বহুরূপী চলচ্চিত্রের ভালোলাগা গুলো আগে বলা যাক :
The stuff that dreams are made of.” -The Maltese Falcon, 1941
ঠিক কিভাবে শুরু করব লেখাটা বুঝে উঠতে পারছি না জানেন ? কোন দিকটা দিয়ে শুরু করব ? অনবদ্য – অসাধারণ – না বাকরুদ্ধ ? জানিনা সত্যিই সত্যিই আমার জানা নেই । 2:30 hrs সিনেমা হলে (Goodwin Cineplex, শ্রীরিমপুর) দেখলাম বহুরূপী চলচ্চিত্রটি। ১২ বছর আগে লেখা একটি গল্পের রূপ পেল বড়ো পর্দায় নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখার্জীর হাত ধরে, নাম বহুরূপী , ৮৬ দিনের শুটিং এবং ৩৪ বার লোকেশান চেঞ্জ । হোয়াট এ মাষ্টার স্ট্রোক! কোনো কথা হবে না যে।
১ . চলচ্চিত্রের বিষয় এবং ভাবনা : বহুরূপ ধারন করেন যিনি তিনি হলেন বহুরূপী । এরকম অসম্ভব বাস্তবধর্মী একটি শব্দ নিয়ে গল্প লেখা ও তাকে চলচ্চিত্রের পর্দায় ফুটিয়ে তোলা এবং সর্বোপরি দর্শকদের মনকে জয় করা ভীষণ ভাবে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ । এইরকম কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে । যা করে দেখিয়ে দিল উইনডোজ প্রোডাকশন হাউস । চলচ্চিত্রের বিষয় এবং ভাবনা নিয়ে লিখলে প্রথমেই বলব ব্যাটে বলে ছয় । যতদিন যাচ্ছে মানুষ ক্রমশ স্বার্থপর এবং যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে । পুরনো লোকশিল্পকে ভুলে যাচ্ছে , বহুরূপী হল তারই এক যথাযথ উদাহরণস্বরূপ । গল্পের শুরুতেই লাল ঝান্ডা এবং জুটমিলের ওয়ার্কার দের নিয়ে নানা সমস্যা আরও অনেক কিছু । আর সেখানেই আবির্ভাব বিক্রমের , বিনাদোষে তাকে ৫ বছরের জেল । সেই জেল তাকে দিল দাদার মত একজন মানুষ । খানিকটা বলা যায় তাকে মানুষ করে দেয়া । তারপর ঠিক কি কি হল এই মানুষটার জীবনে ? কারা এল ? কীভাবে এল ? কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিল সেই নির্দোষ মানুষ টা ? আমরা জানি বিপদে পরলেই পুলিশ আছে , তাই না ? কিন্তু রক্ষকরাই যদি ভক্ষকের কাজ করে তাহলে দরিদ্র বেকার মানুষেরা যাবে কোথায় বলুন তো ? কি কান্ড ? একদম মনের কথা তাই তো ? আগে তো রাঘব বোয়াল ধরবেন ? না হলে যে নর্দমা পরিস্কার হবে না । বহুরূপী তার ই এক যথাযথ উল্লেখযোগ্য উদাহরন ।
দুটো ভিন্ন পরিবার ভিন্ন দিকে, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন সমাজকাঠামোয় মোরা। কিন্তু ভারি চমৎকার তার উপস্থাপনা। একদিকে ঝিমলি আর বিক্রম আর অন্যদিকে সুমন্ত আর পরী। মন্দ নয়, একদম ফাটিয়ে যাকে বলে ।
জীবনবোধ, লড়াই, রাজনৈতিক নোংরামি, আবার কখনও অল্প হলেও হাসি, কোথাও মানষিক অবসাদ, কখনও আবার কাছে না পাওয়ার চরম কষ্ট, কখনও আবার প্রেম ভালোবাসা প্রতিটি বিষয়ের অনবদ্য স্পষ্টতা যে প্রমাণ করে দেয় সমাজে এরকম অনবদ্য মূল্যবোধের চলচ্চিত্র আজকে ভীষণ দরকার যা মানুষের মনে একদম অন্যরকম লড়াইয়ের ছাপ রেখে যাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ।
২ . স্থান নির্বাচন : চলচ্চিত্রের স্থান নির্বাচন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি চলচ্চিত্রের জন্য। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে বলা যায় বর্ধমান এবং বীরভূম বহুরূপী র মত অনবদ্য লোক শিল্পের জন্য আদর্শ। ৩৪ বার স্থান পরিবর্তন মুখের কথা নয়, এটা প্রমাণিত, সাধু সাধু ।
৩. চলচ্চিত্রের চরিত্ররা : যে কোনো চলচ্চিত্রের চরিত্রের গুরুত্ব যে অপরিসীম তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বহুরূপী চলচ্চিত্রটির চরিত্ররা একদম দেখিয়ে দিয়েছে – Definition of acting। প্রত্যেকেই একদম
হৃদয়ে বিরাজমান হয়ে আছে । বাংলা অভিধানের শব্দ কোথাও যেন কম হয়ে যাচ্ছে । কাকে ছেড়ে কাকে বলি বলুন তো ? সত্যিই সত্যিই কনফিউস, কিছু করার নেই। প্রত্যেকে এক সে বরকর এক। যথাযথ ভাবে প্রতিটি চরিত্রের একদম উপযুক্ত ভাবে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে । একজনকেও বাদ দেয়া যাবে না শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত । সবাই সেরা তাদের প্রত্যেক্যের ময়দানে , যাকে বলে হাম কিসিসে কম নেহী । আলাদা করে প্রত্যেকের কথা বলতে গেলে প্রত্যেকে এক একজন দিকপাল অভিনেতা এবং অভিনেত্রী ।
৪ . চলচ্চিত্রে গান ও নাচ : নুন ছাড়া তরকারি আর গান ছাড়া চলচ্চিত্র আমরা ভাবতেই পারব না। যদি গানের কথা বলতেই হয় , গান গুলো যেন একদম হাটকে । প্রত্যেক সঙ্গীত শিল্পীকে কড়োজোরে কুর্নিশ । উফফ যাকে বলে এ গানের যে ছাড়তে মন চাইছে না । একদম এক কথায় বাকরুদ্ধ । প্রত্যেকটি গান মন ছুয়ে গেছে ।
নৃত্য শৈলীদের পরিশ্রম অতুলনীয় ।
৫ . চলচ্চিত্রে অন্যান্য বিষয় : একটি চলচ্চিত্রে অন্যান্য ছোট ছোট্ট বিষয় গুলি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় বটে । সমস্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রা পুলিশ স্টেশনে এসে যখন বলছিলেন
তখন ছোট্ট হলেও এক মজার পরিবেশ তৈরী হয়েছিল।
এই চলচ্চিত্রের লাষ্ট সিন বুক ফেয়ার এ বহুরূপী বইটি কিনতে আসেন কে ? সম্পর্ক টা যে চোর আর পুলিশের….. এই কথাটাই বা কে বলে উঠল ?
৬ . চলচ্চিত্রের একটু মন্দলাগা : এই চলচ্চিত্রের নেগেটিভ বলতে গেলে সেরকম ভাবে খুব একটা কিছু চোখে পরেনি । একটি ছোট্ট জায়গা পুলিশের সামনে দিয়ে গলে যাচ্ছে ব্যাঙ্ক ডাকাত সে ধরতে পাচ্ছে না। একদম শেষে গিয়ে তার মনেহল। রেশমি সেন কি এতটাই বয়স্ক, একটু বেশি বয়স্ক লাগছিল। ব্যস এ ছাড়া আর কিছু নয়।
সব শেষে এসে একটাই কথা বলব যারা পর্দার পেছনে থেকে দিন রাত এক করে পরিশ্রম করে গেছেন , তাদেরকে কুর্নিশ জানাই , আর যারা এখনো বহুরূপী দেখেননি তারা আর একদম দেরী না
করে দেখে ফেলুন , Windows Production House
এর পরবর্তী চলচ্চিত্রের জন্য eagerly waiting।
পরিচালক : নন্দিতা রায়
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
শ্রেষ্ঠাংশে
আবীর চট্টোপাধ্যায়
ঋতাভরী চক্রবর্তী
কৌশানী মুখোপাধ্যায়
কাষ্টিং : আবীর চট্টোপাধ্যায়
ঋতাভরী চক্রবর্তী
কৌশানী মুখোপাধ্যায়
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
প্রদীপ ভট্টাচার্য
রেশমি সেন
সুজন নীল মুখার্জি
সরবদমান সোম
রজত গাঙ্গুলী
মানসী সিনহা
সুরকার
অনুপম রায়
শিলাজিৎ মজুমদার
বনি চক্রবর্তী
চিত্রগ্রাহক : ইন্দ্রনাথ মেরিক
সম্পাদক : মলয় লাহা
প্রযোজনা কোম্পানি : উইন্ডোজ প্রোডাকশন হাউস
মুক্তি : ৮ অক্টোবর ২০২৪
রিভিউ : সুজয়া রায়