৬ মাস বয়সের পর শিশুর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে চিকিৎসকদের মতামত

Baby Feeding

শিশুর বয়স ছয় মাস হলেই তার খাবারের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। সচেতন হতে হবে তার খাবারের প্রতি। শিশুর জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধের কোনও বিকল্প নেই। এই কয় মাস মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কোনও খাবার খাওয়াতে নিষেধ করেন চিকিৎসকরা। কারণ শিশুর শারীরিক গঠনে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন মায়ের দুধ। শুধু শরীর নয়, কত তাড়াতাড়ি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ হবে, তাও নির্ভর করে মাতৃদুগ্ধ পানের উপর। তবে ছ’মাস পেরিয়ে গেলে একটু একটু করে শিশুকে অন্য খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। সন্তানের ৬ মাস বয়স হলেই অনুষ্ঠান করে মুখে ভাত দেওয়া হয়। ওই দিন প্রথম ভাত, ডাল, তরকারি, পায়েসের স্বাদ পায় খুদে। তার পর থেকে কী কী খাওয়ানো দরকার, তার একটা রুটিন হওয়া খুব জরুরি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর), তাদের নতুন নির্দেশিকায় জানিয়েছে, ৬ মাস বয়সের পর থেকে শিশুর ডায়েট ঠিক কেমন হবে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত, সময় ধরে শিশু কী কী খাবে, সে নিয়ে মতামত দিয়েছেন চিকিৎসকেরাও। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সন্তানের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য কী কী করবেন মায়েরা।

জন্মের পর থেকে শিশুর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধই খাওয়াতে হয়, এই সময়টিকে বলা হয় ‘ব্রেস্ট ফিডিং পিরিয়ড’। ৬ মাসের পর থেকে শুরু হয় ‘উইনিং পিরিয়ড’, এ সময় মা এবং পরিবারের সবাইকে যথেষ্ট ধৈর্য ধরতে হবে। ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে শিশুর জিহ্বাতে ‘টেস্ট বাড’ (বিশেষ ধরনের মাংসপেশি যার মাধ্যমে শিশু দুধ ছাড়া বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বুঝতে পারে) তৈরি হয়। তাই এই সময় খাবার সামান্য হলেও খেতে যেন সুস্বাদু হয়, সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

৬ মাসের পর থেকে শিশুর প্রথম খাবার অবশ্যই শর্করা দিয়ে শুরু করা উচিত। বাজারচলতি প্যাকেটজাত খাবার না দেওয়াই ভাল।বরং বাড়িতে চাল-ডাল-আলু দিয়ে হালকা করে তৈরি খিচুড়ি সামান্য ঘি বা মাখন দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে শুরুতে। বেশি শক্ত খাবার না দিয়ে ভাত চটকে সব্জি সেদ্ধ দিয়ে খাওয়াতে পারেন। শুরুতে অল্প করে নুন দিয়ে রান্না করতে হবে। চিনির ব্যবহার না করাই ভাল। এছাড়া রান্না ডালের পানি তুলে ছ’মাসের শিশুকে খাওয়াতে পারেন। শিশুর জন্য আলাদা করে মসুর ডাল রান্না করুন। উপরের পানি তুলে খাওয়াতে পারেন। শিশুর দ্রুত বিকাশ হবে। পাতলা করে রান্না করা ডালিয়া বা ওটস ভাল খাবে শিশু,এজন্য প্রথম ব্লেন্ডারে ডালিয়া বা ওট্‌স গুঁড়িয়ে নিন। তারপর দুধের সঙ্গে জ্বালিয়ে একটি পাতলা মিশ্রণ তৈরি করুন। খুব বেশি ঘন না , একেবারে পাতলা হতে হবে। এই খাবারটির শিশুর জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া ব্রকলিও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। ব্রকলি প্রথমে সিদ্ধ করে নিন তার মধ্যে গরম পানি ঢেলে চটকে নিন। শিশুর জন্য এই সবজি খুবই উপকারী।

সাত-সাড়ে সাত মাস থেকে আমিষ শুরু করতে পারেন, যেমন: জ্যান্ত চারা মাছ, ডিম, মুরগির মাংস এই সবই খেতে পারে তবে শিশুকে ডিম খাওয়ানো শুরু করার সময়ে কুসুম ও সাদা অংশ আলাদা করে নেবেন। ৯ মাসের পর থেকে ফল খাওয়ানো শুরু করলে ভাল,যেমন: আপেল, গাজর, আঙুর, পাকা কলা, পাকা পেঁপে ইত্যাদি। হজমে সমস্যা না হলে ধীরে ধীরে ফল সেদ্ধ করে দেওয়াটা ভালো।সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে খাওয়াতে পারেন ভাত, সব্জি, ডাল, এবং দুপুর ১টার পর ফল খাওয়াতে পারেন।

শিশুর বয়স ৯ মাস পেরিয়ে গেলে তখন খাওয়ার পরিমাণ একটু একটু বাড়াতে হবে। শিশুকে ছয়-নয় মাস পর্যন্ত অন্য খাবার দিনে তিনবার খাওয়ানো হলেও , ৯-১২ মাস পর্যন্ত শিশুকে খাবার দিতে হবে পাঁচ থেকে সাতবার। ৯ মাস থেকে ১ বছর অবধি শিশুর দিনে যতটা ক্যালোরি দরকার , তার মধ্যে কিছুটা আসবে মায়ের দুধ থেকে, বাকিটা খাবার থেকে। ফলে এই সময় সবজির খিচুড়ি দেওয়াটা খুব উপকারী। সবজি, চাল, ডাল, সয়াবিন, সমস্যা না হলে মুরগির ছোট্ট এক টুকরা মাংস, কলিজা খিচুড়িতে মিশিয়ে খাওয়ান। সবজির মধ্যে আলু, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, গাজর, মূলা, শালগম, পেঁপে খাওয়ানো যেতে পারে। হজমশক্তি ঠিক থাকলে সামান্য ধনেপাতা বা শাক দিয়ে দেখতে পারেন। নতুন খাবারের পদের পরিমাণ অল্প হতে হবে। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে হবে। বয়স দু’বছর পেরিয়ে গেলে তার জন্য আলাদা করে রান্না করারও দরকার নেই। বাড়ির রান্না ডাল-ভাত-তরকারিই খাওয়ানো শেখাতে হবে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে শিশুর খাবারে যেন চিনির মাত্রা ও বেশি তেলমশলা না থাকে।

সর্বদা মনে রাখবেন , কখনওই শিশুকে জোর করে খাওয়াবেন না। খিদে পেলে সে আবার খেতে চাইবে। শিশুর ভাল খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে ধৈর্য রাখতেই হবে। মোবাইল দেখিয়ে বা টিভি চালিয়ে খাওয়াবেন না, পরিবর্তে তাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ও খেলার ছলে খাওয়ান। বাইরের খাবারের পরিবর্তে শিশুকে ঘরে তৈরি খাবার বেশি খাওয়ান। খাওয়া শেষ হওয়ার অন্তত মিনিট পনেরো পরে জল খাওয়াবেন। মনে রাখবেন, একেক শিশুর খাবারের চাহিদা, পরিবেশ পরিস্থিতি একেক রকম সুতরাং সেদিকে নজর রাখতে হবে।