ভগবান শ্রী বিষ্ণু অনেক বার এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন পাপিদের নাশ করার জন্য। কিন্তু তিনি একবার এক সতী সাবিত্রী নারীর সতীত্ব নষ্ট করেছিলেন।
শিব পুরাণের রুদ্র সংহিতাতে বর্নিত কথা অনুসারে বিত্রচিতি নামে এক দানব রাজা ছিলেন। তিনি খুব শক্তিশালী ছিলেন। কিন্তু তিনি দানব রাজা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর প্রজারা খুব শান্তিতে ছিলেন। এছাড়াও স্বর্গ মর্ত ও পাতালে শান্তি বিরাজ করতো। তাঁর পুত্র দাম্ভ্য ছিলেন পরম ধার্মিক। তিনি ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত ছিলেন।
দানব রাজা বিত্রচিতির পর দাম্ভ্য রাজা হয়েছিল। কিন্তু দাম্ভ্য রাজা হওয়ার পর তাঁর কোন পুত্র সন্তান ছিল না। তিনি খুব দুঃচিন্তায় ছিলেন যে তাঁর অনুপস্থিতিতে এই রাজ্পাট কে দেখাশোনা করবে। তাই তিনি দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের কাছ থেকে বিষ্ণু মন্ত্র নিয়ে গভীর বনে তপস্যা করতে গিয়েছিলেন।
তপস্যা করতে করতে তার অনেক বছর কেটে গিয়েছিল। তার দরুন তার মস্তক থেকে এক উজ্জল জ্যোতি নির্গত হতে লাগলো। এই তেজ এত বেশি ছিল যে সমস্ত দেবতা, মুনি, মানুষ অতিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দেবরাজ ইন্দ্র সমেত সমস্ত দেবতাগন শ্রী বিষ্ণুর কাছে গিয়ে এর নিবারণে উপায় জানতে চেয়ে ছিলেন।
তখন শ্রীবিষ্ণু বলেছিলেন এতে কোন ভয়ের কারণ নেই। এ আমার ভক্ত দাম্ভ্য রাজা। তাঁর কঠোর তপস্যার কারনে এই রকম জ্যোতি নির্গত হচ্ছে। তিনি পুত্র কামনায় আমার তপস্যা করছেন। এই কথা শুনে দেবরাজ ইন্দ্র সহ সমস্ত দেবতা গন শান্ত হয়ে সবাই নিজ নিজ স্থানে চলে গেলেন।
সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি লাভ ও বাড়ির সুরক্ষা দেবে হলুদ
তারপর শ্রী বিষ্ণু দাম্ভ্যর কাছে গিয়ে তার বর প্রদান করলেন। দাম্ভ্য রাজ শ্রী বিষ্ণুর কাছে এমন পুত্র সন্তান চাইলো যে সে যেন বিষ্ণু ভক্ত হন এবং তিন লোক জেতার ক্ষমতা থাকে। এই কথা শুনে শ্রী বিষ্ণু তথাস্তু বলে চলে গেলেন। দাম্ভ্য রাজ সেদিকে নমষ্কার করে রাজভবনে ফিরে এলেন।
এবং কিছু দিনের মধ্যেই তার পত্নী ভাগ্যবতি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন। দানব রাজ দাম্ভ্য সমস্ত বিধিসূচক নিয়ম আচার মেনে তাঁর পুত্রের নামকরণ করলেন। তাঁর নাম রাখলেন শঙ্কচুর। শঙ্কচুর খুব তেজস্যি বালক ছিলেন। তিনি বাল্য অবস্থাতেই সমস্ত বিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করেন।
যখন তিনি একটু বড় হলেন তখন তিনি জ্যাগি ভব্যমুনি উপদেশে ব্রহ্মার তপস্যা করার জন্য চলে গেলেন। অনেক বছরের তপস্যার পর ব্রহ্মা সন্তুষ্ট হয়ে বর প্রদানের জন্য উপস্থিত হলেন। তখন শঙ্কচুর বর চেয়েছিলেন যে স্বর্গ মর্ত পাতালে সে যেন বিজয়ী হতে পারেন এবং কোন দেবতা তাকে পরাস্ত করতে না পারে। ব্রহ্মা বর প্রদান করলেন। এছাড়াও তাকে এক বিষ্ণু কবজ দিলেন এবং বললেন যে সে যেন বর্দ্যিবনে যায়। সেখানে ধর্মধাজের কন্যা তুলসী কাম ভাবসে তপস্যা করছে। তুমি সেখানে গিয়ে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও।
শঙ্কচুর ব্রহ্মার কথা মত বর্দ্যিবনে উপস্থিত হলেন। সেখানে তুলসীকে দেখে মনমুগ্ধ হয়ে গেলেন। এবং সে তুলসী কে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলেন। তুলসী তাঁর পরিচয় জানতে চাইলেন। শঙ্কচুর শ্রী বিষ্ণু কবজ প্রাপ্তের মাধ্যমে তাঁর পূর্বজন্মের সব কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। তাই তিনি বলেন যে সে পূর্ব জন্মে শ্রী কৃষ্ণের পরম ভক্ত সুদামা ছিলেন। রাধার অভিশাপে এই জন্মে দানব রাজ শঙ্কচুর হয়ে জন্মেছে।
সূর্যোদয়ের পরে – অন্য স্বাদের ভালবাসার বাংলা গল্প, প্রাপ্ত বয়স্কদের গল্প
সে এখন তিন লোকের রাজা। শঙ্কচুরের এই সত্য বচনে তুলসী সন্তুষ্ট হলেন। তাকে গান্ধর্ব মতে বিবাহ করলেন এবং রাজ ভবনে ফিরে এলেন। গুরু শুকাচার্য শঙ্কচুর কে সিংহাসনে বসালেন এবং দেবতাদের উদ্দেশে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। ব্রহ্মার বরের দরুন দেবতারা তাকে পরাস্ত করতে পারলেন না। তখন দেবতাদের সুরক্ষার জন্য ভদ্রকালি শঙ্কচুরের সাথে যুদ্ধ করলেন। কিন্তু তাকে পরাস্ত করতে পারলেন না। তখন এক আকাশ বানী হল যে, হে দেবী যতদিন শঙ্কচুরের কাছে শ্রী বিষ্ণু কবজ এবং তাঁর পত্নী তুলসীর সতীত্ব থাকবে ততদিন পর্যন্ত শঙ্কচুরকে পরাস্ত করা যাবে না।
এই কথা শুনে দেবী কালী মহাদেবের কাছে গিয়ে আকাশ বানীর সমস্ত কথা বললেন। এই কথা শুনে ভগবান শিব শ্রী বিষ্ণুর কাছে গিয়ে শঙ্কচুর কে বধের জন্য বললেন। এরপর শ্রী বিষ্ণু সেখান থেকে চলে গেলেন এবং এক ব্রাহ্মণ রূপে শঙ্কচুরের সামনে উপস্থিত হলেন এক উপযাজক হিসেবে। তিনি শঙ্কচুর কে বললেন হে রাজা আমাকে কথা দিন আমি যা চাইব তা আমাকে দেবেন। শঙ্কচুর ওঁম উচ্চারণের সাথে তাকে কথা দিলেন।
আমি যখন হবু মা, সমস্যা থেকে সমাধান
তখন ছদ্মবেশে শ্রী বিষ্ণু তার কাছ থেকে শ্রী বিষ্ণু কবজ চাইলেন। শঙ্কচুর তাঁর প্রাণের চেয়ে প্রিয় কবজ তাকে দিতে বাধ্য হলেন। এই ভাবে শ্রী বিষ্ণু তার কাছ থেকে কবজ নিয়েছিল। এরপর শ্রী বিষ্ণু শঙ্কচুরের রূপ ধারণ করে তুলসীর মহলে গেলেন তখন দেবী তুলসী ছদ্মবেশী শঙ্কচুর কে ভগবান হিসেবে সেবা করলেন। এরপর তারা একান্তে সময় কাটালেন। কিছু সময় পর দেবী তুলসী যখন বুঝতে পারলেন যে এ ওর স্বামী নন তখন ছদ্মবেশী শ্রী বিষ্ণু কে জিজ্ঞাসা করলেন কে তুই যে আমার সতীত্ব নষ্ট করলি ? পরিচয় দাও নাইলে আমি অভিশাপ দেব। এই কথা শুনে ভগবান শ্রী বিষ্ণু তার আসল রূপে আবির্ভূত হলেন।
কিন্তু তুলসীর সতীত্ব নষ্ট হয়ে যায় জন্য তিনি কুপিত হয়ে বলতে লাগলেন যে, হে বিষ্ণু তোমার মন পাথরের মত কঠোর, তোমার মনে কোন দয়া নেই। আমার সতীত্ব নষ্ট হওয়ার দরুন নিশ্চিত আমার স্বামী মারা গিয়েছেন। যেহেতু তোমার মন পাথরের মতো কঠোর তাই তোমার শরীর পাষান হয়ে যাবে এই অভিশাপ দিয়ে তিনি কাঁদতে লাগলেন।
এই সময় সেখানে মহাদেব উপস্থিত হলেন এবং বললেন তুমি যা তপস্যা করেছ এটা তারই ফল তুমি যা চাও তাই হবে। তুমি এখন তোমার দেহত্যাগ করে লক্ষী সমান হয়ে শ্রী হরির সাথে বৈকুণ্ঠে প্রবেশ কর। তোমার এই শরীর যেটা তুমি ছেড়ে দেবে সেটা নদী রূপে পরিবর্তন হবে। এই নদী ভারত বর্ষে গন্ডকি নদী নামে প্রসিদ্ধ হবে। কিছু সময় পরে দেবতাদের পূজার প্রধান সামগ্রী হিসেবে তুলসী পাতা ব্যবহৃত হবে। তুমি তিন লোকে শ্রী হরি বিষ্ণুর সাথে বাস করবে এবং পুস্পদের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ বৃক্ষ হবেন। তুমি বৈকুণ্ঠে বৃক্ষাধৃতাষ্টি নামে সর্বদা শ্রী হরির সাথে একান্তে ক্রীড়া করবে।
শ্রী হরি তোমার শাপের কারনে শীলা রূপে সর্বদা গন্ডকি নদীর তীরে অবস্থিত থাকবে। এই শীলা পরম পুণ্য প্রদান কারি শালগ্রাম শীলা রূপে পূজ্য হবে। বিষ্ণুর শালগ্রাম শীলা আর বৃক্ষ সরুপ তুলসীর সমাগম সর্বদা অনুকূল তথা সর্ব প্রকার পুন্যের বৃদ্ধি ঘটাবে। যে শালগ্রাম শীলার ওপর থেকে তুলসী পাতাকে দূরে রাখবে সে জন্মাতর স্ত্রী বিয়োগী হবে ও শঙ্খ থেকে যে তুলসী পাতা সরাবে সে ভারহীন হবে আর সাত জন্মধরে রোগী হবে। যে জ্ঞানী শালগ্রাম শীলা,শঙ্খ ও তুলসী পাতা একসাথে রাখে সে শ্রী হরির খুব প্রিয় হবে। মহাদেব ওই সময় শালগ্রাম শীলা ও তুলসীর মাহাত্ম্য বর্ণনা করেন।
এই কথা শুনে তুলসী পরম আনন্দিত হলেন এবং তিনি তাঁর দেহ ছেড়ে দেবী রূপে শ্রী হরির সাথে বৈকুণ্ঠে চলে গেলেন। ওনার ছেড়ে দেওয়া শরীর গন্ডকি নদী রূপে প্রভাবিত হতে লাগলো আর ভগবান বিষ্ণু নদীর তটে মানুষের পুণ্য প্রদান শীলা রূপে থেকে গেলেন। এই শীলা খন্ড যখন নদীতে পড়ে তখন পরম পুণ্য প্রদান করে।