পূর্বতন আমতা বিধান সভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক আফতাব উদ্দিন মন্ডল এর ৭ম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হল আমতা ১ পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয়ের বিপরীতে ভি আই পি মার্কেটে, প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল এর বাড়ির দোতলায়। প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল এর আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে স্মরণ সভার সূচনা হয়। উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন ডাঃ সুধীন পাত্র।
প্রাক্তন বিধায়ক তথা জননেতা প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল ১৯৪৫ সালের ১৮ জুলাই আমতা থানা তথা আমতা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির অধীন দেওড়া গ্ৰামের এক দরিদ্র পরিবারে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা আব্দুল মজিদ মন্ডল একজন মৌলবী ছিলেন। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় তিনি অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। শৈশবে পিতাকে হারানোর পর অত্যন্ত দারিদ্র্যর সাথে তাঁকে কঠিন লড়াই করতে হয়। আমতা কলেজ থেকে বি এ পাশ করার সময় থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
প্রথম জীবনে খড়দহ হাই স্কুলে শিক্ষকতার মাধ্যমেই তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি করার সুবাদে প্রীয়রঞ্জন দাসমুন্সী,অজিত পাঁজা, সিদ্ধার্থ শংকর রায় সহ রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী ও বিধায়কদের সুনজরে পড়েন।মাত্র কয়েক বছর যেতে না যেতেই ১৯৭২ সালে পূর্বতন আমতা বিধান সভা কেন্দ্রের কংগ্রেস দলের প্রার্থী হয়ে সি পি আই এম প্রার্থী নিতাই ভান্ডারীকে পরাজিত করে বিধায়ক হন। ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত দারিদ্র্যর সাথে কঠিন লড়াই করেছিলেন বলে, রাজনীতি করার সুবাদে জেলা তথা রাজ্যের বিভিন্ন মন্ত্রী ও বিধায়কদের সুনজরে থাকায় বিধায়ক হওয়ার আগে ও তিনি দলমত নির্বিশেষে অনেক দরিদ্র পরিবারের যুবক -যুবতীদের সরকারি ও বেসরকারি চাকরি করে দিয়েছিলেন।
বিধায়ক থাকাকালীন সময়ে সাদা কাগজে, সিগারেটের খোল ছিঁড়ে তার সাদা পিঠে চাকরির সুপারিশ পত্র লিখে দিয়ে,ল্যান্ডফোন থেকে ফোন করে অনেক যুবক- যুবতীর সরকারি -বেসরকারি চাকরি করে দিয়েছিলেন।১৯৭৭ সালে রাজ্যের শাসন ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট।১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল মাত্র পাঁচ বছর বিধায়ক থাকাকালীন সময়ে আমতার সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের কর্মযঞ্জে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
কৃষি ও সেচ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য দামোদর ও নিম্ন দামোদর নদ কাটাই,কেদুয়া খাল খনন, মাঠে মাঠে ডিপ টিউবওয়েল বসানো ও রিভার লিফর্ট স্থাপন উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব। প্রায় ২,৫০০ যুবক -যুবতীর সরকারি চাকরি,প্রায় ৩,০০০ যুবক -যুবতীর বে-সরকারি চাকরি তিনি করে দিয়েছিলেন। গ্ৰামীণ বৈদ্যুতিকরণ,রাস্তা নির্মাণ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি ও এই সময় পরিলক্ষিত হয়।দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের কাছেই তিনি অত্যন্ত আপনজন হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
সদাহাস্য মুখী তাঁর সুমধুর ব্যবহারে সকলকেই আকৃষ্ট করত। বিধায়ক হিসাবে বিধান সভায় তাঁর বক্তব্য তৎকালীন শাসকদলের মন্ত্রী, বিধায়ক সহ বিরোধী দলের নেতা -নেত্রীদের আকৃষ্ট করত। বিধান সভার অধ্যক্ষ ও তাঁর সুমধুর বক্তব্যে আকৃষ্ট হতেন।রাজ্যের বিভিন্ন জেলার শাসকদলের নেতা -নেত্রী, বিরোধী দলের নেতা – নেতৃ ও জনগণের কাছে সুমধুর বক্তা হিসাবে পরিচিত লাভ করেছিলেন।যা এখন ও পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মানুষ ও তাঁকে মনে রেখেছেন। আমৃত্যু তিনি কংগ্রেসের একজন বিশ্বস্ত সৈনিক ছিলেন।
উত্তর ভারতে এক তীর্থক্ষেত্রে ভ্রমণে ২০১৫ সালে নভেম্বরে তাঁর আকস্মিক মহাপ্রয়াণ ঘটে। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ আমতা শহরে জনপ্লাবণের এক বিরল দৃশ্য আজ ও আমতাবাসী মনে রেখেছে। আফতাব উদ্দিন মন্ডল স্মৃতি রক্ষা কমিটি সাত বছর ধরে নভেম্বর মাসে তাঁর স্মরণ সভার আয়োজন করে আসছে।
প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল এর ৭ ম বার্ষিক স্মরণ সভা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজী বলেন, ‘আমি প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডলের নির্দেশ ও পথ অনুসরণ করে কাজ করছি। আমি – উনি যে রুপে আমতাকে সাজাতে চেয়েছিলেন, আমার উন্নয়নে যা যা কাজ করতে চেয়েছিলেন ,আমি সেই রূপে আমতাকে সাজাতে নানান উন্নয়ন মূলক কাজ করে প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডলের স্বপ্নের আমতা গঠনে কাজ করছি।
আজকের এই স্মরণ সভায় প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল এর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন উপস্থিত অতিথি থেকে উপস্থিত প্রয়াত নেতার গুনমুগ্ধ ব্যক্তিবর্গ। প্রয়াত নেতার কর্মজীবন এর উপর আলোকপাত করেন রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার প্রাপ্ত শিক্ষক অরূন পাত্র, রণজিৎ সিনহা, তপন সাহা,বলাই মিত্র, আফতাব উদ্দিন মন্ডল স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি সফি মন্ডল সহ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
আফতাব উদ্দিন মন্ডল স্মৃতি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজীর কাছে ১/ আমতা কলাতলা থেকে আমতা সিনেমা তলা পর্যন্ত রাস্তাটি ” আফতাব উদ্দিন মন্ডল সরণী ” নামকরণ, ২ / আফতাব উদ্দিন মন্ডল এর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করার জন্য অনুরোধ করা হয়। আফতাব উদ্দিন মন্ডল স্মৃতি রক্ষা কমিটির এই অনুরোধের মান্যতা দিয়ে বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজী বলেন, ‘২০২৩ সালে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের শেষে প্রশাসক মন্ডলী গঠন হয়ে যাবার পর আমতা সি টি সি বাসস্ট্যান্ডের সন্নিকটে প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল এর আবক্ষ মূর্তি বসাবেন।
এই অনুষ্ঠানে প্রমাণ হল, মানুষ আজ মূল্যবোধ হারিয়েছে। উপকারী মানুষকে মনে রাখে না। বিপদের সময় যে পাশে দাঁড়িয়ে তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন, সেই মানুষকে মনে রাখে না। প্রয়াত আফতাব উদ্দিন মন্ডল রাজনৈতিক জীবনে এবং বিধায়ক থাকা কালীন প্রায় ২,৫০০ যুবক-যুবতীকে সরকারি চাকরি, প্রায় ৩,০০০ যুবক -যুবতীকে বেসরকারি চাকরি করে দিলে ও তাঁর ৭ম বার্ষিক স্মরণ সভা অনুষ্ঠানে তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তিন থেকে চার জন। সমগ্ৰ অনুষ্ঠানটি সুন্দর মনোগ্ৰাহীভাবে সঞ্চালনা করেন অশোক ধাড়া।
রিপোর্টার- অভিজিৎ হাজরা
আমতা, হাওড়া
আরও পড়ুন –
- বর্ষায় চুল পড়া বন্ধ করতে নিজের চুল কে চিনুন
- এই বিশেষ রেখাটি হাতে থাকলে নিয়ে আসে প্রচুর সম্পদ
- তুলসী পাতার এই টোটকা মুক্তি দেবে অনেক সমস্যা থেকে
- রোজ ডিম খাচ্ছেন ? অজান্তেই ডেকে আনছেন শরীরে বিভিন্ন রোগ
-
২৬ আগষ্ট রডা অস্ত্র লুন্ঠনের ১০৯ তম বর্ষপূর্তি পালনে প্রস্তুতি তুঙ্গে
- ভগবান শ্রী বিষ্ণু এক নারীর সতীত্ব নষ্ট করেছিলেন কেন জানেন ?
- ‘অন্য রকম কাহিনী’ – কলমে অলিভিয়া দে মোদক
-
স্তনের আকার বলে দেয় নারীর ব্যক্তিত্ব, বলছে সামুদ্রিক শাস্ত্র