মুগ্ধ করেছে মুন্সিয়ারি, যেন আরেক ‘কাশ্মির’

Munsiyari is a Little Kashmir at Uttarakhand

Munsiyari is a Little Kashmir: পাহাড়ের রানি কিংবা ছোট কাশ্মির—এই দুই নামেই মুন্সিয়ারিকে চেনেন অনেক পর্যটক। উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলার কুমায়ুন অঞ্চলে অবস্থিত এই শৈল শহর। সমুদ্রতল থেকে নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্রটির উচ্চতা ২,২০০ মিটার। মুন্সিয়ারি এক ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ। এখান থেকে চীন সীমান্ত খুব কাছেই। এই অঞ্চলের চারপাশে তুষার শুভ্র পাহাড়ের চূড়া, বিশেষত এখান থেকে পঞ্চচুল্লির দৃশ্য– সত্যিই বর্ণনাতীত।

হিল স্টেশন’ বলতে আমাদের চোখে যেমন সাহেবি কেতার শহর ভেসে ওঠে, মুন্সিয়ারি একেবারেই তা নয়। একে শহর না বলে গ্রামাঞ্চল বললেই বোধহয় ভালো। তিব্বত, নেপাল ও ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চল বলে বহুদিন পর্যন্ত এখানে সাধারণের আসা ছিল নিয়ন্ত্রিত। শহুরে ছোঁয়াও লাগেনি খুব একটা। প্রতিবছরের কিছু সময় খুবই সীমিত কিছু পর্যটক আসেন এখানে। মুন্সিয়ারিতে আছে অল্পসংখ্যক হোটেল ও রিসোর্ট। বাজার ঘিরে ফেলেনি বলেই যেন মুন্সিয়ারি আরো আকর্ষক।

মুন্সিয়ারির জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ হলো এখান থেকে শুরু হয়েছে নানা ট্রেকিং-এর পথ। মিলাম গ্লেসিয়ার, রালম গ্লেসিয়ার, নামিক গ্লেসিয়ারসহ আরো অনেক দুর্গম জায়গায় যেতে এখানে আসতে হয়। সময় ও প্রস্তুতি থাকলে, আর অবশ্যই শারীরিক সুস্থতা থাকলে এসব পথে যাওয়া যায়। আমাদের এ যাত্রায় সে সময় বা প্রস্তুতি কোনোটিই নেই। অগত্যা ঠিক হলো অল্প দূরত্বে ছোট ট্রেকিংই করা যাক। স্থানীয় এক গাইডেরও সন্ধান পেলাম; সে নিয়ে যাবে একদিন থামরিয়া কুণ্ড, আরেকদিন খালিয়া টপ।

হনুমান মন্দিরের পাশ দিয়ে পথ গিয়েছে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে থামরিয়া কুণ্ড। মুন্সিয়ারি থেকে দূরত্ব নয় কিলোমিটার। রাস্তা খুব কঠিন নয়, চড়াই-উতরাই মিশিয়ে পথ। গভীর জঙ্গল, নাম-না-জানা পাখির ডাক, মাঝেমাঝেই উঁকি মারছে পঞ্চচুল্লি, নন্দাদেবী। এ পথে চলাই আনন্দ, কোথাও পৌঁছাতে না পারলেও যেন ক্ষতি নেই। প্রায় ৩ কিলোমিটার গিয়ে চোখে পড়ল থামরিয়া কুণ্ড। দীঘির পানি বেশ পরিস্কার, চারপাশে সবুজ বনে ঘেরা। গাইডের মুখে গল্প শুনলাম এই কুণ্ডে পরীরা নাকি স্নান করতে আসে। এই জায়গা যে স্বর্গীয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

খালিয়া টপের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম পরদিন ভোরে। মুন্সিয়ারি থেকে সাত কিলোমিটার যেতে হবে গাড়িতে। এরপর প্রায় সাড়ে এগারো হাজার ফুট উঁচুতে খালিয়া টপে। পথ চেনার অসুবিধা নেই, পাথুরে পথ, ওক আর রডোড্রেনডন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। ক্রমাগত খাড়াই বেয়ে যেতে হবে ৬ কিলোমিটার। প্রায় ৪৫ ডিগ্রি খাড়া রাস্তা, একটু হাঁটলেই হাঁফ ধরে যায়। ধীরে ধীরে বিশ্রাম নিয়ে উঠতে হয় এই পথে।

তবে চারপাশে তাকালেই সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। গাছের ফাঁকে উঁকি মারছে পঞ্চচুল্লি, নন্দাদেবী, নন্দাকোট শৃঙ্গ – যেন হাত বাড়ালেই ধরা দেবে। চার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে কুমায়ুন মণ্ডল বিকাশের অতিথিশালা। পথশ্রমের পর বাংলোর চত্বরে বসে পঞ্চচুল্লিকে সামনে রেখে গরম গরম কফি, এখান থেকে উঠতে আর মন চায় না।

এখানে রাতে থাকা যায়, কিন্তু আমরা সে ব্যবস্থা করে আসিনি! ঠিক হল, ফেরার পথে মধ্যাহ্নভোজন সারা হবে এখানেই। আবার চড়াইয়ে পথে। আস্তে আস্তে বড় গাছ কমে আসছে, সাদা ঘাসফুল বাড়ছে। বেশ কিছুটা গিয়ে আমাদের গাইড আশ্বস্ত করলেন- অনেকটা পৌঁছে গেছি। Munsiyari is a Little Kashmir

একটা বাঁক ঘুরতেই চোখের সামনে স্বর্গরাজ্য! সবুজ বিস্তীর্ণ তৃণভূমি, চারপাশ খোলা, চারদিক ঘিরে যেন পাহারায় রয়েছে নন্দাকোট, পঞ্চচুল্লিসহ আরো কত শৃঙ্গ। পথের সমস্ত ক্লান্তি এক নিমেষে দূর হয়ে গেল, সবুজ গালিচায় নিজেদের শরীর ছেড়ে দিলাম। এখান থেকে সূর্যাস্তর দৃশ্য নাকি অপরূপ, কিন্তু আমাদের সূর্যাস্ত অবধি অপেক্ষা করার উপায় নেই, নামতে হবে আবার ছয় কিলোমিটার পথ! মনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম- যা দেখলাম তাই বা কম কী!

প্রয়োজনীয় তথ্য: Munsiyari is a Little Kashmir

উত্তরখণ্ডের কাঠগোদাম বা টনকপুর স্টেশন নেমে যেতে হবে মুন্সিয়ারি। কাঠগোদাম থেকে দূরত্ব ২৭৫ কিলোমিটার। পন্থনগরে বিমানে এসেও যাওয়া যায়, এখান থেকে মুন্সিয়ারির দূরত্ব ২৪৯ কিলোমিটার। মুন্সিয়ারি পৌঁছানোর ৩৫ কিলোমিটার আগে পাবেন বিরথি জলপ্রপাত। ১২৬ মিটার উপর থেকে পড়ছে জলের ধারা, সবুজের মাঝে সে এক অপূর্ব দৃশ্য।
মুন্সিয়ারি ঘোরার সবচেয়ে ভালো সময় এপ্রিল থেকে জুন, আর সেপ্টেম্বার-নভেম্বর মাস। তবে ফুলে ভরা পাহাড় দেখতে হলে এপ্রিলই আদর্শ সময়। আর খালিয়া টপে এক রাত কাটাতে ভুলবেন না।

follow khobor dobor on google news
Follow Us on Google News

আরও পড়ুন –