প্রতি বছর আষাঢ় মাসের নবমী তিথিতে সূর্য আর্দ্রা নক্ষত্রে প্রবেশ করে। রাহু এই নক্ষত্রের অধিপতি। হিন্দু ধর্মে সূর্যের আর্দ্রা নক্ষত্রে প্রবেশকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আষাঢ় মাসের এই প্রথম ছ’দিন চল্লিশ দণ্ডে মৃগশিরা নক্ষত্রের শেষ দুই পাদে সূর্যের ভোগ হয় তার পরে তিন দিন বিশ দণ্ড পর্যন্ত সূর্য আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদে থাকেন। কথিত আছে, প্রতি বছর আষাঢ়ের সাত তারিখ থেকে কামাখ্যা মা ঋতুমতী হন। এই সময়ে ধরিত্রী রজঃস্বলা হন, পৃথিবীকে এই সময়ে ঋতুমতী হিসেবে কল্পনা করা হয় তাই এই সময়কে বলা হয় অম্বুবাচী।সূর্যের দক্ষিণায়নের দিন থেকে তিন দিন অর্থাৎ, আষাঢ় মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত দিনগুলিতে অম্বুবাচী পালন করা হয়।‘অম্বুবাচী’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘অম্বু’ বা জল সূচনা। এ ছাড়াও এই সময়কে ‘রজোযুকক্ষ্মাম্বুবাচী’ও বলা হয় । কারণ মেয়েরা যেমন রজঃস্বলা হলেই সন্তান ধারণ করতে পারেন তেমনি এই সময় বসুমতীকেও সেই রূপেই কল্পনা করা হয়। এই সময়ে তাঁকে তিন দিন বিশ্রাম দেওয়া হয়। চাষিরা ওই তিন দিন কোনও কৃষিকাজ করেন না। অম্বুবাচীর তিন দিন ধরিত্রীর ঋতুকাল ধরে নিয়ে তাঁরা চাষে বিরত থাকেন। তাঁরা মনে করেন, এই তিন দিন বর্ষার জলে সিক্ত হয়ে ধরিত্রী চাষের উপযোগী হয়ে উঠবে।এ ক্ষেত্রে উর্বরতাকেন্দ্রিক ভাবনায় নারী এবং ধরিত্রী যেন সমার্থক হয়ে ওঠে। অম্বুবাচীর আগের দিনটিকে বলা হয় ‘অম্বুবাচী প্রবৃত্তি’। তিন দিনের পরের দিনটিকে বলা হয় ‘অম্বুবাচী নিবৃত্তি’।
দেবী ঋতুমতী হওয়ায়কে কেন্দ্র করে প্রধান উৎসবটি হয় অসম রাজ্যের গুয়াহাটি শহরে। এখানে রয়েছে কামাখ্যা মন্দির। মন্দিরের গুহা আকৃতিবিশিষ্ট মাঝের কক্ষে কোনও মূর্তি নেই। দেবীর মন্দিরের গর্ভগৃহে একটি ত্রিকোণাকার শিলাখণ্ড আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বিশ্বাস, ফি বছরে এই সময়ে দেবী কামাখ্যা ঋতুমতী হন।এই সময় সেই শিলাখণ্ডটি ভেদ করে গাঢ় গৈরিক রঙের জলস্রোত প্রবাহিত হতে থাকে। তিনদিন পর এই স্রোত ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। এই অলৌকিক ঘটনাটিকেই দেবীর রজঃস্বলা হওয়ার নিদর্শন বলে মনে করা হয়। তাই অম্বুবাচীর সময়ে তিন দিন মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। এই সময় দেবী দর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অম্বুবাচী নিবৃত্তির দিন দেবীর স্নান ও পূজা শেষ হওয়ার পরে দর্শনের অনুমতি মেলে।
কথিত আছে , সতীর দেহ যখন একান্নটি খণ্ডে ছড়িয়ে পড়েছিল ভারত ও প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, সেই প্রত্যেকটা জায়গায় গড়ে উঠেছে সতী মায়ের পীঠ। কামরূপ কামাখ্যায় (অসমে) পড়েছিল দেবীর যোনি। তাই এর অন্য নাম যোনিপীঠ। এখানে তন্ত্রসাধনা করলে সিদ্ধিলাভ করা যায়-এমনটাই বিশ্বাস সাধকদের। বিশেষ করে অম্বুবাচীর তিনদিন তন্ত্রসাধনায় বসলে পরম সিদ্ধি আসবেই। জ্যোতিষশাস্ত্রে বলা রয়েছে, সূর্য যে বারের যে সময়ে মিথুন রাশিতে গমন করে তার পরবর্তী সে বারের সে সময়ে অম্বুবাচী হয়। আবার এই তিথি থেকেই বর্ষা ঋতুর আগমন হয়। ২২ জুন অর্থাৎ গতকাল ,শনিবার সূর্য আর্দ্রা নক্ষত্রে প্রবেশ করেছে। এ সময়ে মিথুন রাশিতে উপস্থিত থাকবে সূর্য, পাশাপাশি বুধও এই রাশিতে উপস্থিত থাকবে। আর্দ্রা নক্ষত্রে সূর্যের প্রবেশ বেশ কিছু রাশির জাতকদের জন্য অত্যন্ত শুভ। সূর্যের আর্দ্রা নক্ষত্রে প্রবেশের ফলে কোন কোন রাশির জাতকরা লাভবান হবেন এবং কাদের উন্নতি হবে, তা বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
১. মেষ রাশি (Aries Zodiac) :
সূর্য আর্দ্রা নক্ষত্রে প্রবেশ করায় মেষ রাশির জাতকদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কাজে রুচি বাড়বে। আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন এই রাশির জাতকরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এ সময়ে দাম্পত্য জীবনেও আনন্দ অনুভূতি থাকবে। চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো সময়, চাকরিতে উন্নতির প্রবল যোগ রয়েছে। পরিশ্রম করলে কাজে সাফল্য লাভ সম্ভব। সব মিলিয়ে এই সময়টি মেষ রাশির জাতক-জাতিকাদের জন্য অত্যন্ত শুভ।
২. সিংহ রাশি (Leo Zodiac) :
সিংহ রাশির জাতকদের জন্য সূর্যের নক্ষত্র পরিবর্তন কোনও আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়। এ সময়ে পরিশ্রমের পূর্ণ ফল পাবেন। চাকরিজীবী জাতকরা কর্মক্ষেত্রে বড়সড় পদ লাভ করতে পারেন। সময় খুব ভালো কাটবে। পরিকল্পিত কাজ সম্পন্ন হবে সিংহ রাশির জাতকদের। ভালো পরিমাণে অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন এই রাশির জাতকরা। বিবাহিত জাতকদের জন্য লাভজনক সময়। জীবনসঙ্গীর উন্নতি হওয়ায় পরিবারে আনন্দের পরিবেশ থাকবে।
৩. কুম্ভ রাশি (Aquarius Zodiac) :
সূর্যের নক্ষত্র পরিবর্তনের ফলে কুম্ভ রাশির জাতকদের ভালো দিনের সূচনা হবে। অবসাদ থেকে মুক্তি পাবেন এই রাশির জাতকরা। পাশাপাশি ভাগ্যের পূর্ণ সঙ্গ লাভ করবেন। গত কিছুদিন ধরে যে সমস্ত কাজ আটকে ছিল, তা এবার এক এক করে সম্পন্ন হবে। উচ্চশিক্ষা লাভে ইচ্ছুক জাতকদের সমস্ত স্বপ্ন পূরণ হবে এবার। আয় দ্বিগুণ হবে এই রাশির জাতকদের। পরিশ্রম ও একাগ্রতায় কোনও ত্রুটি রাখবেন না। পরিশ্রমের ভালো ফল পাবেন।
৪. তুলা রাশি (Libra Zodiac) :
সূর্যের গোচর তুলা রাশির জাতকদের জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখবে। উন্নতি ও আয় বৃদ্ধি দুইই হবে। চাকরিতে একের পর এক ভালো সুযোগ পাবেন এই রাশির জাতকরা। আশপাশের ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক মধুর হবে। পরিবারের তরফে সুসংবাদ পাবেন। দাম্পত্য জীবনে সমস্যা থাকলে তা এবার সমাপ্ত হবে। পরিকল্পিত কাজ শুরুর জন্য সময় খুব ভালো। সূর্যের আর্দ্রায় গোচরকালে কোনও কাজ শুরু করলে তা ভবিষ্যতে ভালো পরিণাম দেবে।
৫. ধনু রাশি (Sagittarius Zodiac) :
সূর্যের নক্ষত্র গোচর ধনু রাশির জাতকদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করবে। এই সময়কাল ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই ভালো। ব্যবসায়ে দ্বিগুণ লাভ হতে পারে। চাকরিজীবী জাতকদের পদোন্নতির যোগ রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নতুন ও বড় অধিকার দেওয়া হতে পারে। চাকরির সন্ধানে থাকলে এ সময়ে ভালো সুযোগ পাবেন। লগ্নির দ্বারা লাভ অর্জনের যোগ তৈরি হবে। এ ছাড়াও ধনু রাশির যে জাতকরা এতদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন, তাঁদের স্বাস্থ্যোন্নতি হবে।
৬. কন্যা রাশি (Virgo Zodiac) :
এই রাশির যে জাতকরা শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের সময়টি কোনও আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়। শত্রুদের পরাজিত করতে পারবেন। ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কাজে যোগদান করার সুযোগ পাবেন এই রাশির জাতকরা। স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। মান-সম্মান ও পদ-প্রতিষ্ঠা বৃদ্ধির যোগ রয়েছে। আর্থিক পরিস্থিতি মজবুত হবে।
৭. মিথুন রাশি (Gemini Zodiac) :
আর্দ্রা নক্ষত্রে সূর্যের প্রবেশের ফলে মিথুন রাশির জাতকদের ভাগ্যে বড়সড় পরিবর্তন দেখা দেবে। সূর্যের শুভ প্রভাবে কেরিয়ারে ভালো সুযোগ পাবেন এই রাশির জাতক। এ সময়ে পদোন্নতি সংক্রান্ত কোনও সংবাদ পেতে পারেন। চাকরি পরিবর্তনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করলে তা এবার পূর্ণ হবে। পারিবারিক জীবনে বড়সড় আনন্দ পেতে পারেন। ছাত্রছাত্রীরা যে কোনও পরীক্ষায় সাফল্য লাভ করবেন। আর্থিক পরিস্থিতি উন্নত হবে। আয়ের ভিন্ন উৎস হাতে আসবে।
এই সময় ‘মিথুন সংক্রান্তি’ বা ‘রজ পর্ব’ নামে পরিচিত এই উৎসবও তিন দিন ধরে পালিত হয়। তিন দিনের প্রথম দিনটিকে বলা হয় ‘পহিলি রজো’। দ্বিতীয় দিন থেকে মিথুন মাস শুরু হয়। অর্থাৎ, বর্ষার প্রারম্ভ হয়। পুরাণ মতে, ভূদেবী এই সময় রজঃস্বলা হন। তৃতীয় দিনটি হল ‘ভূ দহ’ বা ‘বাসি রজো’। চতুর্থ দিনে বসুমতী স্নান। অর্থাৎ, ধরিত্রী মা বা ভূদেবীর স্নান। অম্বুবাচী শুরুর পর তিন দিন ধরে চলে এই উৎসব। চলতি বছরে অম্বুবাচী শুরু হয়েছে ২২ জুন অর্থাৎ ৭ আষাঢ় ভোর সাড়ে ৬টায় এবং সমাপ্তি হবে ২৫ জুন অর্থাৎ ১০ আষাঢ় রাত ১টার সময়।
1 thought on “অম্বুবাচীতে দেবীর কৃপায় ৭ রাশির ভাগ্য বদল: আর্দ্রা নক্ষত্রে সূর্যের প্রভাব।”
helloI really like your writing so a lot share we keep up a correspondence extra approximately your post on AOL I need an expert in this house to unravel my problem May be that is you Taking a look ahead to see you