“ব্রেনোহুমোটক্সিক” বাংলা ভুতের গল্প – লেখক সুনীত অধিকারী

bangla bhuter golpo by suneet adhikary - khobor dobor

শীতের বিকেল সামনের বইমেলার জন্য একটা উপন্যাস লিখছে, প্রায় শেষের দিকে হয়ে এসেছে, ৪:৩০ টে বাজে গোবিন্দ কে হাক দিলাম গোবিন্দ এসে হাজির হলো কফির জন্য বলতে চাচ্ছি হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো। আমি গিয়ে দেখলাম সংকর কাকা এসে হাজির; পরনে আজ সিল্কের পাঞ্জাবি এবং নতুন পারফিউমের গন্ধ হাতে খাবার এবং মিষ্টির প্যাকেট; আমি রসিকতা করে জিজ্ঞেস করলাম
” আরে কি ব্যাপার আজ তো পুরো অন্য স্টাইলে হ্যা, তা কারণটা কি আবার বিয়ে করছেন নাকি?”

সংকর কাকা একটুও রাগলেন না আমার কথায় বরং হেসে উত্তর দিলেন। ভেতরে প্রবেশ করে গোবিন্দর হাতে প্যাকেটগুলো দিয়ে বললেন ” আজ ডিনার এখানে আমি খাবার নিয়ে এসেছি… কিন্তু এখন কফি “।
গোবিন্দ চলে গেল, সংকর কাকা চেয়ারে বসে একটা চুরুট ধরালে সংকর কাকা একটু হেসে একরাশ ধুমো ছেড়ে বললেন
“I started my senior citizenship journey today “। আমি এগিয়ে গিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম ” কংগ্রাচুলেশন্স এন্ড হ্যাপি বার্থডে.. “। হাত মিলিয়ে হেসে বললেন ” থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ..”
সবই তো হবে… তবে আজ আমি ঠিক করেছি তোমায় আমার এক বিশেষ অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করব “- বললেন শঙ্কর কাকা।
চুরুট এ আরেকবার আগুন দিয়ে বললেন ” বসো তবে… “
আমিও সবাই বসে একটা সিগারেট ধরালাম শংকর কোন গল্প শুরু করল।

আজ থেকে প্রায় বহু বছর আগেকার কথা সালটা ঠিক মনে নেই বোকারো ঘটনার অনেক বছর আগে আমি তখন ছিলাম দার্জিলিং তখন আমি জোয়ান মানে টোয়েন্টিস এ, প্রথম দিন নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাচ্ছি বাসে করে বাস গেল মাঝরাস্তায় খারাপ হয়ে। রাত্রিবেলায় তখন প্রায় ন’টা বাজে কন্ডাকটর বলল “আপনাদের সকলকে সামনের হোটেলে রাত কাটাতে হবে….” আমার পকেট এ বেশি টাকা নেই তাই ঠিক করলাম বা সেই রাত বাসে কাটাবো। কিন্তু কন্টাকটার জানালো ” বাসে থাকা যাবেনা…বাস গ্যারেজে নিয়ে যেতে হবে “

অগত্যা শেষে জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে ঠাঁই নিলাম হঠাৎ দেখি জঙ্গলের মধ্যে এক কবরখানা, খ্রিস্টানদের কবর খানা। পাহাড়ি জঙ্গল যেরকম হয় আরকি চারিদিকে পাইন গাছ এবং অন্যান্য নানা রকম ঝোপঝাড় তারই মধ্যে একটি করে কবর। এদিক ওদিক ঘুরে অবশেষে একটি কবরের পাশে একটা গাছের ঠেস দিয়ে বসলাম। প্রায় আধ ঘন্টা কেটে গেছে হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা পায়ের আওয়াজ ঘুরে দেখি অন্ধকারে কে একজন এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। প্রথমে অস্পষ্ট তারপর হালকা স্পষ্ট একজন বিদেশি ভদ্রলোক, কিছু একটা ভেবে ভদ্রলোক হঠাৎ আমার কাছাকাছি এসে থেমে গেলেন আমাকে দেখতে পেয়ে ভাঙ্গা বাংলায় বললেন ” মাইকেল ডিসুজার কবর কোনটা বলতে পারবে ভাই?? “
“ডক্টর মাইকেল ডিসুজা…?? “
আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকলাম তারপর মাথা নেড়ে না জানিয়ে দিলাম। ভদ্রলোক আবার খুঁজতে লাগলেন ” আপনি কি এত রাতে এখানে কবর খুজছেন?? ” জিজ্ঞেস করলাম আমি
“আমারই তো কবর না খোঁজার কি আছে? আপনি আপনার কবরে আপনার মতন বসে থাকুন না কে মানা করেছে?? ” উত্তর দিলেন ভদ্রলোক।

আমি তো শুনে প্রথমে থতমত খেয়ে গিয়েছিলাম লোকটা বলে কি? ওঁর কবর !! আবার আমায় নিজের কবরে বসে থাকতে বলল….. আমি থাকতে না পেরে বিরক্ত হয়ে বললাম ” আপনি কি পাগল? এত রাতে কবর খুঁজতে এসে ভুলভাল বকছেন ইয়ার্কি হচ্ছে। নাকি টিভি চ্যানেলের লোক “
“আচ্ছা মুশকিল মরার আগে চোখের পাওয়ার টা বেড়েছিল হতচ্ছাড়া গুলো চশমাটা কবরে দিতে ভুলে গেছে তাইতো সব ঝাপসা দেখছি….. আপনি কি অন্য তল্লাটের ভূত এত প্রশ্ন করছেন যে ?? ” উত্তরে বললেন মাইকেল বাবু। আমার তখন ঐ শীতের রাতে ঘাম ধরতে শুরু করেছে; গলাও শুকিয়ে আসছে মনে মনে বললাম ” যদি বলি মানুষ তাহলে সিওর ঘাড় মটকাবেন “
ভয়ে ভয়ে বললাম
” আগে আমার নাম সংকর… আমি… আমি….আমি… “
” কি আমি আমি করছেন?”
বিরক্ত হয়ে বলল মাইকেল বাবু
” আমি মানুষ ” ফস করে বলে দাঁতকপাটি লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
” মানুষ..মানে আপনি জীবিত তা এখানে কি করছেন?”
” আশ্রয় ” ক্ষীণ গলায় উত্তর দিলাম আমি।
” হমমম বুঝেছি… ” বলে মাইকেল বাবু কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলেন তারপর বললেন ” একটা হেল্প করতে পারবেন? “
” হে… হে… হেল্প….কি হেল্প? ” কাঁপা গলায় বললাম আমি।
“আমার খবরটা যদি খুঁজে দেন প্লিজ” বললেন মাইকেল বাবু।
আমি এদিক ওদিক অন্ধকারে দেখতে লাগলাম 10 থেকে 12 টা কবরের নাম পড়ার পর অবশেষে খুঁজে পেলাম ডক্টর মাইকেল ডিসুজার কবর। মাইকেল বাবু আমার পিছনে পিছনে ঘুরঘুর করছে ঘাড় মটকানো ভয়ে বুক ধরফর করছে কবর দেখানোর পর মাইকেল বাবু থ্যাংক ইউ জানালে আমি থাকতে না পেরে তাকে প্রশ্ন করলাম ” আপনি ভূত হয়ে এত রাতে কোথায় গিয়েছিলেন এবং আপনার আত্মা এখনো শান্তি পায়নি কেন? “
” কারণ আছে কাজ বাকি আছে তাই ” গম্ভীর গলায় উত্তর দিলেন মাইকেল বাবু।
” কি কাজ? কি কারন জানতে পারি যদি আপত্তি না থাকে হয়তো আপনার উপকারে লাগতে পারি ” সাহস নিয়ে বললাম আমি কথাগুলো।

মাইকেল বাবু একটু চিন্তা করে বললেন ” চলুন ওদিকে একটা ভাঙ্গা পেইন্ট আছে ওখানে গিয়ে বসে কথা বলা যাক”
বেঞ্চে বসে মাইকেল বাবু বললেন “প্রথম থেকে শুরু করি…. লন্ডন থেকে কেমিক্যাল সাইন্স এর উপর ডক্টরেট উপাধি অর্জন করে দেশে ফিরে নিজের বাড়িতে এক বিশেষ জিনিস নিয়ে রিসার্চ শুরু করি।”
” বিশেষ জিনিস!!” ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
” হ্যাঁ বিশেষ জিনিস “
” এমন এক কেমিকাল যা দিয়ে মানুষের ব্রেন.. যেকোনো মানুষের ব্রেন চিরকাল যুগ যুগ ধরে অক্ষত থাকবে…. এবং এই কেমিক্যাল দিয়ে মানুষের ডিএনএ তে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারলে সেই একই গুণের অন্য আরেক জীবিত মানুষ আর্টিফিশিয়াল পদ্ধতিতে তৈরি করা যাবে। এবং আমি পেরেছিলাম সেই কেমিক্যাল তৈরি করতে আমি ওটার নাম দিয়েছিলাম ‘ব্রেনোহুমোটক্সিক ‘।

কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন মাইকেল বাবু আমি জিজ্ঞেস করলাম তারপর
“জিনিসটা যদি একবার সরকারের হাতে তুলে দিতে পারতাম আমি হতাম পৃথিবীর সর্বশেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক….. কিন্তু যেদিন আমি ওটা নিয়ে বিদেশের ল্যাবরেটরি তে জমা করব বলে কলকাতা রওনা হলাম রাস্তায় বজ্রপাতে গাড়িতে আগুন লেগে আমার মৃত্যু হয়। পরে যখন বুঝতে পারি যে আমি মরে ভুত হয়ে গেছি তখন এক অবাস্তব ব্যাপার…. চোখের সামনে যা দেখি সে কি সত্যি আমি….. আমিইইইইইই…. নিজের পুড়ে যাওয়া মৃত দেহকে সমাধিস্থ করছি ওই কবরে এটা কি করে সম্ভব?”
আমি বাধা দিয়ে বললাম ” দাঁড়ান দাঁড়ান….আপনি ভূত… হ্যাঁ মানছি বড় সায়েন্টিস্ট ছিলেন কিন্তু এতটা ধাপ্পাবাজি বিজ্ঞান নিয়ে সত্যিই নিতে পারছিনা, আপনি আদেও ভূত কিনা সেটাই আমার সন্দেহ লাগছে।”
মাইকেল বাবু হালকা হেসে বললেন
“বিশ্বাস হচ্ছেনা ভুতরা অদৃশ্য হতে পারে জানেন তো “
বলে সে চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্য তারপর আবার ফিরে এলো। আমি বললাম ” মানলাম… কিন্তু যেটা বলছিলেন সেটা কি করে সম্ভব? ” ” সাইন্স ” উত্তর দিলেন মাইকেল বাবু। ” সাইন্স! মানে? ” সন্দেহজনকভাবে বললাম আমি।
” আমার সঙ্গে সেদিন ওই ব্রেনোহুমোটক্সিক কেমিকাল ছিল সেটা আমি বিদেশে নিয়ে যাচ্ছিলাম একটা বিশেষ টেস্টের জন্য আমার বন্ধুর ল্যাবরটরি তে ; সেটা হল ওই কেমিকাল কে ফোন্ত্রন এবং নিউট্রন দিয়ে চার্জ করতে হবে তবেই সেটা ক্লোন এর আকার নিতে সম্ভব হবে, সেদিন যখন বিদ্যুত গাড়িতে পড়ল কোন কারণে সেই ব্রেনোহুমোটক্সিক হাইভোল্টেজ বিদ্যুতের সংস্পর্শে এসে ক্লোন বানাতে সফল হয়… বলে মাইকেল বাবু একটু থামলেন।

ভগবান শ্রী বিষ্ণু এক নারীর সতীত্ব নষ্ট করেছিলেন কেন জানেন ?

“কিন্তু সেটা আপনারই রুপ ধারণ করলো কেন? অন্য কেউ তো হতে পারতো? ” জিজ্ঞাসা করলাম আমি।
” সেটা বোধহয় ব্লাডের জন্য… আমি ক্যামিক্যাল ট্রাইতে নিজের ব্লাড স্যাম্পেল দিয়েছিলাম প্রথম ক্লোনিং টা আমার উপরেই টেস্ট করব বলে “।
” ভোরের আলো ফুটে আসছে এবার আমার যাওয়ার সময় হয়ে এলো….”
বলতেই মাইকেল বাবু হাওয়াই উধাও হয়ে গেলেন।

রাস্তায় নেমে আসতেই দেখি এক খবরের কাগজ ওয়ালা সাইকেল নিয়ে যাচ্ছে আমি একটা খবরের কাগজ কিনলাম পাতা উল্টাতে আমার তো নিজের চোখকে বিশ্বাস হলো না।

খবরের কাগজে ছবিতে মাইকেল বাবু আওয়ার্ড নিচ্ছেন এবং নিচের হেডলাইন
“ব্রেনোহুমোটক্সিক হিউম্যান ক্লোনিং আবিষ্কার করে ভারতের পর এবার বিদেশে স্বীকৃতি পেলেন ডক্টর মাইকেল ডিসুজা “

Follow Writer – Suneet Adhikary