বাংলা গল্প “অমৃতার অমৃত”- কলমে অলিভিয়া দে মোদক

new bengali story Amritar Amrito writer Aliviya Dey Modak khobor dobor

New Bengali Story: অমৃতা আজ পাঁচদিন পরে পেটে একটা টান অনুভব করলো………. সাথে হালকা যন্ত্রনা। সবে হাসপাতাল থেকে ফিরেছে ও। পাঁচদিন ধরে একটা লড়াই লড়ছিল ঠিকই তবে ও জানতো না কার বিরুদ্ধে?……… শুধু এটুকু টের পেয়েছিলো.….হারলে মহাকাশের থেকেও শূন্য হয়ে যাবে ও। এই একার যুদ্ধে আসেপাশে, কাছেপিঠের মুখ গুলো এক একটা মুখোশ। জীবনের উঁচু নিচু তেও চিরকাল নিজের মাথা উঁচু করে বেঁচে এসেছে অমৃতা। কিন্তু এরকমভাবে পরাজয় শব্দটার শেষের দুই বর্ণ কে মরিয়া হয়ে আজ পর্যন্ত কখনো ছুঁতে চায়নি।

যখন জিজ্ঞাসার চিহ্নর মুখে নিজের বছর খানেকের শিশু দাঁড়িয়ে থাকে, তখন কোনো মা কে দাড়ি টেনে থামানো অসম্ভব। সেই কারণেই দিন রাত এক করে ফেলেছিলো ও এই পাঁচটা দিন। ঠিক করে ফেলেছিলো চোখের জল যদি ঠিকরে বেরোতেই হয় তবে সেটা হবে আনন্দশ্রু। অম্লান কে একেবারে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবার দিন, ওকে জড়িয়ে ধরে তবেই কাঁদবে। তাঁর আগে নয়। এই কদিনে ছোট ছোট কচি হাত গুলোর শিরা যখন সেলাইন চুষতো, তখন অমৃতার স্তন হ্যাপিতেশ করতো ওইকচি ঠোঁটটার জন্য। বিগত পাঁচ দিন নিস্পলক হয়ে চেয়ে চেয়েই কেটেছে সন্তানের দিকে।

সিঙ্গেল মায়েদের সন্তানকে একা বড়ো করতে গেলে নির্ভরযোগ্য অর্থের প্রয়োজন। আধ ঘন্টার দূরত্বে একটা স্কুলের শিক্ষিকা সে। সকাল দশটা চারটের মধ্যক্ষণটা অম্লানকে সেন্টার থেকে নেওয়া মাসির কাছে রেখে নিশ্চিন্তে না হলেও বাধ্য হয়ে রেখে যায়। সেদিন স্কুলে যখন ফোনটা এলো ঝুমার……….. দিদি তাড়াতাড়ি এসো টুকলুশ কিছু একটা গিলে ফেলেছে, গলায় আটকে আছে, খুব কষ্ট পাচ্ছে, তুমি ছুটে এসো। মোবাইলটা কানে ধরে একটা ট্যাক্সি নিয়ে ঘরের চৌকাঠ যখন ছুলো তখন ছেলে প্রায় অজ্ঞান। ধারালো কিছু তির্যক ভাবে ফুটে আছে গলায়।হাতপা ঠান্ডা বরফ, অমৃতা যখন বুকে জড়িয়ে কোলে তুললো, অতি কষ্টে মা বলে ডাকার চেষ্টা করে ও পারলো না, অমৃতার মনে হলো ওর হৃদপিণ্ডটা খুলে আসবে এবার। ওই ট্যাক্সি নিয়েই সোজা নার্সিংহোমে।

অপরাশন করা ছাড়া কোনো উপায় নেই, বন্ডের কাগজটায় নিজের নাম লিখতে গিয়ে ভীষণ একটা চিৎকার বেরিয়ে এসেছিলো ওর মুখ দিয়ে, তারপর পুরো চুপ, ঠায় বোবা হয়েছিল অপরাশন চলাকালীন ঘন্টা দুই। ডাক্তার বেরিয়ে কয়েক টুকরো কাঁচ এনে দেখিয়ে ছিল। (New Bengali Story) চরম কষ্টে চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়েছিল অমৃতা। তবে এই পাঁচদিনের স্মৃতিকে ও আর মনে করতে চায় না। কটাদিন হসপিটালের বেড, ডাক্তার এর চেম্বার,আর বাথরুম ছাড়া আর এক পা কোথাও নড়েনি ও। আজ ওর টুকলুশের ডিসচার্জ। ছুটি হতে হতে প্রায় বিকাল হয়ে যাবে, এই ফাঁকে ঘরে গিয়ে একটা জামা প্যান্টের সেট নিয়ে আসতে হবে, যেটা পরে হসপিটালে এসেছিলো ওটা পড়াবে না।

বাড়ি এসে অনেকদিন পর স্নান করলো অমৃতা। পেটের ব্যথাটা জানান দিলো ক্ষিদে এখনো পায় ওর। হসপিটালে একা একজন মহিলা দেখে নার্স দিদিরা অনেক করেছে অমৃতার জন্য। জোর করে হলেও বিস্কুট,জল জোর করে চব্বিশ ঘন্টায় একবার অন্তত মুখে পুরে দিতো। দুবার কোনোদিনও সফল হয়নি নার্স দিদিরা। ক্ষিদেটা ওকে অসুস্থ বানানোর আগে ওকে কিছু খেতে হবে…… কারণ ও টুকলুশ এর মা। ছেলেকে নিয়ে বাড়িফিরে একপ্রস্থ নতুন দায়িত্ব আছে ওর কাঁধে। টুকলুশ বাড়ি ফিরে এখন শুধুই লিকুইড খাবে।

ফোনটা হাতে নিয়ে অনলাইন অ্যাপ খুলে শুধুই নিজের জন্য নয় গোটা কুড়ি প্যাকেট খাবার অর্ডার করলো অমৃতা। মিনিট দশেক হাঁটলে একটা ছোট মতো বস্তিতে অনেকগুলো বাচ্ছা আছে ওদের হাতে একটু খাবার তুলে দেবে টুকলুশের বাড়ি ফেরার আনন্দে। নিজে কিছু মুখে দেবার আগে ওর ছেলের মতোই কচি কাঁচা গুলোকে নিজের সামর্থ অনুযায়ী কিছু দিতে মন গেলো। যদিও এটা ও প্রায়ই করে থাকে, তবে বিনা উদ্যেশে,। আজ কারণতো অবশ্যই আছে।

বেলা একটা , খাবার অর্ডার করা হয়েছে অনেকক্ষণ, এদিকে হাসপাতাল পৌঁছতে হবে। ও অম্লানকে চোখের বাইরে এই পাঁচদিনে একবারও করেনি। নিজের জন্য খাবার হলে নয় বেরিয়ে পড়তো। কিন্তু বাচ্ছাগুলোর জন্য দুপুরের মিল। ওদের না দিয়ে বেরিয়ে যাবে….. অস্বস্তিতে হাতের নখ খেতে শুরু করেছে, ভাবছে একটা কমপ্লেইন না ঠুকলেই নয়। দেরি হয়, তা বলে একটা লিমিট তো থাকবে। আরো একবার ঘড়ির দিকে চোখ গেলো অমৃতার। না আর দেরি করা যাবে না মনে হচ্ছে। এমন সময় বেল বাজলো। কিছু বলতে যাবে তার আগে বছর পঁচিশের ছেলেটা বললো সরি ম্যাডাম। অনেকটা দেরি করে ফেললাম। (New Bengali Story) অমৃতা বুজলো চড়া রোদে নাজেহাল অবস্থা সবার। ওর বাইকে চোখ যেতে দেখলো ধুলো ভর্তি, ছেলেটার মুখটা বহুকাল বৃষ্টি না হওয়া পিচের রাস্তার মতো খটখটে হয়ে আছে।
“ভিতরে আসুন”।
আমায় বললেন?
আর কেউ তো সামনে নেই আমার! তাই না?
অমৃতা আবার আসতে বলে নিজে ঘরে ঢুকে এলো। এক গ্লাস গ্লুকোন্ডির জল আর এক প্যাকেট খাবার খুলে বললো…….
“সকাল থেকে আমাদের খাবার পৌঁছে দিলেই চলবে? নিজেকেও তো কিছু খেতে হবে…… তাইতো”?

রাজুর সাথে এরপর খেতে খেতে মিনিট দশেক কথা বলেছিলো অমৃতা। তারমধ্যেই জানিয়েছিল সেদিন কাঁচের ফুলদানিটা ভেঙে যায় টুকলুশের হাত লেগে। সেটা পরিষ্কার করার সময় ঝুমা খেয়াল করেনি কখন টুকলুশ দুটো কাঁচের টুকরো মুখে পুরে ফেলে। তারপর…………….. যুদ্ধ, যুদ্ধ আর যুদ্ধ।

ঝুমার ভরসা ত্যাগ করে ফেলেছে, তাই ছুটি ফুরালে কী করবে এটা নিয়ে চিন্তার ঝড় চলছে বুঁকের ভিতরে। রাজু কয়েক সেকেন্ড না ভেবে বলে,………
“দিদি টুকলুশের খাবার কে বানায়”?
“কেন আমি? অমৃতা উত্তর দেয়”।
“তাহলে এরকম অনেক টুকলুশ এর জন্য বানাতে পারবেন”?
“মানে”? অমৃতা ভুরু কুচকায়!
রাজু বলে “এরকম প্রচুর বাচ্ছা আছে, যাদের মা রা ওয়ার্কিং। সময় পায়না কিছু রান্না করে উঠতে। তাঁদের জন্য একটা ক্যাটারার খুলুন। বেশ স্বাস্থ সন্মোতো। এরকম দরকার আছে, প্রচুর চাহিদা। কিন্তু মার্কেট এ নেই বললেই চলে। প্রতিদিন খাবার সাপ্লাই দেবেন। দেখবেন বিজনেসটা দাঁড়িয়ে যাবে অল্প সময়ে, আর অনলাইন অ্যাপ এ রেজিস্টার করিয়ে রাখবেন। দেখবেন গড়গড় করে চলবে সবটা। আর সবচেয়ে বড়ো হলো টুকলুশ আপনার চোখের সামনে।

মাথায় কেমন একটা ঝাকুনি হলো অমৃতার। সামান্য কিছু খাবার দিলাম একটা ক্ষুধার্ত কে, রোদে হাফ জ্বলন্ত একটা অচেনা ছেলেকে। সে আমায় কিনা টুকলুশ কে কাছে পাওয়ার উপায় বাতলে দিলো!

আজ “অমৃতার অমৃত” থেকে শিশুদের খাবার যাওয়ার সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। সেদিনের দেবদুতের দেখানো সাহসেই চাকরিটা ছেড়ে ছিল অমৃতা। (New Bengali Story) দুজন সহকর্মী সহ রাজুকে নিয়ে ব্যবসা জোয়ার তুলেছে অমৃতার। অম্লান এখন পুরোটা সুস্থ। মা — মা বলে বাড়ি সরগরম করে রাখে। অমৃতার সত্যি আজ জয়ী।