কিডনির সমস্যার ঝুঁকি এড়াতে,এই দৈনন্দিন অভ্যাসগুলো ত্যাগ করুন।

Kidney

শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল কিডনি। এটি শরীরকে বিষাক্ত বর্জ্য থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করে এবং রেচন প্রক্রিয়ায় অন্যতম ভূমিকা পালন করে। কিডনি এক বার বিকল হতে শুরু করলে কিন্তু ভোগান্তি অনেক। সুস্থ থাকতে কিডনিকে অবহেলা করলে চলবে না। নয়তো শরীরে নানা জটিলতা বাসা বাঁধতে পারে। তাই বড় কোনো শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আগেই সতর্ক হওয়া জরুরি। প্রচুর পরিমাণে জল খেলে কিডনি সুস্থ থাকে বলে পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

তবুও,কিডনির সমস্যাতে ভোগেন বহু মানুষ। নানা কারণে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস থেকে অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল কিংবা আরও নানা কারণে কিডনির অসুখ হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন যে শরীরের জন্য ভালো নয় তা কম বেশি সবাই জানেন, তবে এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলিকে মানুষ খুব একটা পাত্তা দেন না। অথচ দীর্ঘদিন ধরে করে চলা সেই কাজ পরবর্তীকালে সমস্যা তৈরি করে। যেহেতু কিডনি বিকল হলে শরীরও অচল হয়ে পড়বে, তাই আমাদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কোনও ক্রনিক অসুখ না থাকলে সাধারণত কিডনির যত্ন নেওয়া খুব কঠিন কাজ নয়। ছোটখাটো কিছু যত্নেই সুস্থ রাখা যায় কিডনিকে। কর্মব্যস্ততার কারণে অনেকেই আলাদা করে নিজের যত্ন নেওয়ার সুযোগ পান না। আর তাতেই বাড়ে বিপত্তি।প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় আমরা এমন কিছু অভ্যাসের বশবর্তী থাকি বা অজান্তেই এমন কিছু দৈনিক অভ্যাসে আমরা অভ্যস্ত থাকি,যেগুলি কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এবং কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।।তাই কিডনি বাঁচাতে সেই সব অনুচিত কাজ গুলির দিকে একটু বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত। তাহলে জেনে নিন, কোন কোন অভ্যাস থেকে বাড়তে পারে কিডনির সমস্যা।

 

1.     অনেকেই প্রতিদিনের রান্নায় বেশি লবণ খান। রান্নায় নুন কম হোক বা না হোক, খাওয়ার পাতে একটু কাঁচা নুন না নিলেই নয়। রান্নায় অতিরিক্ত নুন ব্যবহারের পাশাপাশি কাঁচা নুন খাওয়া,স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত নুন খেলে দেহে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায় এবং অত্যধিক সোডিয়াম গ্রহণের ফলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে, যা কিডনির মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। আপনি নুনকে ‘না’ বলতে পারবেন না । নুন একটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত উপাদান , যা যে কোনো খাবারের স্বাদকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদিও শরীরে নুনের স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই নুনের স্বাস্থ্যকর ব্যবহার বজায় রাখতে, আপনাকে অবশ্যই খাদ্যের প্রতি সচেতন হতে হবে এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার,ভাজা আইটেম ও ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলতে হবে।

2.     মানুষের শরীরের প্রায় ৬০শতাংশ জল দিয়ে গঠিত। জল শরীরকে ভাল ভাবে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সারাদিনে অন্তত ১০ থেকে ১২ গ্লাস বা প্রতিদিন ৩-৪ লিটার জল খাওয়া দরকার। কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ জল। পর্যাপ্ত জল খেলে কিডনি থেকে শরীরের যাবতীয় টক্সিন সহজেই বাইরে বেরিয়ে যায়। তাই জলের জোগান কিডনি যত পাবে, তার শারীরবৃত্তীয় কাজে তত সুবিধা হবে। কিন্তু, জল পর্যাপ্ত পরিমাণে না খেলে কিডনির উপর চাপ বাড়ে, যা ধীরে-ধীরে কিডনির ক্ষতি করে আবার যদি পরিমিত পরিমাণে জল পান না করা হয়, তাহলে মানুষের কিডনিও ডিহাইড্রেশনের কারণে যথেষ্ট ক্ষতি হতে পারে।

3.      সাম্প্রতিক সময়ে ব্যথানাশক ওষুধের অত্যাধিক ব্যবহার যেন সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে।বহু মানুষেরই অত্যধিক পরিমাণে পেন কিলার খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অতিরিক্ত মাত্রায় এই ধরনের ওষুধ কিন্তু কিডনির নানা সমস্যা তৈরি করে,এতে কিডনিতে পাথর জমার সমস্যা দেখা দেয়। যদিও এটি সত্য যে কখনও কখনও তাদের ব্যবহার অনিবার্য , তবে বিশেষজ্ঞরা যতটা সম্ভব এড়ানোর পরামর্শ দেন। কারণ ব্যথানাশক ওষুধে থাকা বিশেষ করে ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ কিডনিকে ক্ষতির ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই কোনো রকম অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথানাশক এমন ওষুধ খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।

4.     কিডনি সংক্রমণের অন্যতম কারণ হল প্রস্রাব চেপে রাখা। সাধারণত রাস্তাঘাটে বা অনেক সময় কাজের চাপে বাড়িতে থাকলেও অনেকেই প্রস্রাবের বেগ চেপে রাখেন। এই অভ্যাস দিনের পর দিন ঘটালে কিন্তু বিপদ। এর ফলে মূত্রনালিতে চাপ পড়ে, তাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিডনি। বেশি ক্ষণ প্রস্রাব ধরে রাখার ফলে কিডনির শারীরবৃত্তীয় কাজ সারতে সমস্যা হয় ও দীর্ঘ সময় ধরে টক্সিন ধরে রাখায় শরীরে সংক্রমণ ঘটে।

5.      উচ্চমাত্রায় ডায়াবেটিস সরাসরি কিডনির ক্ষতি করে। তাই সবসময় চেষ্টা করুন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে। রক্তে শর্করার পরিমাণ কোনোভাবেই বাড়তে দেয়া যাবে না। কিডনি ভালো রাখতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ প্রয়োজন।

6.      জল কম খেলে এবং তার সঙ্গে অতিরিক্ত ফাস্টফুড খেলে লিভারের পাশাপাশি কিডনিরও ক্ষতি হয়। কম জল খাওয়া এবং অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও প্যাকেটজাত খাবার কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে ব্যস্ত জীবনযাত্রায় চটজলদি তৈরি হয়ে যাওয়া খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। আর এর ফলেই প্রভাব পড়ছে কিডনিতে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই ধরনের খাবার।

7.      কিছু কিছু ভিটামিন কিডনির জন্য উপকারী। আবার কিছু কিছু ভিটামিন কিডনির জন্য ক্ষতিকর। শরীরে যদি ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা যায়, তাহলে কিডনির অসুখ দেখা দিতে পারে। আবার অত্যধিক পরিমাণে ভিটামিনজাতীয় খাবার খেলে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ভিটামিন বি৬ রয়েছে এমন খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। আবার অনেকেরই প্রিয় রেড মিট। এটি প্রোটিনের ভাল উৎস বলেও বিবেচিত হয়। কিন্তু, অতিরিক্ত রেড মিট খেলে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। রেড মিট ছাড়াও অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার কিডনির ঝুঁকি বাড়ায়।

8.      ধূমপান এবং মদ্যপান স্বাস্থ্যর জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা বলাই বাহুল্য। আপনি যদি নিয়মিত ধূমপায়ী হন তবে ছেড়ে দিন। আপনি নিজেকে যে ধরণের ধূমপায়ী হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করুন না কেন, সেই অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। ধূমপানের কারণে উদ্ভূত বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতার মধ্যে কিডনি ক্যানসারের ঝুঁকিও রয়েছে অন্যদিকে অ্যালকোহল সেবনের কারণে বিভিন্নধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতা যেমন – লিভারের ক্ষতি, কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয় তেমনি অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান কিডনিরও ক্ষতি করতে পারে। অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে উচ্চ রক্তচাপের বিরূপ প্রভাব কিডনি ব্যর্থতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এবং কিডনিতে পাথর সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ।