ডায়াবেটিসকে মাদার অব ডিজিজ বলা হয়। কেননা এই রোগটি শরীরে আরও অনেক জটিল রোগ ডেকে আনে। ডায়াবিটিস রোগটি এখন গোটা পৃথিবীর চিকিৎসা ব্যবস্থার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিদিন এই অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অঙ্গহানীর আশঙ্কাও। বেশির ভাগ মানুষই একটা বয়সের পর ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হন। ‘টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস’ হোক বা ‘টাইপ টু’, প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত দরকার। তাই সবমহলকে সচেতন থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা। এমনকী রোগ নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাইফস্টাইলের মাধ্যমে বশে রাখতে হয় সুগারকে। সচেতন থাকতে হয় খাওয়া-দাওয়া নিয়ে। আর রোজ নিয়ম করে যোগব্যায়াম করতে হয়। এছাড়াও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ, পরিমিত খাবার এবং রোজ নিয়ম করে দুবেলা হাঁটার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
ডায়াবিটিস হলে অগ্ন্যাশয় থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন হরমোন বের হয় না। অথবা বের হলেও তা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এই কারণে রক্তে বৃদ্ধি পেতে থাকে সুগারের পরিমাণ। এই কারণে বিভিন্ন অঙ্গের উপর প্রভাব পড়ে এবং অঙ্গহানীর আশঙ্কা তৈরি হয়। অনেকেই হয়তো জানেন না যে, শুধু যোগাসনের মাধ্যমে আপনি ডায়াবেটিসকে পরাজয় করতে পারেন। এই কারণে বেশ কিছু যোগব্যায়াম করা দরকার, যা মানসিক চাপ কমাবে। সেই সঙ্গে এই সব যোগের প্রভাব পড়বে অগ্ন্যাশয়ের উপরও। নিয়মিত এই সব যোগাসন করলে, তা এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের কার্যক্ষমতাও বাড়ায়। এছাড়াও প্রাচীন ভারতীয় যোগশাস্ত্রেও এই অসুখ নিয়ন্ত্রণের রসদ হিসেবে যোগাসনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যতম ভরসা হল যোগাসন বা যোগ ব্যায়ামে। তবে যোগের কথা হলেই সবাই কেবল কঠিনতর ব্যায়ামের কথা ভাবেন। যদিও কিছু ছোটখাট ব্যায়ামও এই অসুখকে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন ৭ টি যোগাসন সম্পর্কে যেগুলি নিয়মিত অভ্যাস করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
১. পশ্চিমোত্তানাসন :
ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য এই ব্যায়াম খুবই উপকারী। প্রথমে দুই পা সামনে ছড়িয়ে বসে পরুন। খেয়াল রাখুন, হাঁটু দুটো যেন হালকা বাঁকা অবস্থায় থাকে।এবার হাত উপরে করুন ও শিরদাঁড়া সোজা রাখবেন। এরপর দুই হাত কানের পাশ দিয়ে শ্বাস নিতে নিতে তুলুন। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাত দিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন অর্থাৎ শ্বাস ছেড়ে শরীরের উপরের অংশ নীচের শরীরে উপর রেখে সামনে ঝুঁকুন। এবার হাতের আঙুল দিয়ে পায়ের আঙুল ধরুন এবং নাক বা কপাল হাঁটুতে ঠেকান। হাঁটুতে না ঠেকাতে পারলে যতটা পারবেন ততটাই করুন।এই অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড থাকুন। তারপর আবার প্রাথমিক অবস্থায় ফিরে আসুন।
২. ভুজঙ্গাসন :
ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য ভুজঙ্গাসন দারুণ একটি যোগব্যায়াম। প্রথমে যোগা ম্যাটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার হাত দুটো কাঁধের তলায় রাখুন বা হাতের তালু মেঝের উপর ভর দিয়ে পাঁজরের দুই পাশে রাখুন। এবার কোমর থেকে পা পর্যন্ত মাটিতে রেখে হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে বাকি শরীরটা ধীরে ধীরে উপরের দিতে তুলুন। এবার মাথা বাঁকা করে ওপরের দিকে তাকান। এই ভঙ্গিতে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকার পর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যান। প্রথম দিকে এই আসন তিন বার করুন। পরবর্তীতে ৫-৬ বারও করতে পারেন।এই ব্যায়ামের সময় শরীরের ভঙ্গি থাকে সাপের মতো। ভুজঙ্গাসন করলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়বে ফলে ব্লাড সুগার রোগীরা উপকার পাবেন।
৩. বালাসন :
মাদুরের উপর হাঁটু মুড়ে বসুন। এবার শ্বাস নিয়ে হাত দুটো মাথার উপর রাখুন। শ্বাস ছেড়ে শরীরে উপরের অংশ সামনের দিকে বেঁকান। মাটিতে কপাল ঠেকান, এবং শ্রোণী রাখুন গোড়ালির উপর। এতে থুতনিতে মাটিতে ঠেকবে এবং বুক হাঁটুতে। এই অবস্থাতেও পিঠ যাতে কোনও ভাবে বেঁকে না যায় সেই দিকে খেয়াল রাখুন।এই যোগাসন স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী। বালাসন ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী।
৪. ধনুরাসন :
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি ব্যায়াম হল ধনুরাসন। তবে, শরীরের ওজন বেশি হলে এই আসন করতে একটু কষ্ট হয়। এক্ষেত্রে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুটো পা ভাঁজ করুন। তারপর দুই পায়ের গোছ হাত দিয়ে ধরুন। শ্বাস নিতে নিতে শরীরের সামনের অংশ ও পিছনের অংশ সমানভাবে উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন। শরীরের ওজন থাকবে পেটের উপর। শরীরের ভঙ্গি হবে ধনুকের মতো। এই ব্যায়ামটি করলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত করলে উপকার পাবেন।
৫. মুন্ডকাসন :
বজ্রাসনের ভঙ্গিতে বসুন। এবার সামনের দিকে হাত দুটো ছড়িয়ে দিন। এরপর আপনার হাতের বুড়ো আঙুল তালুর মধ্যে ভাঁজ করে নিন। তার উপর বাকি চারটি আঙুল বসিয়ে হাতের মুঠি তৈরি করুন। এরপর কনুই বেঁকিয়ে এই মুঠি করা হাতটা নাভির উপর রাখুন। এবার উপরের শরীরটা বেঁকিয়ে নিয়ে নীচের শরীরের উপর রাখুন। ঘাড় সোজা করে সামনের দিকে তাকান।
গর্ভবতী মহিলারা এই যোগাসন করবেন না। পায়ে চোট পেয়ে থাকলে বা ব্যায়াম করার সময় গোড়ালিতে ব্যথা হলে আসন করা বন্ধ করে দিন। আলসারের সমস্যা থাকলে এই ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন।
৬. সহজ বিপরীত করণী মুদ্রা :
প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। মাথার তলায় পাতলা বালিস দিন। এরপর দুটি পা ৯০ ডিগ্রি করে দেওয়ালে তুলে ধরুন। পা দুটি উপরে, আর কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত থাকবে মাটিতে। এই অবস্থায় ৩ থেকে ৪ মিনিট থাকুন। এই ব্যায়াম করলেই ডায়াবিটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে। এই আসন যে কোনও বয়সেই করা যায়। তবে একবার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নিতেই পারেন।
৭. কুম্ভীরাসন :
চিৎ হয়ে শুয়ে দুটি হাঁটুকে ভাজ করে নিন। দুই হাতকে কাঁধের সমান মেঝেতে ছড়িয়ে দিন। হাতের তালু থাকবে মাটিতে। এরপর শ্বাস নিন। তারপর দুটি হাঁটু শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বাম দিকে ফেলুন। আর ঘাড় ঘোরান ডানদিকে। এইভাবে ১০ সেকেন্ড থাকুন। তারপর ফের অন্যদিকে ঘুরে যান। অন্তত ৮ বার করুন। এই ব্যায়াম নিয়মিত করলে অনায়াসে সুগার বৃদ্ধির আশঙ্কা কমতে থাকে।
(প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।)
1 thought on “ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে যোগ ব্যায়ামই ভরসা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা”
Its like you read my mind You appear to know so much about this like you wrote the book in it or something I think that you can do with a few pics to drive the message home a little bit but instead of that this is excellent blog A fantastic read Ill certainly be back