chicken health benefits: প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রয়েছে নানান উপকার যদি রান্নার পদ্ধতি হয় স্বাস্থকর।
মুরগির মাংস আমাদের খাদ্যাভ্যাসে আজকাল ডাল ভাতের মতোই সাধারণ। প্রোটিনের একটি আদর্শ উৎস এটি। যার খরচ তুলনামূলক কম, সহজলভ্য এবং নানান পদের রান্না হতে পারে এই মাংসের।
ঘরে বাইরে মিলিয়ে সিংহভাগ মানুষের সপ্তাহে একাধিকবার মুরগির মাংস খাওয়া পড়ে। তাই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, শরীরের ওপর এর প্রভাব কী?
এই বিষয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পুষ্টিবিদ লওরেন মানেকার’য়ের অভিমত। সেই প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল বিস্তারিত।
মানেকার বলেন, “একজন পুষ্টিবিদ হিসেবে আমি মুরগির মাংস অবশ্যই পছন্দ করি, তবে তা যদি কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে রান্না করা হয় তবেই। ‘বেইকড’, ‘গ্রিলড’ ও সৌতে করা মুরগির মাংস যেমন স্বাস্থ্যকর অপরদিকে বেশি তেলে লম্বা সময় ভাজা লবণ মেশানো মুরগির মাংস তেমনটাই অস্বাস্থ্যকর।”
“তাই বলে ‘ফ্রাইড চিকেন’ যে একেবারেই বাদ দিতে হবে তা বলবো না, তবে তা যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। মুরগির মাংস খাওয়ার জন্য প্রস্তুত করার প্রক্রিয়ায় যদি তাতে বাড়তি চর্বি, লবণ কিংবা চিনি যুক্ত না হয় তবে এই মাংসের আছে বহুমুখী স্বাস্থ্যগত উপকারিতা।”
শক্তিশালী হাড়: Chicken health benefits protein
হাড়ের সুস্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনায় প্রায় সবসময়ই মধ্যমনি হয়ে ওঠে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি। আড়াল হয়ে যায় প্রোটিনের গুরুত্ব। অথচ বাত রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে এবং শরীরের পুরো কঙ্কালকে স্বাস্থ্যবান রাখতে প্রোটিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। আর মুরগির মাংস যেহেতু প্রোটিনের আদর্শ উৎস, তাই খাদ্যাভ্যাসে এর মাত্রা বেশি হলে তা হাড়কে যোগাবে এই অতীব জরুরি পুষ্টি উপাদান।
পেট ভরা রাখে: Chicken health benefits
দুপুর কিংবা রাতের খাবারে মুরগির মাংস খেলে তা লম্বা সময় পেট ভরা রাখে। তাই খাওয়ার কিছুক্ষণ পর জিহ্বার ক্ষুধা থেকে রেহাই পাবেন অনেকাংশে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হজমতন্ত্র সুস্থ রাখতে রাতের খাবারের পর আর কিছু না খাওয়া বিশেষ জরুরি।
স্মৃতিশক্তির উন্নতি:
মুরগির মাংসে মেলে ‘কোলিন’, যা স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের অন্যান্য কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন হওয়ায় সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, যারা বেশি ‘কোলিন’ গ্রহণ করেন, স্মৃতিশক্তির পরীক্ষায় তারা অপেক্ষাকৃত ভালো করেন। এছাড়াও মুরগির মাংস থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন বি টুয়েলভ। আর এই উপাদানও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
মানসিক সুস্বাস্থ্য:
‘ট্রিপ্টোফান’ নামক এক ধরনের ‘অ্যামিনো অ্যাসিড’য়ের যোগান দেয় মুরগির মাংস। এর কাজ হল ‘সেরোটনিন’ হরমোন যা মানুষের মন ভালো করে সেটির মাত্রা বাড়ানো। ‘সেরোটনিন’য়ের মাত্রা চাহিদার তুলনায় কম থাকলে মানুষ হতাশায় ভোগে। তাই মুরগির মাংস এদিক দিয়ে মন মেজাজ ভালো রাখতেও সাহায্য করে।
অবসাদ কমায়: Chicken health benefits for stress
আয়রন’য়ের অভাবে যারা ‘অ্যানেমিয়া’ বা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন, তাদের একটি সাধারণ সমস্যা হল অবসাদগ্রস্ত থাকা। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরও ক্লান্তি এই রোগীদের পিছু ছাড়েনা। এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসে পর্যাপ্ত মুরগির মাংস আয়রন’য়ের যোগান বাড়াবে, যা পক্ষান্তরে বাড়াবে কর্মশক্তি।
হৃদযন্ত্রের বন্ধু:
মুরগির মাংস যদি অতিমাত্রায় তেলে ভেজে না খান কিংবা অন্য কোনো অস্বাস্থ্যকর রন্ধন পদ্ধতি ব্যবহার না করেন তবে তা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী একটি খাবার। পুষ্টিবিদের পরামর্শ মাফিক স্বাস্থ্যকর মাত্রায় মুরগির মাংস খাওয়া মাধ্যমে কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব।
প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়:
নারী পুরুষ যেই হোক, সন্তান নেওয়া পরিকল্পনা যারা করছেন, তাদের উচিত মুরগির মাংসের ওপর জোর দেওয়া। নারীর প্রজনন ক্ষমতা ও পুরুষের বীর্জের গুনগত মান বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা আছে এই মাংসের।
অন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:
পরিসংখ্যান বলে, যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত দেশেও ক্যান্সারে মৃত্যুর হারের হিসেবে তৃতীয় অবস্থানে আছে অন্ত্রের ক্যান্সার। এই রোগের পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকে। তবে সেই কারণগুলোকে সামান্য হলেও দমাতে পারবেন খাদ্যাভ্যাসে স্বাস্থ্যকর মাত্রায় মুরগির মাংস থাকলে।
আসল কথা হল পরিমাণের দিকে নজর দেওয়ার কথা না বললেই নয়। একটি খাবার যতই স্বাস্থ্যকর হোক, তা অতিরিক্ত খেলে হিতে বিপরীত হবেই। আবার মুরগির মাংস স্বাস্থ্যকর বলে তার ওপর বেশি জোর দেওয়ার কারণে খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য কমবে। ফলে অন্যান্য অনেক পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হবেন।
প্রোটিনের অন্যান্য উৎস যেমন- সামুদ্রিক মাছ, বীজ ও শুঁটি ধরনের খাবার ইত্যাদিও প্রোটিনের উল্লেখযোগ্য উৎস। আর প্রোটিনের পাশাপাশি এগুলোতে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে যা মুরগির মাংসে থাকে না।মুরগির মাংস খাওয়া খারাপ নয়। তবে শুধু তাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
আরও পড়ুন –
- চিকেনে বিপদ, শেষ হচ্ছে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
- তুলসী পাতার এই টোটকা মুক্তি দেবে অনেক সমস্যা থেকে
- রোজ ডিম খাচ্ছেন ? অজান্তেই ডেকে আনছেন শরীরে বিভিন্ন রোগ
- গরমাগরম মুরগি ভাপা, ভাত খাও একথালা