হাই ব্লাড প্রেসার? ডায়েটে যোগ করুন এই স্বাস্থ্যকর খাবারগুলি

High-Presser

অনিয়মিত জীবনধারা এবং ভুল খাদ্যাভ্যাসের জন্য বর্তমান সময় মানুষ নানা রোগের শিকার হচ্ছেন। উচ্চ রক্তচাপ যার মধ্যে একটি। হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ একটি ক্রনিক অসুখ। এই রোগ একবার হলে মোটামুটি গোটা জীবন আপনাকে মেনে চলতে হবে। নইলে বড়সড় সমস্যা শরীরে বাসা বাঁধে। উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসারের সমস্যাকে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’। কারণ অনিয়ম হলেই এটি শরীরকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। উচ্চ রক্তচাপ থেকে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক এবং করোনারি হার্ট ডিজিজের মতো সমস্যা হতে পারে। রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে গেলে বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। অনেক গবেষণায় জানা গেছে যে, এই রোগটি এখন ভারতে খুব বেড়েছে। এদেশে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন। আজকাল শুধু বয়স্ক মানুষই নন, যে কোনও বয়সী মানুষ এমনকি কিশোর-কিশোরীরাও উচ্চ রক্তচাপের শিকার হচ্ছে এমনকি মোটা বা দেহের ওজন অতিরিক্ত হলেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হতে হয়! এই মিথ বর্তমানে ভেঙে গিয়েছে। বর্তমানে রোগা-পাতলা শরীর এবং দেহের স্বাভাবিক ওজন থাকলেও উচ্চ রক্তচাপের শিকার হচ্ছে অনেকে তবে মূলত বেশি ওজন ,অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ঘাটতির কারণে এমনটা হয়ে থাকে। । কারও আবার জিনঘটিত কারণেও এই সমস্যা দেখা যায়। এই রোগের সরাসরি কোনও চিকিৎসা নেই তবে এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন। এবার শুধু ওষুধ খেয়ে ক্রনিক অসুখের সঙ্গে লড়াই করা যায় না। তার জন্য আপনাকে জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে পরিষ্কার খাওয়া এবং খাদ্যতালিকা পরিবর্তন করা।

রক্তনালীর ভিতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়। এবার রক্ত প্রবাহের সময় রক্তনালীর ভিতরে দেওয়ালে একটি চাপ পড়ে। এর নামই ব্লাড প্রেশার। এবার প্রেশার সাধারণত ৮০/ ১২০ হলে স্বাভাবিক। তবে কোনও কারণে ৯০/১৪০ হলেই সাবধান। কারণ আপনি হাই ব্লাড প্রেশারে আক্রান্ত।এখন প্রচুর মানুষ হাই প্রেশার রোগটিতে ভুগছেন। তবে তারপরও খবর রাখেন না অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ জেনে রাখাটা সবার প্রথমে জরুরি। আপনি উপসর্গ জেনে ফেলতে পারলেই রোগ থেকে দূরে যাওয়া যায়। কয়েকটি খাবার অবশ্যই হাই ব্লাড প্রেশার ডায়েটে রাখতে হবে। পাশাপাশি ব্যায়াম করুন দিনে ৪৫ মিনিট। তবেই রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

উচ্চ রক্তচাপের শিকার হলে খাদ্যাভ্যাসে সতর্ক হওয়া জরুরি। এমন কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলি খাওয়া উচিত নয়। আবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু ফল ও সবজি প্রতিদিনের ডায়েটে রাখা জরুরি। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার সহজ প্রতিকার হলো, কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য আইটেম যা আপনি আপনার ডায়েটে যোগ করতে পারেন। উচ্চ রক্তচাপ আছে যে সমস্ত রোগীর, তাদের খাদ্যাভ্যাসের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। ভুল খাবার খেলে, এই রোগীদের স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হতে পারে। সুতরাং আসুন জেনে নেওয়া যাক,উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন রোগীদের ভাল স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, ডায়েটে কোন খাবারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

1. সবুজ শাক সবজি :

পালং শাক, কেল এবং লেটুস জাতীয় খাবারে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। পটাসিয়াম কিডনিকে প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত সোডিয়াম পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করতে পারে এছাড়াও পালংশাকে প্রচুর মাত্রায় নাইট্রেট রয়েছে, যা হার্ট সুস্থ রাখতে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে প্রতিদিনের ডায়েটে পালংশাক রাখুন। প্রচুর সবুজ শাকসবজি যেমন পালংশাক, কলমিশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, শসা, লাউ, মটরশুঁটি, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, কুমড়া আপনাকে খেতে হবে। রামধনুর রঙের মতো হোক প্লেট। এই খাবারে অনেকটা পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল থাকে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব ভালো পরিমাণে রয়েছে। এছাড়া মনে রাখবেন, পটাশিয়াম বেশি থাকায় সোডিয়াম শরীর থেকে কমিয়ে দিতে পারে এই খাদ্যগুলি। এছাড়া আছে ফাইবার। সব মিলিয়ে শরীর সুস্থ রাখার কাজে দারুণ কার্যকরী এই খাবার। তাই চিন্তার কারণ নেই বললেই চলে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপের রোগী হন, তবে অবশ্যই এই সবজিগুলি আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করুন।

2. ফল :

ফল খেতে হবে আপনাকে প্রেশার নিয়ন্ত্রণে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন তাজা ফল যেমন লেবু, পেয়ারা, আমলকী, আপেল, কমলালেবু, বেদানা, ন্যাশপাতি, পেঁপে ইত্যাদি খেতে হবে।। এই ফলগুলি হল ভিটামিন ও খনিজের ভাণ্ডার। পাশাপাশি অনেকটা পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটাশিয়াম থাকায় এই ফল দারুণ কার্যকরী প্রেশার কমানোর কাজে। এছাড়া মনে রাখবেন এই ফলগুলিতে থাকে অনেকটা ফাইবার। সেই ফাইবার কিন্তু শরীর সুস্থ রাখার কাজে খুবই কার্যকরী। বিশেষ করে কলা যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে খুবই সাহায্য করে। কলায় উপস্থিত খনিজও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া কলায় প্রচুর মাত্রায় পটাসিয়াম রয়েছে, যা হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এমনকি উচ্চ রক্তচাপের রুগীদের প্রতিদিন একটি কলা খাওয়া উচিত। ডায়েটে কলার সবজি থেকে শুরু করে ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর কলার চিপস সবই অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। শরীর সুস্থ রাখার জন্য ফল খুবই কার্যকরী। তাই ফল নিয়মিত খান। তবেই ভালো থাকতে পারবেন। শরীর সুস্থ রাখার জন্য ফল খুবই কার্যকরী। তাই ফল নিয়মিত খান। তবেই ভালো থাকতে পারবেন।

3. পেস্তা বাদাম :

শরীর ফিট রাখতে পেস্তা বাদামের জুড়ি নেই। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দারুণ উপকারী পেস্তা বাদাম। এটি একটি উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন এবং ফাইবারের উৎস। হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যও এটি উপকারী । সকালে খালিপেটে একমুঠো ভেজানো বাদাম যেমন আমন্ড, আখরোট, কাজু খেতে পারেন।

4. মাছ :

মাছ খান বেশি করে। জ্যান্ত মাছের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। তবে খুব তৈলাক্ত মাছ এড়িয়ে যান। ছোট মাছ খেতে হবে। ১ কেজি ওজনের বেশি মাছ খাওয়া ভালো নয়। কারণ সেই মাছে তেল থাকে অনেকটা বেশি। এর থেকে শরীরে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী প্রেশার বাড়ে। তাই প্রোটিনের চাহিদা শরীরে বজায় রাখতে চাইলে খেতে পারেন ছোট মাছ। এছাড়া মাছ ভাপে ভাপে কম তেলে রান্না করুন। ভেজে খেলে শরীরে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এবার থেকে রান্না নিয়েও সতর্ক হয়ে যান। তবেই ভালো থাকতে পারবেন। অন্যথায় জটিলতা বাড়বে।

5. ডাবের জল :

প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডাবের জল পান করুন। এতে রয়েছে পটাশিয়াম। এই পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়াম কমায়। ফলে রক্তচাপ কমে। তবে দিনে ৩ লিটার জলপান করতেই হবে।

6. স্ট্রবেরি :

স্বাস্থ্যর জন্য খুব উপকারী স্ট্রবেরি। এটা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ কার্যকরী। এছাড়া রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতেও উপকারী স্ট্রবেরি। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।

7. চিকেন :

চিকেন খাওয়া খুবই উপকারী। এই খাবারে রয়েছে ভালো পরিমাণে প্রোটিন। সবথেকে ভালো হয় চিকেন ব্রেস্ট খেতে পারলে। এখানে কম থাকে ফ্যাট। তবে সেই আবার এক কথা, বেশি তেল দিয়ে রান্না করা চলবে না। বরং কম পরিমাণ তেলে রান্না করতে হবে। আর রেডমিট খাবেন না। এটা শরীর খারাপ করতে পারে। তাই সতর্ক থাকার অবশ্যই চেষ্টা করুন।

8. বিটরুট :

বিট নাইট্রিক অক্সাইড সমৃদ্ধ, এটি রক্তনালীগুলিতে কোনও বাধা থাকলে তা উপশম করে এবং রক্ত ​​চলাচল ভাল রাখে। এটি আপনাকে হাইপারটেনশন থেকে দূরে রাখে। স্যালাড বা ফল হিসাবে ডায়েটে অবশ্যই বিট অন্তর্ভুক্ত করুন।

9. রসুন :

রসুন অ্যান্টি-বায়োটিক এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং নাইট্রিক অক্সাইড বাড়ায়। এটি আপনার পেশী শিথিল করে। এটি খেলে শুধু স্বাদই বাড়বে না, বরং এটি রক্তনালীগুলিকে প্রসারিত করে, যার ফলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কী খাবেন না?

নুন ও বেশি নুনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্যাকেটজাত খাবার খাওয়াও চলবে না একেবারেই। অতিরিক্ত ঘি-মাখন; ফ্যাটজাতীয় যেমন কেক, পেস্ট্রি, পরোটা, লুচি, আইসক্রিম বেশি খাওয়া যাবে না। মদ্যপান ও ধুমপানের অভ্যাসও ত্যাগ করুন।

( প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। )