অনুগল্প – “প্রসাদ” – কলমে আলিভিয়া দে মোদক

bangla anu golpo prosad writer Aliivia D Modak

সকাল থেকে ব্যাস্ততা চূড়ান্ত থাকে অভয়া দেবীর। অনেকে বয়েসে গিয়ে মা ডাক শুনতে হয়েছিল তাকে, প্রায় ১৪ বছর পর। তার ঈশ্বর এর কাছে কাতর মিনতি আর অগাধ বিশ্বাস…… জীবনের এতটা সময়ের পরও তাকে মাতৃত্বের স্বাদ দিয়েছিলো।সংসার থেকেও ঈশ্বর গুরুত্ব দেওয়া মানুষটার একমাত্র পুত্রবধু কিনা চরম নাস্তিক।পুজো — উপোষ দূরে থাক ঘুরেও তাকায় না ঠাকুর ঘরের দিকে। মনোকষ্ট বলতে এই ষাটউর্ধ বয়সে এসে এটুকুই। চিন্তা ধারার বিস্তর পার্থক্য প্রফেসর বৌমার সাথে ঠাকুর ঠাকুর করা শাশুড়ি মায়ের। অনেকবার ছেলে অমৃত বলেছে মা কে — একদম তো সময় হয়না অরুনিমার, তোমায় সাহায্য করার, তাহলে আমরা এমন কাউকে রাখি যে তোমায় হেল্প করে দেবে সাংসারিক কাজে। আমি একাই ঠিক আছি এ সংসারের জন্য, আর নিপা তো ঠিকে কাজটা সামলে দেয়, আর ওসব লোকজন বাড়িয়ে কাজ নেই বাড়িতে। তারচেয়ে বল না এবার বৌমা কে শিবরাত্রির দিন বাবার মাথায় তোর মঙ্গল কামনায় জল ঢালতে। আমি আর কদিন আছি বলতো ?

মা তুমি তো জানোই ও মন্দিরে ধারপাশ মারায় না, আর উপোষ? আরে নানা উপোষ করতে বলছি না, মন্দিরে না যাক বাড়িতেই বাবার মাথায় বেলপাতা আর জল দিয়ে না হয় খেয়ে নেবে। থাক না মা……. ওসব বাদ দাও। তোমার কখনো অসুবিধা হলে বলো আমরা কাউকে একটা ব্যবস্থা করবো তাহলে।

রাতে রুটির আটা মাখতে ইচ্ছা করছে না আজ, ভীষণ বাতের ব্যথাটা বেড়েছে, তারওপর চরম গরম পড়েছে। ছেলে অফিসের কাজে বাইরে গেছে, খাবার লোক বলতে দুজন মাত্র। বৌমা কে ফোন করে বললে খাবার আনিয়ে নেবে। তবে আজ পূর্ণিমা— নিরামিষ।তাই বাইরের খাবার খাবে না।বৌমা না হয় কিছু আনিয়ে খাবে,একদম নিরামিষ খেতে পারেনা মেয়েটা। আসলে সারাদিনের খাটা খাটুনির পর খালিপেটে কি আর ঘুম আসে! থাক তারচেয়ে বরং ওই সুয়েগী না জোমেটো কিসব আছে ওগুলো দিয়ে অর্ডার করে কিছু আনিয়ে নিতে বলবো। নিজে দুধ দিয়েই কাজ চালিয়ে নেবে রাতে ……..ভাবতে ভাবতে ফোনটা বাজছে।

অভয়া দেবী — হ্যা বলো বৌমা

বৌমা — মা আজ আর রাত্রে রুটি করতে হবে না আপনাকে। আমার কলেজের সামনে একটা মন্দিরে ভোগ বিতরণ হচ্ছে। খিচুড়ি, আলুর দম, আর পায়েস। বেশ ফয়েল প্যাকিং। নিয়ে যেতে কোন অসুবিধা হবে না।

অভয়া দেবী — কিন্তু বৌমা তুমি তো ঠাকুর-দেবতা মানো না, মন্দিরে যাওনা।তাহলে……..?

বৌমা — তাতে কি মা!আপনি তো মানেন। আপনার ছেলে বলে আপনি ভোগের প্রসাদ খেতে খুব ভালোবাসেন। মন্দিরে ঠাকুরঘরে হাতজোড় করে দাঁড়াতে নাই পারি, তবে আমাদের জ্যান্ত ঠাকুর তো আপনারাই , মানে আমার বাপি, মামনি আর আপনি । এটুকু ভালোলাগার খেয়াল তো রাখতেই পারি……। এখন রাখি মা, আমার লাইন চলো এসেছে।ফিরে একসাথে খাবো।

অভয়া দেবীর চোখে তখন নোনা পানি টলমল করছে।হাতজোড় করে তিনি ঠাকুরের কাছে প্রাথনা করছে, আমার বৌমার এই মাতৃভক্তি কে তোমার চরণে অর্পণ করলাম ভোলানাথ । তুমি ওরা কল্যান করো।

আরও গল্প পড়ুন – ইংলিশ মিডিয়াম ও বাংলা মাধ্যম স্কুলের আত্মকথা — অলিভিয়া দে মোদক
শিব ও পার্বতীর প্রেম ও বিয়ের গল্প – লেখিকা অনামিকা
গল্প – কুরুক্ষেত্র অভিযান । লেখক – সুনীত অধিকারী
সূর্যোদয়ের পরে – অন্য স্বাদের ভালবাসার বাংলা গল্প, প্রাপ্ত বয়স্কদের গল্প

follow khobor dobor on google news