
3. কার্য সিদ্ধি
কোনও বিশেষ কাজ বা প্রকল্পের আগে একবার বজরং বান পাঠ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
4. উন্নত ব্যবসা এবং আরও গ্রাহক
কোনো উদ্যোগ বা ব্যবসা শুরু করার আগে বজরং বান পাঠ করা ব্যবসাকে উন্নত করতে এবং আরও গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে সহায়তা করে। বাজত্রং বান মানুষকে এবং কাজগুলি পরিচালনা করা সহজ করে তোলে।
5. স্বাস্থ্য এবং সাহস
দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন? তাহলে চিকিৎসার পাশাপাশি বজরং বাণ-এর সাহায্য নিন।
6. ভয় এবং জ্বর
বজরং বান শুধু ভয়ই দূর করে না, যেকোনো ধরনের জ্বর দূর করতেও সাহায্য করে।
 7. ইন্টারভিউ এবং পরীক্ষায় সাফল্য 
যখন আপনি নার্ভাস বোধ করেন এবং ইন্টারভিউ বা পরীক্ষার ভয় পান তখন বজরং বান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের বজরং বান পাঠ করার অভ্যাস করা উচিত।

তাছাড়া ছোটখাটো কোন সমস্যা বা মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য হনুমনাজির আরও একটি শক্তিশালী চোপাই রয়েছে। সেটি পাঠ করা উচিত। সংকটমোচন হনুমানের সেই চোপাইটি হল –“কবন সো কাজ, কঠিন জাগ মাহি।জো নেহি হোই, তাত তুম পাহি।।” এখানে হনুমানজিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, পৃথিবীতে এমন কি কঠিন কাজ আছে যা প্রভু তোমার ধারা সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়। তাই এই অধম ভক্তের ওপর তুমি কৃপা করো।

বজরং বাণ পাঠের নিয়ম :

বজরং বান পাঠের অনেক নিয়ম রয়েছে। এই নিয়মগুলি মেনে চলা বাধ্যতামূলক। উপেক্ষা করা হলে ক্রোধিত হন সংকটমোচন। নিয়মগুলি হলো –
বজরং বাণ পাঠ করতে হলে সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে স্নান ও ধ্যান করতে হবে।বাড়িতে হনুমানজির মূর্তি স্থাপন করুন।  কুশের আসনে বসে বজরং বাণের সংকল্প করতে হয়।এরপর হনুমানজিকে  ধূপ, প্রদীপ ও ফুল অর্পণ করে, পুজো করতে হয়।রুদ্রাক্ষের জপমালা হাতে নিয়ে বজরং বাণ পাঠে বিশেষ উপকার।পাঠের সময় শব্দের উচ্চারণে মনোযোগ দিন। লাড্ডু নিবেদন করুন নৈবেদ্য হিসেবে। বজরং বাণপাঠ করার সময় কিছু ভুল করা এড়ানো উচিত। বজরং বাণ পাঠ শুধুমাত্র মঙ্গলবার শুরু করা উচিত। কমপক্ষে ৪১ দিন বজরং বাণ পাঠ করা দরকার। বজরং বানের পরে হনুমান চালিশা পাঠ বাধ্যতামূলক। তাই বজরং বান পাঠের পর হনুমান চালিশা পাঠ করুন।

বজরং বাণ পাঠের সময় কী কী করবেন না :

⦁ মঙ্গলবার থেকে বজরং বান পাঠ শুরু করতে হবে বলে শাস্ত্রে রয়েছে। অন্য কোনও দিন থেকে বজরং বান পাঠ শুরু করবেন না।
⦁ জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাস থাকলে ৪১ দিন একটানা বজরং বান পাঠ করুন। মাঝখানে বাদ দেবেন না।
⦁ বজরং বান পাঠ করার সময় কালো রঙের পোশাক পরা উচিত নয়। বজরং বান পাঠ করার সময় লাল রঙের কাপড় পরিধান করুন। লাল রঙ হনুমানজির খুব প্রিয়। তাই লাল রঙের বস্ত্র পরিধান করে বজরং বান পাঠ করুন।
⦁ বজরং বান পাঠের দিনগুলিতে ব্রহ্মচর্যের নিয়ম অনুসরণ করুন। এছাড়াও তামসিক খাবার ও সোমরস পান থেকে দূরে থাকুন। নয়তো হনুমানজি অসন্তুষ্ট হন।
(এখানে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি )