বাবার জন্মদিনে পায়েস আর দুপুরের দুটি পদ কাহিনী নিজে হাতে বানিয়েছে। দুপুরের খাবারের স্বাদের মধ্যে গত হওয়া মাকে ফিরে পেয়ে শিলাদিত্য বর্মনের চোখের কোনে জলের ছিটে সেদিন অনেকেই দেখেছিলো।শাড়ী কে পোশাক না ভাবা মেয়েটা যেদিন প্রথম মায়ের গরদ পরে বাড়ির অন্নপূর্ণা পুজোয় ফুলহাতে অঞ্জলি দিয়েছিলো, বাড়িশুদ্ধু মানুষের অষ্টম আশ্চর্য দেখা সেদিনই হয়ে গেছিলো। জেদি অহংকারী কাহিনীও পারে বাড়ির কাজের মাসির মেয়ের জন্য আঁকার খাতা রং পেন্সিল কিনে দিতে, ভোরে উঠে সূর্য প্রণাম থেকে নিয়ম করে আমবস্যা পূর্ণিমায় নিরামিষ খাওয়া থেকে নিজের অগোছালো ঘর কে গুছিয়ে রাখতে, উগ্র ঝিনচাক এর বদলে মিস্টি রবীন্দ্র সংগীতে ঠোট মেলাতে। টাকার অপচয় বন্ধ করে তালা বন্ধ কৌটোয় খুচরো জমাতে। এতো কিছু লক্ষ করার পর শিলাদিত্য বর্মন সাহস পেয়েছিলো মেয়ের জন্য পাত্র খোঁজার।
“কাহিনী” অনেকক্ষন ছাদে দাঁড়িয়ে আছে, অমাবস্যার আঁধার শুধু আকাশ টাকে গ্রাস করেনি তার মনেও এখন কৃষ্ণ পক্ষ চলছে। নিজের সাথেই কথা বলে কাটায় সারাদিন সে। আর পারছে না ও, সবটা বাবাকে না জানালে দেরির মাশুল ওকেই দিতে হবে। তবে কোনোভাবেই যুদ্ধ নয়, বরং অনেক বেশী শান্ত থাকবে আজও। প্রাক্তন আমি টা ওর কাছে অপরিচিত এখন। সব শোনার পর অবধারিত ভাবে কাহিনীর বাবা শিলাদিত্য বর্মন এর দাপট সমুদ্রের গর্জন কে ফিকে করে দিতে পারে এইটুকু ধারণা কাহিনীর আছে। তবে আজও একদম শান্ত থাকবে কারণ একটাই। উত্তাল বেপরোয়া সমুদ্রের চেয়ে সাগরের শান্ত স্রোত অনেক বড়ো বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দেয়, এটাই বাবাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। কাহিনী সিঁড়ি দিয়ে তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে ওর পায়ের নুপুরের একটা ছোট বল খুলে গিয়ে গড়াতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে। যেন ওর আগে ওই রুপোর গোলাকৃতি বলটা পৌঁছে নিজের অস্তিত্ব দিয়ে কাহিনীর চারপাশে একটা লক্ষণ রেখা এঁকে দেবে যাতে ও নিজের মালকিন কে রক্ষা করতে পারে। সন্ধে হলেই বাড়িটা কেমন প্রাণ হারায়, বাড়িভর্তি আলোতেও অন্ধকার কে স্পষ্ট দেখতে পায় কাহিনী।
কাহিনী বাবার ঘরে আসে। বাবা তোমার সাথে কথা ছিল — শিলাদিত্য বর্মন হিসাবের কাগজ থেকে চোখ ওঠানোর প্রয়োজন বোধ করেনা। হ্যাঁ “স্থাপত্যবাটির” প্রত্যেকটা প্রাণী এমনিই। যেখানে সবাই দৌড়াচ্ছে নিজের জন্য, কুসংস্কারটা ওদের কাছে একটা সোনার খাঁচা, যাতে নিজেদের বন্দি করে রেখেছে এই একান্যবর্তী পরিবার যুগের পর যুগ।
আবার ডাকে ও বাবাকে। হ্যাঁ ডাকতে ওকে হবেই, বাবার কান পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্তকে পৌঁছে দেওয়ার পন করছে কাহিনী।
-শিলাদিত্য বাবু চোখ উঠিয়ে বললেন….. কি বলবে বলো ?
-বাবার গম্ভীর শব্দের তোয়াক্কা না করেই কাহিনী বললো…..
-আমার বিয়ের দেখাশোনা করো না বাবা, আমি বিয়ে করবো না।
-মেয়ের কথার ছুড়ি যেনো তার পরাক্রমী মেরুদন্ড কে দু টুকরো করার চেষ্টা চালালো। চোখ দুটো কপালে তুলে বললো ঘরে যাও, তোমার বিয়ের বিষয়ে তোমার সাথে কথা বলে সব কিছু ঠিক করবো ক্যালেন্ডারে এমন একটিও দিন নেই।
-কাহিনী সোজা গিয়ে বাবার পায়ে পরে।
-বাবা চিলেকোঠার ঘরটা আমায় দিও, ওই একলা ঘরটাতে আস্তানা বানিয়ে নিভৃতে থাকবো। একটা মাত্র মেয়ে আমি তোমার। তবুও দাবি আমায় মানায় না জানি, এ বাড়ির অন্য ছেলে মেয়েরা অনেক যোগ্য, সব দিক দিয়ে আমার থেকে, তাদের ইচ্ছা কখনো এই স্থাপত্যবাটির সংস্কারের মর্যাদা কে পার করেনি। এ বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী আজ পর্যন্ত সবার বিয়ে বড়োদের নির্বাচন করা পাত্র পাত্রীর সাথেই হয়েছে। আমিও আলাদা নই। তোমার চিহ্নিত করা বাড়িটা আমার শেষ গন্তব্য হতেই পারতো যদি আমি বিয়ের জন্য তৈরী থাকতাম।
-পা ছাড়ো আর এখুনি ঘর থেকে বেরিয়ে যাও। নিজেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কাহিনী….. আজ ও পাহাড়ি ঝর্ণা হয়ে ঝরে পড়বে সশব্দে, অনেক কিছুই বলবে বাবাকে।
-কি হলো শুনতে পাচ্ছিস না, বললাম তো বেরিয়ে যা ঘর থেকে। কাহিনী থামার মতো অবস্থায় নেই।
-কেন বাবা পুরুষ ছাড়া নারী কি অসহায় ? সে একা বাঁচতে পারে না ? একজন পুরুষ কে সহযাত্রী না করলে কি জীবনযাত্রাটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে আমার ? নিজের মনের মালিক না হয় আমি একাই রইলাম, এই তো একফালি মন…. সেটাও সোপে দিতে হবে ? ওসব ভাগাভাগি আমার পোষায় না তুমিতো জানোই। দেখো না বাবা আমার জন্য পাত্র। বরং বিয়ের থেকে বিষ মিস্টি আমার কাছে। আমার সিদ্ধান্তে খুব অসুবিধা হলে, পারলে দ্বিতীয়টাই এনে দিও। কথা দিলাম জিভ টা এগিয়ে দেবো।
শান্ত ভাবে কথা গুলো বলে বেরিয়ে যাচ্ছিলো কাহিনী, বাবার চিৎকারে দাঁড়িয়ে গেলো। তুমি ছোট থেকেই একরোখা, বাচাল, অত্যন্ত বিশৃঙ্খল একটি মেয়ে। এ বাড়ির সব ছেলে মেয়ের থেকে তুমি সব কিছুতেই পিছিয়ে। বিষয়টা যে আমায় ভাবায়নি এমন নয়। তবে অবাধ্যতায় তুমি কিছু কম যাও না দেখছি। কিছুদিন যাবৎ তোমার ব্যবহারের পার্থক্য আমায় নিশ্চিন্ত করেছিল। ভেবেছিলাম নিজেকে এই বাড়ির উপযোগী করার জন্য পরিবর্তন এনেছো নিজের মধ্যে। এটুকু ছাড়া বিশেষ কিছুই ভাবিনি। অপলক দাঁড়িয়ে আছে কাহিনী। মন দিয়ে শুনছে এই প্রথম বাবার মুখে ওর প্রশংসা। মনকে ভালো করে দেয়ার সাধ্য রাখে প্রশংসাবাক্য, কাহিনীর মজ্জার অস্থি গুলো জানান দিচ্ছে সে কথা। তবে এরপর বাবা যে এরকম ঘোষণা দেবে কে জানতো! বাবার রূঢ় গলার স্বরে উঠে এলো এ বাড়ির অনুশাসন। বাড়িতে রাধা কৃষ্ণ পুজো নিষিদ্ধ শুধু তাঁরা প্রেমের দেবতা সেই কারণে। আর তুমি সেই বাড়ির মেয়ে হয়েও প্রেম করার দুঃসাহস দেখালে। আজ পর্যন্ত বাড়ির একটা বিয়েও এভাবে হয়নি। আমার ক্ষমতার ধারণা তোমার জানা নেই কাহিনী।
এখন কাহিনীর নিরাবতা ভাঙার সময়। নরম সুরে আত্মবিশ্বাস আনার চেষ্টা করল কোনরকমে… না বাবা ওরকম কোনো কাজ আমি করিনি তোমায় ছোট করার মতো। তোমার দাপট আমার অজানা নয় বাবা, তবুও বলি এ বাড়ির যতই অযোগ্য সন্তান হই না কেন নিজের জন্মদাতা কে লজ্জারবেশে সাজাবো এমন নির্লজ্জ কন্যাও আমি নই। তবে আমার ইচ্ছাগুলোতে তোমায় সন্মোতির মোহর লাগাতেই হবে এতটাও দুর্বলও আমি নই। চাইলে ঘর থেকে কেন বাড়ি থেকে বের করে দিও, দেখবে তখনও পুরুষহীন জীবন যাপন করছি আমি। বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় কাহিনী।
সত্যিতো কিছুদিন আগে কাহিনী মেয়ে হয়েও ওর মধ্যে মেয়ের নামগন্ধ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিল। শায়েস্তা না করে, শাস্তি না দিয়েও একটা মানুষকে পাল্টানো বোধহয় মৌর্যের পক্ষেই সম্ভব। নিজের এরকম আগাপস্তলা বদলানোর কারণ খুঁজতে চাইনি কখনো কাহিনী, তাহলেই যে ওর প্রতিবিম্ব চরম সত্যিটা ওকে দিয়ে বলিয়ে নেবে। হ্যাঁ ও মৌর্য কে ভালোবাসে। না ভালোবাসা টা কোনো অন্যায় নয়, বরং এ বাড়ির মানুষের “প্রেমে পড়া বারণ” এরকম বেআইনি নিয়মকে ধুলিস্যাৎ না করাটাই বরং অন্যায়। চাইলেই টপকানো যায় এই কাঁটাতারের প্রাচীর। তবুও পারেনি কাহিনী। তার বাবা কখনোই প্রেমের বিবাহ কে মেনে নেবে না। মৌর্যর সঙ্গে একাই পাড়ি দিতে হবে ওকে স্বপ্নের ভীনরাজ্যে। সম্যসা নয় বলা ভালো এটা কাহিনীর জীবনের সমাধানই। কিন্তু একজন সন্তান হিসেবে জন্মদাতা কে ছোট করার অধিকার তার নেই। পালিয়ে যাওয়া যে বড্ড নির্মম। লজ্জা ঘৃনা মাখানো বাবার মুখের আদল কল্পনা করলেও মরে যেতে মন চায় ওর। বাবার সম্মান বাঁচানোর তাগিদ কাহিনীর কাছে নিজের ভালোবাসাকে স্বীকার না করার ভুলের থেকেও ঠিক। না হলে কে পাত্তা দেয় অহংকারের প্রাচুর্যে ভরা “স্থাপত্যবাটির” অমানবিক প্রতিজ্ঞা কে।
মৌর্য সেন, কাহিনীর মন সিংহাসনের একছত্র সম্রাট। বাতানল গ্রামে কলেজের প্রিয় বান্ধবী সুমির মা’র বাৎসরিক কাজে গিয়ে বৃষ্টির জন্য বেশ অনেক্ষন আটকে পরতে বাধ্য হয় ফলে অনেকটা সন্ধে হয়ে যায় কাহিনীর। ফেরার পথে জল জমা রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় বেশ অসুবিধা টের পাচ্ছিলো ও। গ্রামের দিক, আলোক বাতি নেই বললেই চলে। খানা খন্দ রাস্তায় একটু আসতেই ড্রাইভ করতে হচ্ছিল কাহিনীকে। হঠাৎ দুটো বাচ্ছা ছেলে এসে গাড়ির কাঁচে টোকা মারে। বিরক্ত হয়, এড়িয়ে যায় কিছুক্ষন, তবুও খুলতে বাধ্য হয় জানলাটা। কাঁচ নামিয়ে কাহিনী পাঁচশো টাকার একটি নোট বার করে ওদের হাতে দিয়ে বলে বেরো দেখি এখন থেকে……। গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে এমন সময় একটা লম্বা দোহারা চেহারার ব্যক্তি এসে নম্র সুরে বলে ম্যাডাম.. ওদের টাকার নয়, আপনার একটু সহচর্যের প্রয়োজন। আপনার দেওয়া লক্ষ টাকাও ওদের কাজে আসবে না এই মুহূর্তে, কিন্তু আপনার একফোঁটা মানবিকতা আটকাতে পারে ওদের বিপদকে। বাচ্চা দুটোর বাড়িতে ঠাকুমার শরীর খারাপ। ওষুধ কিনতে যেতে হবে শহরে। বৃষ্টির জন্য যানবাহন নেই একদম, তারওপর লোডশেডিং। দয়া করে ওদের একটা মেডিসিন শপের সামনে নামিয়ে দিলে, একটা অচেনা মানুষকে উপকারের তালিকায় আজীবন নিজের নামটা থেকে যাবে আপনার। ছেলেটার গলায় স্বরে কি সুর ছিল বোঝেনি কাহিনী। শুধু অবজ্ঞা করার অস্পর্ধা আসেনি অহংকারী মেয়েটার। গম্ভীরতা রেখেই বাচ্চা দুটোকে বলেছিল ও……… পিছনের সিটে গিয়ে বোস। গাড়ি স্টার্ট করতে সময় নেয়নি কাহিনী। একটু এগোনোর পরই একটা বাচ্চা বলে দিদি ওই দাদাটা কি করে ফিরবে ? তুমি তো দাদাকে গাড়িতে বসতে বললেই না। লুকিং গ্লাস দিয়ে বাচ্চাটার দিকে কাহিনী অবাক ভাবে তাকায়। ভুরু কুঁচকিয়ে বলে, কি উনি এখানে থাকেন না ? আমি তো ভাবলাম লোকাল কেউ ! না না দিদি… দাদা টাকে আজি আমরা প্রথম চিনলাম।বুক পকেট থেকে কয়েকটা নোট বার করে উঁচু করে দেখিয়ে কাল শীর্ণ ছেলেটি তৃপ্তি মাখা মুখে বলল, ঠাকুমার জন্য দাদাই আমাদের টাকাগুলো দিলো। দাদাটাও শহরে ফিরবে তাই দাঁড়িয়ে আছে।কাহিনী বুজে গেছে এতক্ষণে, তার জন্য আজ অপেক্ষা করছে স্তাপত্য বাটির হুঙ্কার। তবুও কিসের টানে যে গাড়ি ঘুরিয়ে সোজা ভদ্রলোকের সামনে ব্রেকটা কোষলো কাহিনী।
মৌর্য সেন। শুধু কণ্ঠস্বর দিয়েই কাহিনীর মনের জল তরঙ্গ সৃস্টি করেছিল এই পুরুষ। তাই চোখ বন্ধ করে শুধু কণ্ঠস্বর উপভোগ করতে ইচ্ছে করে এখন কাহিনীর। ছোটবেলা থেকে পুরুষ বলতে সে শুধু জেনে এসেছে বাবা, জ্যেঠু, কাকা, দাদা, শুধু এরাই। পুরুষ বন্ধু কি হয় সেটা মৌর্য বুঝিয়েছিল কাহিনীকে। পুরুষ সঙ্গ না পেলেও ছেলে দেখে হ্যাংলামিটা কখনোই আসেনা কাহিনীর। কিন্তু কি জানি কেন সেদিন গাড়িতেই কাহিনী প্রথম বন্ধুত্বের প্রস্তাবটা রেখেছিলো। আমরা বন্ধু হতে পারি ? মৌর্যের চোখের পলক সন্মতি দিয়েছিল কাহিনীকে ।
এরপর ছেলেটি যখনই বারবার কথা বলেছে, কাহিনীর লক্ষ করেছে মৌর্য এর প্রত্যেকটা কথা কে সে একটা কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিতে পারছে না। তাই মৌর্যের বলা প্রত্যেকটা শব্দ কে কাহিনী নিজের মনের অন্তঃস্থলে পৌঁছে দিত। মৌর্য সংগীতশিল্পী। গানের হাতেখড়ি তার মায়ের কাছেই। যেদিন মৌর্যের বাড়ি প্রথম পা রেখেছিল কাহিনী ও দেখেছিল…… ওইটুকু ছোট্ট একটা বাড়িতে কি সুন্দর চারটে মানুষ ভোরের শরতের শিউলির মত টাটকা, অভিমান ওরা বাসি হতে দেয় না। একটি বাটি ভর্তি মুড়ি মাখাতে চারটি হাত একে অপরকে ছুঁয়ে থাকে।একই সরল রেখার দুটি বিন্দু দুই ভাই বোন। এটাই তো পরিবার। অসংখ্য মানুষ একসঙ্গে বাস করলেই তাকে একান্নবর্তী পরিবার বলে না। যখন একের মধ্যে সবাই বাস করে…. একজন একজন করে সেটাই তখন একান্ন হয়ে যায়। কই ওদের বাড়িতে এমন সহজ ভাবে গণিতের উত্তর মেলায় নাতো কেউ ?
বাবার জন্মদিনে কি উপহার দেবে কাহিনী যখন ভেবে পাচ্ছিল না রান্নার বুদ্ধিটা মৌর্যই দিয়েছিল। সেদিনই কাহিনী প্রথম জেনেছিল উপহার টাকা ছাড়াও কেনা যায়। কাহিনী আলমারি ভিতর থেকে ঠাকুরমার সাদাকালো অ্যালবাম টা কে বার করে বহুকষ্টে খুঁজে বার করেছিল বাবার পছন্দের ঠাকুমার হাতের তৈরি এ বাড়ির বিলুপ্ত খাবার কে। ঐদিন বাবার চোখের কোনে জল কাহিনীর চোখেও জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিলো। বুঝতে পারছিল কাহিনী…. মৌর্য আর ও মাঝনদীতে একসাথে ডুব দিয়ে তলিয়ে যাচ্ছে। জীবন যখন পাল তুলে দেয় তখন শুধু ভাসতে হয়, প্রেমের জোয়ারের যে বড্ডো স্রোত। বাঁধনহীন প্রেমের এর জোর বজ্র আটুনির থেকেও শক্ত। প্রতিমুহূর্তে রবি ঠাকুরের গানে কাহিনী খুঁজে পাচ্ছে নিজের সকল প্রশ্নের উত্তর।
পড়ন্ত বিকালে অশোক গাছের নিচে কাহিনী চুপটি করে বসে নিজের হাঁটুতে তুথনি রেখে দুচোখ মেলে দেখছিল, মৌর্য ওর ফরসা দুটো পায়ে সরু বলযুক্ত নূপুর পরিয়ে সাথে আলতার আঁচড় টেনে কাহিনীর পাদুখানি রাঙ্গিয়ে দিছে। তখনি মৌর্য প্রথম বলেছিল কাহিনী কে…… আমি যে আমার “কাহিনীর” ভালোবাসার চরিত্র হয়ে থেকে যেতে চাই আজীবন। এই পায়ের নিচেই হোক আমার নির্বাসন। কোনোরকমে তরিঘরি করে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে কাহিনী ঐ আলতার শিশিটাই উল্টে দিয়েছিলো। মাটি ভিজছে লাল রক্তে, কাহিনীর ভিতরটা তখন ফল্গু নদী, একটু খুঁচিয়ে দিলেই রক্তের ফোয়ারা ঝরবে। মৌর্য কে আঁকড়ে ধরেছিলে কাহিনী। পা নয়…… বুকের বাঁ দিকটা পুরটাই তাঁর। কিন্তু ভীষ্মের প্রতিজ্ঞার মতোই কঠিন বাবাকে টলানো। স্থাপত্য বাটির মিথ্যা অহংকার সে মানে না, তবে জীবন্ত বাবার মুখাগ্নি করতে ও পারবে না। কাহিনী চোখ বন্ধ করে কথা গুলো বলে যাচ্ছিলো……..
মৌর্য কাহিনীর গাল দুটো ছুঁয়ে বললো চোখ চাও। কাহিনী নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বললো ছুঁয়ো না আমায়, মরে যাবো আমি। জানি…. আমি তোমার মনের অপরাধী, এতো ভালোবেসেও ভালোবাসি বলার ক্ষমতা আমার নেই। তবে আমাদের দুজনের কাটানো সব মুহূর্ত গুলোকে বন্দি করে রাখবো আমার মনের গুহায়, কাউকে কখন তার নাগাল পেতে দেবো না। উদভ্রান্তের মতো মৌর্যের দিকে তাকায় কাহিনী, চোখের জলে কাজলের গলন অনেকক্ষণ আগেই শুরু হয়েছে, মুখ ভর্তি কালির প্রলেপ। অবাধ্য চুলগুলো হাওয়ার গতিপথ অনুযায়ী ঝাপ্টা মারছে ওর মুখে। শুধু পাগল হতে বাকি কাহিনী। আচমকাই নিজের হাতের তালু মৌর্যর মাথায় রেখে শক্ত চোয়ালে চিৎকার করে বলতে লাগলো…… আমার জীবনের প্রথম ও শেষ পুরুষ শুধু তুমি মৌর্য। আমার ভালোবাসা দূরত্বে বাঁচবে, তোমার বন্ধুত্বে বাঁচবে। তবে তুমি মুক্ত। চাইলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিও আমায়, আমি সয়ে নেবো, কারণ আঘাতটা আমার দেওয়া। কথা গুলো বলার সময় কাহিনী ধারাল নখ দিয়ে উগড়ে দিছে পায়ের তলার মাটিটা। সরে যাচ্ছিলো কাহিনী কাঠের পুতুলের মতো অল্প অল্প করে ওখান থেকে। ঝরো হাওয়ার মতো সামনে এসে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ির বাউন্ডারি তে আটকে থাকা ঠোঁট দুটি কাহিনীর ভিজে ঠোঁটে আজীবন তাকে না পাওয়ার সব পিপাসা ঢেলে দিচ্ছে তখন মৌর্য। যখন দুজনে চোখ মেললো….. কাহিনীর প্রিয় কণ্ঠস্বর জানিয়ে দিলো এটুকু অনুভবেই বাঁচবে তারা একটা জীবন। দুজনের স্থির দৃস্টি একেঅপরের চুষে নিচ্ছে তখন।
আগামী রবিবার তোমার আশীর্বাদ… বাবা এসে বলে গেলো কাহিনীকে। কাহিনী কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাশভারী কাহিনীর বাবা বলে দিলো একটা কথাও শুনতে নারাজ আমি। পাত্র পক্ষ কে তোমায় দেখানোর প্রয়োজনবোধ করিনি আমি। এমন গুণধর মেয়ে তুমি ! আমার এছাড়া আর উপায় কি ? জলদি সব কিছু করতে হলো। তোমার জেঠু কাকা পিসি কাউকেই কিছু বলার সময় আমি পাইনি। এমনকি তোমার মা কেও না। একেবারে রবিবারই তাদের পরিচয় হবে বাড়ির সবার সাথে।
এই প্রথমবার মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বেশিক্ষন তাকাতে পারলো না শিলাদিত্য বর্মন। নিজের আত্মজার দুটো চোখ শুধু নয় তৃতীয় নয়ন দিয়েও অগ্নিবান বেরোচ্ছে। একটু হেসে কাহিনী উত্তর দিয়েছিলো বাবাকে……. নিজেই যখন নিজেকে অপমানিত করবে বলে ঠিক করেছো কি সাধ্য আছে আমার তোমার মান রক্ষা করার। শুধু জেনে রাখো কারুর সাথে এঙ্গেজমেন্ট আমার হবে না। এ আমি তোমায় আজি জানিয়ে রাখলাম। আশাকরি আমার বুদ্ধিমান বাবা লোক হাসানোর মতো কোন কাজ করবে না। এক নিশ্বাসে শব্দ বাণ প্রয়োগ করল কাহিনী, কারণ থামলে যে খেই হারাবে ও। আজ যার সামনে মুখ খুলেছে কখনোও তার চোখের দিকে চেয়েও কথা বলার সাহস হয়নি কাহিনীর। ভালবাসা বোধহয় এমনি হয়, যেখানে ছোট ছোট নুড়ি দিয়েও সাগরের বুকে রামসেতু তৈরি করে হেঁটে যাওয়া যায় নিজের প্রিয়তম বা প্রিয়তমার কাছে। কাহিনীর ঘোর কাটল বাবার অমোঘ বানীতে।শিলাদিত্য বর্মণ তোমায় বলে যাচ্ছে…… তোমার আশীর্বাদ সেদিনই হবে, যেদিন আমি চেয়েছি।
কাহিনীর দেখতে পাচ্ছিলো….. বাবা আর মেয়ে তখন কুরুক্ষেত্র প্রান্তরের এপার ওপারে দাঁড়িয়ে। একজনের সৈন্যবাহিনী অদম্য জেদ, আরেকজনের প্রথম প্রতিশ্রুতি।
সকাল থেকেই বাড়ির সাজগোজ, খানাপিনার ব্যবস্থা, লোকজন, সবই জোরদার চলছে। দরজায় শিকল দিয়ে চুপটি করে বসে আছে কাহিনী, সবার ডাকাডাকিতেও দরজা খুলছেনা না ও। বাড়ির লোকেদের মধ্যে হালকা কানাঘুশো শুরু হয়ে গেছে, সবাই এটাই ভাবছে…. না দেখিয়ে পাত্র ঠিক করাতে মেয়ের গোসা হয়েছে। কাহিনী মনস্থির করে নিয়েছে ওই অনুষ্ঠানেই, এই বিয়েতে তার আপত্তির কথা সে জানাবে, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
বাড়ির মহিলাদের শঙ্খধ্বনিতে বুঝতে অসুবিধা হলো না কাহিনীর, পাত্রপক্ষ উপস্থিত।
দরজার ওপার থেকে বাবার আওয়াজ……. কাহিনী দরজা খোলো, চলো সবাই তোমায় ডাকছে। এখনই যেতে হবে। তুমি চলে যাও বাবা। বলো আমি আসবো না — অবাধ্যতা করোনা কাহিনী। বাবার চাপা করুন আর্জি মাখান স্বর কাহিনীকে টলাতে পারল না।
দরকার হলে জীবন কে সপে দেবে মৃত্যুর হাতে। ভেবেই অঝরে কাঁদতে লাগল কাহিনী। জীবন থেকে পরিত্রাণ খোঁজা মানুষগুলো ভালবাসতে জানেনা কাউকে। মৌর্যর বলা কথাগুলো খুব দামি ওর কাছে। সশব্দে কাঁদতে কাঁদতেই কাহিনী বলতে লাগলো……… আমি তোমায় মানা করে”………..কাহিনীর কথা শেষ হওয়ার আগেই দরজার ওপার থেকে ভেসে এলো কয়েকটি শব্দ…… কাহিনী বেশি বেলা হলে বেল ফুল গুলো শুকিয়ে যাবে তখন কিন্তু খোঁপায় বাধলে সব ঝরে পড়বে।
পায়ের তলার মাটিটা সরতে শুরু করেছে ততক্ষনে কাহিনীর। চেষ্টা করলো কথাগুলোর প্রতিধ্বনী আরো একবার শোনার। না ভুল শোনেনি ও…. এই কণ্ঠস্বর সে মরে গেলেও তার আত্মার সাথে থেকে যাবে। মৌর্য……. বলে দরজাটা টান মেরে খুলে দিল কাহিনী। দোপাটি ফুল রঙের একখানা পাঞ্জাবিতে সেজে কাহিনীর গল্প কে সত্যি করতে ওর দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে মৌর্য। কিন্তু কেন? এখানে আসার কারণটাই বা কি? হাতে শাল পাতায় মোড়া বেলফুলের টাটকা মালা। খুব প্রিয় একটা দিনে কাহিনী এভাবেই সাজতে চায়, একদিন কথায় কথায় বলেছিলো মৌর্য কে।
পাশে দাঁড়িয়ে বাবা, ঠোঁট জোড়া হাসি। রবিবারই তোমার আশীর্বাদটা হচ্ছে কাহিনী। জবাবদিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন আমি। আমি তোর বাবা। যাকে বড়ো করেছি তার বর খুঁজে বার করতে পারবো না আমি…. এটা ভাবাটা তোর মূর্খামি। কাহিনী জড়িয়ে ধরল বাবাকে। কাহিনীর কান্না বাবার গলা ও নরম করে দিল। কাহিনী বারবার বলতে লাগলো…. বাবা কিভাবে এতো কিছু জানলে তুমি আর এ বাড়ির নিয়ম ! তার কি হবে?
যে মেয়ে একটু একটু করে নিজেকে বদলে বাবার চিন্তা দূর করতে পারে, বাবার সম্মানের জন্য নিঃসঙ্গতাকে বেছে নিতে পারে, বাবার অপমান হতে দেবে না বলে নিজের জীবনটাকে বাজি রাখতে পারে, সেই মেয়ের জন্য তার বাবা এর থেকেও অনেক বেশি কিছু করতে পারে। আর এ বাড়ির নিয়ম? ও…. ওটা নয় শুধু আমি আর তুই জানলাম। ডিলটা একান্ত বাবা মেয়ের। আর নিয়ম ভাঙ্গা হলো কোথায়? মৌর্য তো আমারও পছন্দের পাত্র। যে মেয়েটাকে ঠিক করতে আমরা বাড়িসুদ্ধ লোক হিমশিম খেয়ে যেতাম, এই ছেলেটা না থাকলে জানতেই পারতাম না তোর ভেতরেও গুনের সম্ভার। উকিল ডাক্তার না হলেও আমার এই মেয়েটা মা অন্নপূর্ণার হাত দুটো নিয়ে জন্মেছে, চাইলে একটা দুটো রেস্টুরেন্টের মালিক তো হতেই পারে। কি বল তাইতো? বাবার চোখের দিকে তাকানো যে দায় হবে এটা কখন ভেবেছিলো কাহিনী? মুগ্ধতা অবশ করে রেখেছে ওকে। ঝাপ্সা চোখটাকে রুমালে মুছে বাবা মেয়েকে কাছে টেনে বলল……… মেয়ের বাবারা মেয়ের জন্য বর খোঁজে না শুধু, খুঁজে আনতে চায় বাবার অবয়ব মেশানো একটি পুরুষ, যে তাকে তার জন্মদাতার মতোই আগলে রাখবে। এবারে তৈরি হয়েনে চটপট। ঘড়ির দিকে তাকায় শিলাদিত্য বাবু। হাতে আর মাত্র দেড় ঘন্টা আছে ওই সময়ের মধ্যেই শুভ কাজটা সারতে হবে। চলো মৌর্য……..
কাহিনীর হাতে বেলি ফুলের মালাটা দিতে গিয়ে মৌর্য বলল…… হারিয়ে আবার নতুন করে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ অনেক বেশি তাইনা কাহিনী? প্রত্যাশিত ঘটনা যে মুহূর্ত দিতে পারে না, অপ্রত্যাশিত ভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনা তার দ্বিগুন দিয়ে যায়। ঠিকই বলেছিলে তুমি সেদিন……
“তোমার বাবার দাপট অনেক বেশি”। আরো একটু অবাক হওয়ার এখনো তোমার বাকি আছে কাহিনী। উনি যেভাবে খুঁজে এনে আমায় এভাবে তোমার সামনে দাঁড় করলেন! মেয়েকে সারপ্রাইজ দেবেন বললেন, তাই আমিও আর কিছু তোমায় জানায়নি, এটুকুতো করেই থাকে জামাই শশুরের জন্য….. কি বলো ??
দুজনেই হেসে কুপোকাত।
এই আস্তে আস্তে, কি করছো? স্থাপত্যবাটির কিন্তু অনেক কান। সবটা নয় তিন জনের মধ্যেই আজীবন চাপা পরে থাক। আর একটা কথা মৌর্য…… আমি সত্যিই পৌঁছতে চাই না সেই আবিষ্কারের কিনারায়, যেখান থেকে বাবা তোমাকে খুঁজে পেয়েছেন। এই রহস্যের উন্মোচন না হওয়াই ভালো আমার কাছে, বরং এই দিনটা আমার কাছে আকর্ষণীয় উৎসব থেকে যাক সারা জীবন।
সুখী, আজ ভীষণ সুখী কাহিনী। আজ ও অন্নপূর্ণা ক্যাটারিং এর মালিক। বছরের একটা দুটো দরিদ্র কন্যাদের বিয়েতে বাবাদের নিশ্চিন্ত করে কাহিনী খাওয়া-দাওয়ার ভারটা বহন করে। ওতো মৌর্যের বউ। এটাই ওকে মানায়। “মৌর্য ইভেন্ট কোম্পানি” টা জোর করেই খুলিয়েছে বিয়ের পরপরই কাহিনী মৌর্য কে দিয়ে। ব্যবসা রান করতে বেশী সময় নেয়নি। ওতো ভেবেছিল নিজের পুরো জীবনটা মৌর্য ছাড়া কাটিয়ে দেবে, কিন্তু জীবন ওর হাতে এনে দেয় নতুন চমক। দু’বছরের গৃহিণী কাহিনী ও বুঝে গেছে আশেপাশের সবকিছু থেমে গেলেও নিজেকে চলতে হয়ও নিজের কাজ শেষ না করে ছুটি নেই। কেউ কোনদিনও বুঝেছিল এত বড় করোনা মহামারী এসে পৃথিবীকে গ্রাস করবে। বন্দিদশা তেও চলমান হবে মানুষ। মানুষ পাগল মৌর্য কাহিনীকে সাথে নিয়েই করোনার লড়াই চালিয়েছে মানুষের জন্য। দায়িত্ব এড়াতে পারেনি ওরা………..
গাড়ি হঠাৎ ব্রেক কষায় কাহিনী মাথাটা ড্রাইভার এর সামনের সিটে ধাক্কা খেয়ে নিজের ব্যাকসিটে আরেকবার ধাক্কা খেলো। কি করছো কি রবীন দা, একটু আস্তে চালাও গাড়ি টা। দেখছো গাড়িভর্তি মালপত্র, আরো অনেক লিকুইড খাবার ও তো আছে, সব যদি নষ্ট যায় আমার এতটা পরিশ্রম পুরোটাই বিফলে যাবে।
ড্রাইভার একটু আমতা আমতা করে বলল সরি দিদি, ফাঁকা পথ দেখে গাড়ির স্পীডতা একটু বেশি তুলে দিয়েছিলাম, এত সুন্দর রাস্তায় মনের আনন্দে গাড়ি চালাতে গিয়ে খেয়াল করিনি সামনের বড় গর্তটা। ভাববেন না, আমি দেখে চালাচ্ছি।
কাহিনী দেখে নেয় গাড়ির পেছনের সবকিছু ঠিক আছে কিনা? এই সময় বেজে উঠল ফোনটা… এটা কাহিনীর প্রত্যাশিত ফোন, আলগা হাসি ঠোঁটে উঁকি দেবে না তা কি হয়?
-বলো বাবা? উচ্ছ্বসিত কণ্ঠস্বর কাহিনীর
-তুই কোথায় এখন?
-প্রায় এসে গেছি বাবা ” এবার নামবো।
-এত করে বারণ করলাম সেই তুই গেলি কাহিনী? চারিদিকে এত বড় একটা মহামারী চলছে………..
-সেই কারণেই তো আমার এই মহাযুদ্ধ বাবা।
-মৌর্যের শেষ নিঃশ্বাসটুকুতে আমি দেখেছি বাবা, ওর বাঁচার হাহাকার! যখন ওর প্রবল শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো, আমার মনে হচ্ছিল বাবা, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে ওর চারপাশে পুঁতে দিতে, একটু অক্সিজেন, একটু অক্সিজেনের জন্য আমার প্রাণোবন্ত মৌর্য আজ নেই। যে শরীরের উত্তাপ আমার হাতটাকে পুরিয়ে দিচ্ছিল পরের দিন সকালেই সেই মানুষটার দেহ জমা বরফ হয়েছিল আমার চোখের সামনেই।
ওর বলা কথা গুলো যে আমার কাছে একপ্রকার মন্ত্র বাবা।
-ও বলেছিল….. আমরা করব জয় নিশ্চয়, তোমায় আমায় মিলে।
সেবা যার মনস্তত্ত্বের ঠাঁই পেয়েছিলো, তার সেবা আমি চিরকাল করব এভাবেই। করোনা আক্রান্তদের সুস্থতার ব্রত ওকেই অসুস্থ করে দিলো, ছাড়তে হলো পৃথিবী মৌর্য কে… শুধু এটা ভেবে থেমে যাবো? না বাবা আমি লড়বো। যতদিন না পৃথিবীর সুস্থ হয় আমার লড়াই থামবে না। রাখছি বাবা, এবার নামবো। হোমের গেটটাকে দেখিয়ে ড্রাইভার কে সাইড করতে বলে গাড়িটা।
কাহিনীর চেষ্টায় এই হোমের মানুষ গুলো এখন অনেকটাই সুস্থ। যখন করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে কেউ প্রাণ ভরে নিঃস্বাস নেয়, কাহিনী দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পায় মৌর্যেরও অক্সিজেন স্যাচুরেশন বাড়ছে। নিঃশ্বাসে খেলা করছে ফ্রেশ বাতাস, সমস্ত উতাপ গলে জল হয়ে ঝরে পরছে কাহিনীর হাতে। সুন্দর একটা দিন কাটিয়ে এখন ফেরার পালা ওর। গাড়িতে বসে হ্যান্ড ব্যাগের বুক চিরে বের করলো কাহিনী ওর প্রাণ ভোমরা কে। ছবিটা ওকে সুখসাগরে নিয়ে যায়, ভালোবাসার ঢেউ গুলো কাহিনীকে ধাক্কা দিতে দিতে যখন কিনারায় এনে ফেলে তখনই আসে মৌর্য! পরিয়ে দেয় ওর পায়ে সদ্য সমুদ্র থেকে কুড়িয়ে আনা খোলস হীন মুক্তের নুপুর। ওরা হাঁটতে থাকে সমুদ্রের পার ধরে…………………
কাহিনীর কক্ষপথ ঘিরে অষ্টপ্রহর মৌর্য প্রদক্ষিণ করছে। মানুষটা ছুটছে কাহিনীর ভিতর দিয়েই। তাই ওর চোখে জলের কোনো জায়গা নেই। নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছে কাহিনী একবছরের শুধু সুন্দরস্মৃতির ডালা। ওর কষ্ট, চোখের জল মৌর্যের আত্মার সুখের বিচরণে বাধার কারণ হতে দেবে না – তাই কাহিনী হাসে। কাহিনীর সমাপ্তি যে ওর মৌর্য সহ্য করতে পারবে না। কাহিনী প্রান ফিরে পায় রবীন্দ্র সঙ্গীতে। তাই অবিরাম গাইছে কাহিনীর মন
”আমি তোমারও বিরহে রহিব বিলীন, তোমাতে করিব বাস, দীর্ঘ দিবসও দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষও মাস…।
আমারও পারানো যাহা চায় তুমি তাই গো।”
Copyright Reserved Aliivia D Modak
- ’83 মুভি রিভিউ: রণবীর সিং এই উপভোগ্য ছবিতে ভারতকে তার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জয়ে নিয়ে গেছেন | সিনেমার খবর
- ‘KBC 13’: অভিনেতা হওয়ার আগে অক্ষয় কুমার কীভাবে গয়না বিক্রি করতেন তা মনে করে | টেলিভিশন সংবাদ
- ‘KGF চ্যাপ্টার 2’ BO কালেকশন চার দিনে 550 কোটি, বিশ্বব্যাপী 2য় সর্বোচ্চ উপার্জনকারী