নিয়ম করে প্রতি বছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমার চতুর্থ দিন যে রীতি পালন করা হয়, সেটি করওয়া চৌথ নামে পরিচিত। অবাঙালিদের মধ্যেই এই মাঙ্গলিক উৎসব পালিত হয়। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, ইউপি ছাড়াও আরো কিছু অঞ্চলে মূলত করওয়া চৌথ অনুষ্ঠিত হয়।
সারাদিন উপোস থেকে রাতে চাঁদ দেখার পর চালুনির মাধ্যমে স্বামীর মুখ দেখে এবং উপোসরত প্রতিটি স্ত্রী তাঁর স্বামীর হাতের জল ও খাবার খেয়ে তবেই এই উপোস ভঙ্গ করেন। এটি স্বামীর মঙ্গল কামনায় স্ত্রীরা পালন করে থাকেন আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
এই করওয়া চৌথ নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে হয়ে থাকে। কার্তিক মাসের পূর্ণিমার চতুর্থ দিন করওয়া চৌথ সমগ্র দেশ জুড়ে পালিত হয়। তেমনি এই করওয়া চৌথ এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই উপবাস পালন করতে হয়। ২০২২ এর করওয়া চৌথ এর শুভ সময় হল ১৩ ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত ১.৫৯ থেকে ১৪ ই অক্টোবর শুক্রবার ভোর ৩.০৮ পযন্ত।
করওয়া চৌথ কেন পালন করা হয় ?
মূলত তিনটি পৌরাণিক কাহিনী আছে বলে মনে করা হয় এই করওয়া চৌথ কে ঘিরে।
করওয়া চৌথ এর প্রথম পৌরাণিক কাহিনী
দ্রৌপদী যখন তাঁর পঞ্চ পাণ্ডব স্বামী নিয়ে অজ্ঞাতবাস এ ছিলেন সেই সময় সেই সময় ভীষণই নরকীয় দুর্যোগ আসে পঞ্চ পান্ডবদের ওপর। যদিও সেই সময় অর্জুন নীলগিরি পর্বত আহরণ করছিলেন। কিন্তু অন্যান্য চার ভাইদের ওপর একের পর এক আক্রমণ এ পরিশ্রান্ত হয়ে দ্রৌপদী তাঁর সখা স্বয়ং কৃষ্ণ কে ডেকে তাঁর স্বামীদের রক্ষণাবেক্ষণের উপায় জানতে চাওয়ায় ভগবান কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে দেবী পার্বতীর তাঁর স্বামী অর্থাৎ মহেশ্বরের কল্যানে উপবাস করে করওয়া চৌথ করার পরামর্শ দেন। তারপর থেকেই পান্ডবদের ওপর সমস্ত দুর্যোগ কমে যায় শেষে তারাই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জয়ী হয়।
করওয়া চৌথ এর দ্বিতীয় পৌরাণিক কাহিনী
করওয়া নামে এক যুবতী জলাধারে স্নান করছিলেন, এবং তাঁর স্বামী সেই জলাশয়ের সামনে বসে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেই সময় একটা কুমির করওয়ার স্বামীকে গিলে খেয়ে নেয়। করওয়া ছিল অন্তত প্রতিব্রতা। কোন উপায় না দেখে তার পরনে সুতির শাড়িটি খুলে কুমিরের মুখটি হাঁ অবস্থায় বেঁধে দেয়। এবং যমরাজ কে ডাকতে থাকে। ভীষণই প্রতিব্রতা ছিল এই করওয়া। তাই তার ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য হয় যমরাজ। করওয়া যমরাজ কে বলেন যদি এই কুমিরটিকে নরকে না পাঠানো হয় এবং তার স্বামী প্রাণ ফেরত দেয়া না হয় তাহলে করওয়া যমরাজ কেউ অভিশপ্ত করবেন। রীতিমতো ভয় পেয়ে যমরাজ করওয়া র কথা মেনে নেয়। করওয়ার স্বামীর প্রাণ ফিরিয়ে দেয় সাথে কুমিরটিকে নরকে পাঠায়। এই ভাবেই করওয়া তাঁর স্বামীর প্রাণ রক্ষা করেন, এবং কার্তিক মাসের পূর্ণিমার চতুর্থ দিন উপোস করে তাঁর স্বামীর দীর্ঘায়ু প্রাথনা করেন।
করওয়া চৌথের তৃতীয় পৌরাণিক কাহিনী
বীরবতী নামক এক রাজকন্যা ছিল। আর এই বীরবতী ছিল তাঁর সাত ভাইয়ের একটি মাত্র বোন। সাতভাই তাদের বোনকে ফুলে মুড়ে রাখতো। একসময় বিরবতীর বিয়ে হয়। তারপর বীরবতী করওয়া চৌথ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, যথারীতি সে সেই উপবাস করে। কিন্তু সেদিন চাঁদ মেঘের আড়ালে থাকে কিছুতেই স্পষ্ট হয় না। আর চাঁদ না দেখে কিছুতেই জল ও খাবার গ্রহণ করবে না। কিন্তু তাঁর ভাইরা কিছুতেই তাঁর বোনের এই ক্ষিদে তেষ্টার কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। অনেক করে বোনকে অনুরোধ করছে খাবার জল খেয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু বীরবতী তাঁর প্রতিজ্ঞায় অনড়। চাঁদ দেখে তবেই ভক্ষন করবে। এমন সময় সাত ভাই পিপিল গাছের ওপর একটি আয়না গোল করে কেটে গাছের আড়ালে রাখে এবং নিচ থেকে এমন ভাবে আলো দেয় যাতে ওই গোলাকার আয়নাটি একদম চাঁদের মতো দেখতে মনে হয়। বীরবতী সেটাই চাঁদ মনে করে খাবারের গরস মুখে দেয় এবং সেই সময় রাজদূত এসে খবর দেয় বীরবতির স্বামী পরলোক গমন করেছে।
স্বামীর মঙ্গল কামনায় স্ত্রীরা এই করওয়া চৌথ (karwa chauth) পালন করে থাকে। বলা হয় এই মাঙ্গলিক রীতি পালনে স্বামীদের সুন্দর ও দীর্ঘায়ু জীবন লাভ করে।
আরও পড়ুন –
- Best Tips On Getting Pregnant । গর্ভবতী হওয়ার সেরা সাতটি টিপস
- নারকেলের জন্ম কিভাবে হয়েছিল
- বাত নিরাময় ও ব্যাথা থেকে মুক্তির উপায়
- মহাভারতের ২৫ টি অজানা কথা যা জানলে আপনিও অবাক হবেন
- গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কীভাবে বাড়াবেন
- ‘অন্য রকম কাহিনী’ – কলমে অলিভিয়া দে মোদক
-
স্তনের আকার বলে দেয় নারীর ব্যক্তিত্ব, বলছে সামুদ্রিক শাস্ত্র